২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি

শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার শঙ্কা

-

দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখন যেকোনো সময়ের তুলনায় আকাশছোঁয়া। শুধু নিত্যপণ্য নয়, সব জিনিসের দামই ঊর্ধ্বমুখী। এসব কিছুর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিক্ষা উপকরণের দাম।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজধানীর বাজারগুলোতে বিভিন্ন ধরনের তৈরি খাতার দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। সেই সাথে বেড়েছে চিকিৎসাবিদ্যা, প্রকৌশল শিক্ষা ও আইনের বইয়ের দাম। বিদেশী লেখকের মূল বই বাজারে পাওয়া না যাওয়ায় ফটোকপি করাতে হয়। বই ফটোকপি করাতে দাম বেড়েছে গড়ে ৩০-৫০ শতাংশ। অর্থাৎ কাগজ, খাতা, পেন্সিল, ব্যবহারিক খাতা, মার্কার, স্কুল ফাইল, অফিস ফাইল, শিশুদের লেখার সেট, ক্যালকুলেটর, সাদা বোর্ড, জ্যামিতি বক্স, টালি খাতা, কলম বক্স, স্কেল, পরীক্ষায় ব্যবহৃত ক্লিপবোর্ড, কালিসহ সব কিছুর দাম বেড়েছে। এতে বাড়তি চাপে পড়েছেন বেশির ভাগ অভিভাবক। এতে ওই সব পরিবারের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। বাস্তবে অনেক পরিবারে একাধিক শিক্ষার্থী থাকায় তাদের অবস্থা আরো শোচনীয়। শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিতে একটি পরিবারে যদি দুই বা তিন সন্তান শিক্ষার্থী থাকে তাহলে তাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় দেশে সব স্তরের শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারীর মধ্যে গত বছর দেশের অর্ধেকের বেশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রায় চার লাখ ৮১ হাজার শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে ৪৭ হাজারের বেশি ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। আর শিশুশ্রমে যুক্ত হয়েছে প্রায় ৭৮ হাজার শিক্ষার্থী। বাকিদের অনুপস্থিতির সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি।
এর আগে বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ২০২১ সালের তথ্য সংগ্রহ করেছিল। তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের মাধ্যমিক স্তরে মোট শিক্ষার্থী এক কোটি এক লাখ ৯০ হাজার ২২ জন। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল প্রায় এক কোটি দুই লাখ ৫২ হাজার। অর্থাৎ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর শিক্ষার্থী কমেছে প্রায় ৬২ হাজার। ফলে বর্তমানে শিক্ষা উপকরণের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে আগুন লাগায় সাধারণ মানুষ টিকে থাকতে দৈনন্দিন বাজার খরচে অনিচ্ছা সত্যেও ব্যবহার এবং খরচ কিছুটা কমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু শিক্ষা উপকরেণর দাম বৃদ্ধি পেলেও এ ক্ষেত্রে খরচ কমানোর কোনো সুযোগ নেই। কোনো অভিভাবকই চান না কৃচ্ছ্রতার কারণে সন্তানের শিক্ষাজীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়–ক।
সাধারণ একটি হিসাবে দেখা যায়, স্কুলের বেতন, টিউশন ফি, কোচিং বা প্রাইভেট টিউটরের বেতন দেয়ার পর একটি বড় অঙ্কের টাকা প্রতি মাসে প্রত্যেক পরিবারকেই সন্তানদের শিক্ষা উপকরণে ব্যয় করতে হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যে হারে এ ব্যয় বাড়ছে তাতে অনেক পরিবারের সেই ব্যয় বহনের সামর্থ্য নেই। বাড়তি ব্যয়ভার বহনে অক্ষম কোনো পরিবারে একাধিক সন্তান শিক্ষার্থী থাকলে তাদের পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
করোনাকালে দেশে অনেক ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাজীবন অভাবের তাড়নায় ঝরে পড়েছে। এখন শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়ে আরেক দফা শিক্ষার্থী ঝরে পড়লে তা দেশের সমূহ ক্ষতি বয়ে আনবে। সরকারের উচিত শিক্ষা উপকরণের বাজার যাতে অস্বাভাবিক হয়ে না পড়ে সে বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে নজরদারি করা।


আরো সংবাদ



premium cement