২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আবাদ নিয়ে উদ্বিগ্ন লাখ লাখ কৃষক

ডিজেলের দাম না বাড়ালেই কি হতো না?

-

নয়া দিগন্তের যশোর অফিস এক প্রতিবেদনে জানায়, হঠাৎ ডিজেল বা জ্বালানির দাম বাড়ায় শুধু যশোরেরই অন্তত পাঁচ লাখ কৃষক অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। তারা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। এখন কেমন করে ক্ষেতে ফসলের চাষাবাদ করবেন, তা নিয়ে যত দুশ্চিন্তা এ কারণে। বিশেষত ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি আমন ধান এবং আসন্ন শীত মৌসুমের সবজি আবাদ হুমকিগ্রস্ত হতে পারে বলে তাদের শঙ্কা।
জানা গেছে, সরকারের কৃষি অফিসের তথ্যানুসারে, যশোর জেলায় ৭০ হাজারের মতো অগভীর বা শ্যালো মেশিন রয়েছে সেচের কাজের জন্য। এর মাত্র ১০৫টি ডিপ টিউবওয়েল বা গভীর নলকূপ এবং বাদবাকি সব অগভীর বা শ্যালো মেশিন। ডিজেল ছাড়াও বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত হচ্ছে ১০ হাজারের অধিক নলকূপ। কেবল যশোর সদর উপজেলাতেই ১০৯৭টি শ্যালো মেশিন আছে ডিজেল জ্বালানিতে পরিচালিত। এসব মেশিন দিয়ে গড়ে ১৫ বিঘা ফসলি জমি চাষ করা হয় বলে জানা যায়। যশোর জেলার আটটি উপজেলাতে শ্যালোর আওতায় জমি আছে এক লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর। এবার আমন মৌসুমে পর্যাপ্ত বর্ষণের অভাবে কৃষকসমাজ বিশেষত শ্যালো মেশিনের ওপর নির্ভরশীল বেশি।
বেশির ভাগ এলাকায় আমন চারা রোপা শুরু হয়ে গেছে সেচের পানি দিয়েই। এ ব্যস্ততার মাঝেই সরকারিভাবে হঠাৎ ডিজেলসহ বিভিন্ন জ্বালানির অনেক দাম বাড়ায় যশোরের কিষান-কিষানির মুখে হাসি নেই। তারা মানসিকভাবে এখন তাই সমূহ বিপর্যস্ত। আমনের চাষিদের চেয়েও বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন শীতের সবজি চাষিরা। কারণ, শীতের শুকনো মৌসুমের মধ্যে তাদের পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় সেচের পানির ওপর। কিন্তু ডিজেলের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির দরুন তাদের সবজি উৎপাদন ব্যয় বহু গুণ বেড়ে যাবে বলে চাষিরা আশঙ্কা করছেন। তবে এত ব্যয় সত্ত্বেও উৎপন্ন সবজি তারা প্রত্যাশামাফিক দামে বিক্রি করতে সক্ষম নাও হতে পারেন বলে জানা গেছে। বৃষ্টি এখনো সামান্য যা অস্বাভাবিক এই বর্ষার দিনেও। তা ছাড়া জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমনের টার্গেট এ জেলায় পূরণ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ দফতর জানায়, এ জেলাতে চলতি বছর এক লাখ ৩৮ হাজার ৯৪৭ হেক্টরে আমন চাষের টার্গেট আছে। ৯ আগস্ট পর্যন্ত লাখখানেক হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। এ দিকে, কৃষক মহল মাসকে মাস বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছে। বর্ষণের নিদারুণ ঘাটতির ফলে মাঠ-ঘাট চৈত্র মাসের মতো ফেটে চৌচির। পানির অভাবে এবার নামা যায়নি আমন চাষে। যখন চাষিরা আমন চাষ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা, তখন তাদের কাটাতে হচ্ছে অলস সময়। এর মধ্যে চলতি আগস্টের প্রথম দিকে পরপর দুই দিনের বর্ষণে তারা স্বস্তি পেলেও সে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আমন চারার রোপণ বন্ধ জয়ে গেছে। অন্য দিকে, সেচের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা বেড়েছে। একজন মহিলা কৃষক জানান, সেচ দিয়ে বোরো ধান ও সবজি চাষ করতে হয়। এবার আমনের জন্যও সেচের পানি দরকার হচ্ছে। তবে জ্বালানি বা ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি তা অত্যন্ত কঠিন করে তুলছে। একজন কৃষক বললেন, ‘ডিজেলের দাম বেশি বাড়ানো হয়েছে। তাই সব ধরনের আবাদ হুমকির মুখে পড়বে। চাষির উৎপাদন ব্যয়ই তোলা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।’ যশোরের কৃষি কর্মকর্তাও স্বীকার করেছেন, ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষিতে ‘কিছু’ প্রভাব পড়বে। তাই বাজারে পণ্যের মূল্যও বাড়বে। অবশ্য সরকার বিভিন্ন উপায়ে কৃষকদের প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে বলে তার দাবি। তাই তিনি আশাবাদী, তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। ভবিষ্যতে প্রণোদনা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকায় ‘আশঙ্কানুরূপ ক্ষতি হবে না’ বলে তিনি আশ্বস্ত করেছেন।
ডিজেলের দামসহ সব জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে বিবেচনার জন্য কৃষকদের সাথে আমরাও জোর দাবি জানাই সরকারের প্রতি।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement