২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জন্মনিবন্ধনের নিয়ম শিথিল

লক্ষ্য হোক জনভোগান্তি লাঘব

-

সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষাসহ নানা কাজে জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করায় সন্তানের জন্মসনদ সংগ্রহে তৎপর হয়ে ওঠেন প্রতিটি শিশুর বাবা-মা। বিশেষ করে ২০২১ সালের শেষ দিক থেকে এ তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। কিন্তু নানা কাগজপত্রের মারপ্যাঁচে নিজের ও সন্তানের জন্মনিবন্ধনে ভোগান্তি পোহাতে হয় সর্বসাধারণকে।
লক্ষণীয়, সন্তানের জন্মসনদ সংগ্রহ করতে গিয়ে চলতি বছর বিপুলসংখ্যক মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া বহু জন্মসনদে নামের বানানসহ নানা অসঙ্গতি দেখা যায়। নিয়ম হলো- জন্মনিবন্ধনের আবেদন করলে স্থানীয় পর্যায়ে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করাতে হয়। কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ের সময় সংশ্লিষ্ট কর্মীরা জন্মসনদ সংগ্রহকারীদের সহযোগিতা করেন না বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। নিবন্ধন কার্যালয় থেকে তথ্য দিয়ে সহায়তা না করায় নানা বিড়ম্বনার মুখোমুখি পড়তে হচ্ছে অনেককে।
সন্তানের জন্মসনদ সংগ্রহে বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করায় দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। কারণ, নিকট অতীতেও আমাদের দেশে জন্মসনদের তেমন প্রয়োজন কিংবা উপযোগিতা ছিল না। একই অবস্থা দেখা যায় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নের অব্যবহিত পরেও। পরবর্তীতে সবাই জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তা সংগ্রহ করতে শুরু করেন। এখন দেশে সবার অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক শতভাগ নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া বর্তমানে কোনো নাগরিক পরিষেবা পাওয়া যায় না বিধায় এই কার্যক্রমে সফলতা এসেছে। এখন সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি কাজে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। ঠিক তেমনিভাবে লেখাপড়াসহ শিশুদের পরিষেবা পেতে জন্মনিবন্ধন অপরিহার্য করা হয়েছে। ফলে প্রত্যেক বাবা-মা সন্তানের জন্মনিবন্ধন করাতে তৎপর এখন। কিন্তু গোলবাধে বাবা-মায়ের জন্মসনদ আবশ্যক করায়। বেশির ভাগ বাবা-মায়ের জন্মসনদ না থাকায় বিভিন্ন মহল থেকে দাবি ওঠে, সন্তানের জন্মনিবন্ধন করাতে বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রই যথেষ্ট হওয়া উচিত। কিন্তু এতদিন সরকার বিষয়টি আমলে নেয়নি। অবশেষে জন্মনিবন্ধনের নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। বাবা-মায়ের জন্মসনদ এখন আর আবশ্যক নয়।
গত ২৭ জুলাই থেকে ‘রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন’ জন্মনিবন্ধনের নতুন নিয়ম করেছে- সন্তানের জন্মনিবন্ধন করতে হলে মা-বাবার জন্মসনদ লাগবে না। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নিয়মে পরিবর্তন এনে বলা হয়েছিল, ২০০১ সালের পর জন্ম নেয়া ব্যক্তিদের জন্মনিবন্ধন করতে হলে তার মা-বাবার জন্মনিবন্ধন সনদ অবশ্যই প্রয়োজন হবে।
শিশুর জন্মনিবন্ধনের আবেদনের নিয়ম শিথিল হলেও বিষয়টি নিয়ে সরকারিভাবে প্রচার নেই। ফলে অনেকে নতুন নিয়ম সম্পর্কে এখনো অবহিত নন। অনলাইনে নিবন্ধনের আবেদন করতে গিয়ে কী পরিবর্তন এসেছে তা বুঝতে পারছেন না অনেকে। কারণ, এখনো ফরমে মা-বাবার জন্মনিবন্ধন নম্বরের ঘর রয়ে গেছে। তবে মা-বাবার জন্মনিবন্ধন নম্বর ছাড়া কোনো আবেদন এলে সেগুলো গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। লোকজনকে নতুন নিয়মের ব্যাপারে সংশ্লিøষ্টদের জানাতে বলা হয়েছে।
এ কথা ঠিক যে, সদ্য বাতিল নিয়মে মা-বাবার নিবন্ধন নম্বরের সাথে শিশুর পরিচিতি তৈরি ও একক পরিচয়পত্র (ইউনিক আইডি) তৈরির প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে সুফল বয়ে আনত। তা সত্ত্বেও এ কথা বলা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্রের বিষয়টি যদি শতভাগ নির্ভুল করা যায়, তাতে শিশুর ইউনিক আইডি করার বিষয়ে খুব জটিলতা পোহাতে হবে না।
শিশুর জন্মনিবন্ধন করাতে জনসাধারণ নানা ভোগান্তির কথা বলছিলেন, সে কারণে এর নিয়ম শিথিল করা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক পদক্ষেপ। জন্মনিবন্ধন করতে হরেক রকমের কাগজপত্র জোগাড় করতে গিয়ে যে ভোগান্তি পোহাতে হতো তা থেকে তারা কিছুটা নিষ্কৃতি পাবেন। তবে এই শিথিলের সাথে সাথে জন্মনিবন্ধনকর্মীদের লক্ষ্য হতে হবে জনভোগান্তি লাঘব।


আরো সংবাদ



premium cement