২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
তৈরী পোশাক রফতানি বৃদ্ধি

স্বয়ংসম্পূর্ণতা জরুরি

-

তৈরী পোশাক খাতে রফতানির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম মাসে প্রধান রফতানি বাজারে যেমন রফতানি বেড়েছে তেমনি অপ্রচলিত বাজারেও শুভসূচনা ঘটেছে। গত জুলাই মাসটি ছিল নতুন (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম মাস। এ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরী পোশাক রফতানি বেড়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারেও পোশাক রফতানি ১৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের রফতানি বাজারও সম্প্রসারিত হচ্ছে। অপ্রচলিত বাজারেও পোশাক রফতানি এক বছরে ২২ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়েছে।
দীর্ঘ সময় ধরে বৈশ্বিক মহামারীর ধকল ও সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতি যখন কিছুটা চাপের মুখে সে সময় রফতানি চাঙ্গা হওয়ার এ খবর নিঃসন্দেহে আশা জাগানোর মতো। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে আরো জানানো হয়েছে, আমাদের প্রধান অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে রয়েছে- জাপান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া। এসব দেশে রফতানি যথাক্রমে ৪ দশমিক ২৬ শতাংশ, ৭১ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ১৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ ও ২২ দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়েছে।
আমাদের তৈরী পোশাক শিল্প দেশের বৃহত্তম রফতানি খাত। চীনের পর বাংলাদেশই এ খাতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এ অবস্থান ধরে রাখার ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জ এখনো আছে। একটি হলো বৈশ্বিক পরিস্থিতির ধকল সামলানোর চ্যালেঞ্জ, আরেকটি হলো নিজস্ব প্রস্তুতির দিক। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে উন্নত দেশগুলোসহ বিশ্বের সব দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। মানুষ নিত্যপণ্যের বাইরে কেনাকাটা করছে কম। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও পোশাক বিক্রির পরিমাণ কমে গেছে। এর সাথে আছে বিশ্বব্যাপী মন্দার আশঙ্কা। এ সব দিক বিবেচনা করেই পোশাক খাতে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার কৌশল গ্রহণের প্রয়োজন আছে।
এর বাইরে আছে পোশাক খাতের নিজস্ব প্রস্তুতির বিষয়। বাংলাদেশের পোশাক খাতের বয়স দেখতে দেখতে চার দশক পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এত দিনেও ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পের প্রত্যাশিত উন্নতি ঘটানো যায়নি। এখনো আমদানির ওপর নির্ভরশীল আমাদের উদ্যোক্তারা। রানা প্লাজা ধসের পর কারখানাগুলোতে কর্মপরিবেশ কিছুটা উন্নত হয়েছে বটে, কিন্তু তা সর্বক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করে না। শ্রম আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত নয় অনেক ক্ষেত্রে। শ্রমিকদের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা নি¤œস্তরে রয়ে গেছে। একটি কারখানার উৎপাদনশীলতা তুরস্কে যেখানে ৭০ শতাংশ সেখানে বাংলাদেশে প্রায় অর্ধেক, মাত্র ৪৫ শতাংশ। যা আমাদের সবচেয়ে কাছের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামেও ৫৫ শতাংশ। শুধু শ্রমিকের দক্ষতার অভাব ও উৎপাদনশীলতা কম হওয়াই সমস্যা নয়। আছে আরো অনেক সমস্যা। জ্বালানির দাম অযৌক্তিকভাবে বিপুল পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়াও বড় সঙ্কটের কারণ। এমনিতে গত পাঁচ বছরে গার্মেন্ট শিল্পে উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৪০-৪৫ শতাংশ। জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের মতো অপরিহার্য অবকাঠামোগত সুবিধার ঘাটতি উৎপাদন ব্যয় আরো বাড়িয়ে দেবে। এর মধ্যে বেড়েছে পরিবহন ব্যয়ও। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে গত দেড় বছরে সুতার দাম বেড়েছে ৬২ শতাংশ, পরিবহন ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৫০০ শতাংশ, রঙ, রাসায়নিক খরচ বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ।
এত সব বিরূপতা মোকাবেলা করে এ শিল্প বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় কতটা টেকসই হতে পারবে সেটিও বড় প্রশ্ন। তার পরও যে গার্মেন্ট শিল্প রফতানিতে সাফল্যের দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করছে তা আশ্বস্ত হওয়ার মতো। এখন সবচেয়ে বেশি যেটি দরকার তা হলো, এ খাতের সহায়ক শিল্প যাকে বলা হয় ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প- সেটিতে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া। এ ক্ষেত্রেও সরকারিভাবে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হলে উদ্যোক্তারা নিশ্চয় এগিয়ে আসবেন। বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে কালবিলম্ব না করে এটি করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement