২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

থানা হেফাজতে আবারো মৃত্যু

-

থানা হেফাজতে মৃত্যু দেশে প্রায় নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে বহু মানুষ পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হেফাজতে নিহত হয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবাদ হয়েছে, থানা ঘেরাও হয়েছে। কখনো থানার দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের কাউকে সাময়িক বরখাস্তসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে; কিন্তু আইন অনুযায়ী বিচার হয়েছে এমন নজির খুব কম।
এর ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় আবারো এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দাবি করেছে, সুমন শেখ নামের যুবক আত্মহত্যা করেছে এবং সিসিটিভির ফুটেজে তা দেখা গেছে। সুমনের বিরুদ্ধে তার প্রতিষ্ঠানের অর্থ তছরুপের অভিযোগ আছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। কিন্তু সুমনের পরিবার দাবি করেছে, তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। তারা কিছু যৌক্তিক প্রশ্নও তুলেছে। যেমন একজন স্বজন বলেছেন, শুক্রবার রাতে ঘটনা ঘটলেও স্বজনদের শনিবার বিকেলে খবর দেয়া হয় যে সুমন আত্মহত্যা করেছে। তার লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কেন পুলিশ আগে জানাল না। থানার ভেতরে একজন আসামি আত্মহত্যা করলেন পুলিশ তখন কী করছিল? পুলিশ কেন তাকে আত্মহত্যা থেকে বাঁচাতে পারল না। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হোক।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে এটিও স্পষ্ট যে, যে লকআপে সুমনকে আটক রাখা হয় সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরার সার্বক্ষণিক মনিটর থানার ডিউটি অফিসারের ডেস্কে আছে। তাহলে আত্মহত্যার সময় ডিউটি অফিসার কেন তাকে বাধা দিলেন না?
প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটিরই স্বীকৃতি এসেছে হাতিরঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হেমায়েত হোসেন ও কনস্টেবল জাকারিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করার ঘটনায়। এ বিষয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
বাংলাদেশে পুলিশি নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু রোধের আইন হয়েছে ২০১৪ সালে; কিন্তু তার পরও এ ধরনের মৃত্যু রোধ করা গেছে এমন নয়। কারণ তদন্তের গাফিলতি হোক বা অন্য কোনো কারণে হোক অপরাধীদের সচরাচর চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না। ওই আইনের আওতায় এ পর্যন্ত মাত্র একটি মামলায় অপরাধী পুলিশের বিচার ও দণ্ড হয়েছে ২০২০ সালে। ওই ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৪ সালে খোদ রাজধানীতে। পল্লবী থানায় পুলিশ জনি নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করে। হত্যার দায়ে পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিচার হয়। এর মধ্যে তিনজনের যাবজ্জীবন এবং দু’জনের সাত বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। আসামিদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা এবং দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার দণ্ডও দেন আদালত। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে সারা দেশে যেখানে বহু হত্যার ঘটনা ঘটে সেখানে মাত্র একটি ঘটনায় অপরাধীর বিচার বা দণ্ড হওয়া আসলে আইনের প্রায়োগিক দুর্বলতা স্পষ্ট করে তোলে। হেফাজতে মৃত্যু বন্ধ না হওয়ার এটি অন্যতম কারণ। এমনকি হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে প্রায়ই কোনো মামলা হয় না। আমরা আশা করব, সর্বশেষ সুমন শেখের মৃত্যুর ঘটনার যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
কোনো মানুষকে বিনা বিচারে মেরে ফেলার অধিকার কারো নেই। এমনকি সে অপরাধী হলেও। আবার আইনের ঊর্ধ্বেও কেউ নয়। তা সে পুলিশই হোক বা অন্য কোনো বাহিনীর সদস্য। আইন ও বিচারকে তার নিজের পথে চলতে দিতে হবে। তাহলে সব মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement