২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ছাত্রলীগের সীমালঙ্ঘন

দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই

-

ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ প্রতিনিয়ত সারা দেশে বেআইনি তৎপরতা চালাচ্ছে। বিপরীতে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এতে করে দিন দিন সীমালঙ্ঘনের মাত্রা বাড়ছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নানা কীর্তি সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আসছে। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কয়েকজন শিক্ষক আন্দোলনে নেমেছেন। তাতে লাগাম টানা যায়নি। সর্বশেষ এক ছাত্রকে নারকীয়ভাবে নির্যাতন করে অর্থকড়ি ছিনিয়ে নিয়েছে। এ ঘটনা ফাঁস করলে বুয়েটে একই ছাত্রসংগঠনের নির্যাতনে খুন হওয়া আবরারের পরিণতি হবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে। গত কয়েক দিনে ছাত্রসংগঠনটি আরো কয়েকটি নিন্দনীয় ঘটনার জন্ম দিলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছেন মতিহার হল ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা। ১৫৯ নম্বর কক্ষের সামছুল হক নামের এক ছাত্রের কাছে চাঁদা দাবি করেন তিনি। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় একটি কক্ষে ভাস্করসহ কয়েকজন মিলে রড-স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক পেটান। গলায় ছুরি ধরে ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন। আরো ছয় হাজার টাকা দাবি করেন। এ ঘটনা ফাঁস না করতে ওই হিমশীতল হুমকি দেয়া হয়। সামছুল নিজে আয় করে নিজের পড়ালেখার খরচ বহন করেন শুধু তা-ই নয়; পরিবার চালাতেও সহায়তা করেন। তার কয়েক দিন আগে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতিসহ কয়েকজন এক কলেজছাত্রীর বাবাকে পেটান। মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করলে বাবাকে পেটানো হয়। এ ঘটনায় সংগঠনটির আট সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শোক দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে সড়কে টোল আদায়কারীদের পিটিয়েছে কুষ্টিয়ার ছাত্রলীগ।
ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতির একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। তাতে হলের এক ছাত্রীকে শাসিয়ে তিনি বলেন, ‘এক পায়ে পাড়া দিমু, আরেক পা টাইনা ধইরা ছিঁড়া ফেলমু’। ওই ফোনালাপে আরো বোঝা যায়, আসন বণ্টনসহ অন্যান্য কাজে কলেজ প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অধ্যক্ষ নয়; বরং ছাত্রলীগের ইশারায় সব হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা গেল আবাসিক এক ছাত্রকে ছাত্রলীগ ধরে নিয়ে হল প্রশাসনের কাছে তুলে দেয়। প্রশাসন তাদের কথামতো ছাত্রটিকে পুলিশের হেফাজতে দেয়। যে কাউকে দেশবিরোধী, জঙ্গি তকমা দিয়ে মারধর করে পুলিশে তুলে দিচ্ছে ছাত্রলীগ। এর বিরুদ্ধে নিরীহ ছাত্ররা প্রতিকার পাচ্ছেন না। অবশ্য ঢাবির শিক্ষার্থীকে রক্ষায় ছাত্রসমাজ এগিয়ে এলে তিনি মুক্তি পান। তবে ওই ছাত্রের পক্ষ নিয়ে প্রতিবাদ করায় ছাত্রলীগ কয়েকজনকে ক্যাম্পাসে পিটিয়েছে।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সারা দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে-বাইরে ছাত্রলীগ সন্ত্রাস চাঁদাবাজি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। ছাত্রসংগঠনটি নিজের সঙ্ঘ শক্তিকে অর্থকড়ি উপার্জন ও প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তারে কাজে লাগাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না; অথবা তাদের কাছে অসহায়। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ছাত্রলীগ নেতাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে এর প্রমাণ। আবার সরকারি প্রশাসন ছাত্রলীগকে ক্ষমতাসীন দলের মতো ছাড় দিচ্ছে। অর্থাৎ তারা যত অপরাধ করুন, ব্যবস্থা নেয় না।
একটি ছাত্রসংগঠনের এই অধঃপতন এক দিনে হয়নি। বর্তমান সরকার টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। এ সময় ছাত্র সংগঠনটির সদস্যরা বড় বড় অপরাধ সংঘটিত করেছে। সেগুলোর হাতেগোনা কয়েকটির বিচার হয়েছে। অব্যাহতভাবে ছাড় পেয়ে তারা নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে ভাবছে। আবার যেগুলোর নামমাত্র বিচার হয়েছে; তাতেও অপরাধীদের অনেকে পার পেয়ে গেছে। কাউকে লঘু শাস্তি দেয়া হয়েছে। কাউকে বিশেষ কোটায় মাফ করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এতে কারো লাভ হয়নি। তবে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে এ উপলব্ধি এখনো জাগেনি। আমরা আশা করব, এ ব্যাপারে সরকার নীতি পরিবর্তন করবে। অন্যায়কারীদের দলীয় সদস্য হিসেবে না দেখে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করে বিচারের নীতি নিতে হবে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement