২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
খাল খননে অনিয়ম ব্যাপক

১০ কোটি টাকা গচ্চা গেল কেন?

-

সাতক্ষীরা থেকে নয়া দিগন্তের নিজস্ব প্রতিনিধি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, সাতক্ষীরা জেলা শহরের বুক চিরে প্রবাহিত, প্রাণসায়র খালটি সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি এলাকায় পানি নিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় করে মাত্র দুুই বছর আগে খালটি পুনরায় খোঁড়া হয়েছে। বর্তমানে এই খালে ‘সবুজের সমারোহ’। অর্থাৎ বুক ভরে গেছে পানায়। এখন বেশি বৃষ্টি হলে পানির নিষ্কাশন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন জেলাবাসী।
সামান্য বর্ষণেই এখানে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। প্রধানত বর্ষায় শহরের দু-তৃতীয়াংশ মাসের পর মাস হয় এর শিকার। পৌর এলাকার বিরাট অংশে তখন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে থাকে। ফলে পানি উঠে যায় ঘরবাড়িতে। সেখানকার লোকজনকে তাই চরম দুর্গতি ভোগ করতে হয়।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) অধীনে প্রাণসায়র খালটির খনন কাজ হয়েছে। ১২ কোটি টাকা খরচ করে ১৪ কিলোমিটার খননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ প্রথমাবধি। মূলত কাদাপানি শুকানো ছাড়াই খনন করা এ ক্ষেত্রে বড় অভিযোগ। জানা গেছে, ১৫৭ বছর আগে ১৮১৫ সালে স্থানীয় জমিদার প্রাণনাথ রায় শিক্ষার প্রসারে পিএন স্কুল স্থাপন এবং বাণিজ্যের প্রসারে প্রাণসায়র খাল খোঁড়ান। সদর উপজেলার খেজুরডাঙ্গিতে বেতনা নদী থেকে জেলা সদর হয়ে এল্লারচর মারিচ্চাপ নদী নাগাদ অন্তত ১৪ কিলোমিটার লম্বা এই খাল। তখন খাল ছিল ২০০ ফুট চওড়া। বড় বড় বাণিজ্যিক নৌকার ভিড় ছিল এখানে। এতে সাতক্ষীরা শহরও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। অবশ্য ১৯৬৫ সালের শুরুতে এলাকার জনমত উপেক্ষা করে বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে পাউবো প্রাণসায়র খালের দু’মাথায় স্লুইস গেট দেয়। ফলে স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটা বন্ধ হয়ে এটা বদ্ধ খালে পরিণত হয়।
২০১২ সালে প্রাণসায়র খাল নামমাত্র সংস্কার করে খনন প্রকল্পের বেশির ভাগ অর্থ লুটে নেয়ার অভিযোগ ওঠে। খননের নামে দু’পাশে কয়েক শ’ গাছ কাটা হয়েছিল। ফলে দুর্ভোগ বেড়ে যায় এলাকার বাসিন্দাদের। শীতকালে জলাবদ্ধতার কারণ ঘটে। পরে ২০১৮-১৯ সালে প্রাণসায়র খাল খননের কাজ চলে।
স্থানীয় নাগরিক কমিটির বক্তব্য, সর্বাগ্রে চাই এ বিষয়ে জনগণের সচেতনতা। খননের পাশাপাশি অবৈধ সব স্থাপনা উচ্ছেদ করাও জরুরি। তার জন্য দাবি করা হলেও এটা করা হয়নি। তাই প্রাণসায়রের আজকের এমন করুণ দশা। সাতক্ষীরা শহরের বিরাট এলাকায় খালটি ভরে গেছে কচুরিপানায়। ফলে ভারী বর্ষণে এখানে পানি সরবে না। তাই সৃষ্টি হবে জলাবদ্ধতা। একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির মতে, প্রাণসায়র খাল ভরাট ও দখলের পর আবার খনন করা হয়েছে। তবে এর ফলে উদ্দেশ্য পূরণের বদলে কেবল অর্থের অপচয়ই হলো। পাউবোর সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী জানিয়েছেন, ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ খালের খননকর্মে প্রাক্কলিত ব্যয় ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। কাজ হওয়ার কথা এর নকশা মোতাবেক। তাই খালে উপরিভাগের প্রশস্ততা হতে হবে ৭৫-৮০ ফুট। গভীরতা ৬-৮ ফুট। তলায় প্রস্থ ২৫ ফুট হওয়ার কথা। কিন্তু উপরি ভাগে খালের কোনো স্থানে ৫৫ ফুটের অধিক চওড়া হয়নি। খোঁড়া হয়নি ৩-৪ ফুটের বেশি। তলদেশের প্রস্থ ১৫-১৮ ফুটের অধিক হয়নি। খালটির পানি রেখে দিয়েই কাজ হয়েছে। কার্যাদেশ ২০১৯ সালের পয়লা আগস্টে দেয়া হয়েছে। পাউবো সূত্র মতে, ‘নানান জটিলতা’য় কাজ এক বছরে শেষ হয়নি। তাই আরো ১০ মাস মেয়াদ বাড়ানো হয়। মানুষের মামলার ফলে এবং এস্কেভেটরের জন্য স্থান করে নিতে দেরি হওয়ায় বিলম্ব ঘটেছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। সাতক্ষীরা শহরাংশের নকশা মানা হয়নি বলে পাউবো স্বীকার করেছে। ঠিকভাবে কাজ না হলে ‘বিল দেয়া হবে না’ বলে জানা গেছে। তবে এ সংক্রান্ত শেষ খবর পাওয়া যায়নি।
সাতক্ষীরাসহ দেশের সর্বত্র অনিয়ম ও দুর্নীতি রুখতে হবে। না হয়, জনগণের অর্থের অপচয় হবে; কিন্তু তারা এর সুফল পাবে না।


আরো সংবাদ



premium cement