বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন
- ১৩ আগস্ট ২০২২, ০০:০৫
সুশাসন না থাকায় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ সোয়া লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ২০০৯ সালের শুরুতে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এরপর আর্থিক খাতে কেলেঙ্কারি এবং ঋণখেলাপিদের বারবার সুযোগ দেয়ায় তা বেড়ে এখন হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। তবে ব্যাংকগুলো বলছে, করোনায় ব্যাংকঋণ আদায়ে যে ছাড় দেয়া হয়েছিল, তা তুলে নেয়ার পরও ব্যাংকের ঋণ আদায় বাড়েনি। বরং ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধ না করায় এখনো ধাপে ধাপে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। বিশেষ বিবেচনায় যেসব ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে, তা আবার খেলাপি হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি যেসব প্রণোদনা ঋণ বিতরণ হয়েছে, তা-ও খেলাপি হয়ে পড়ছে। ফলে সার্বিকভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।
২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দেশের ব্যাংক খাত নিয়ে এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ আড়াল করা হয়েছে। খেলাপি ঋণের যে তথ্য প্রকাশ করা হয়, প্রকৃত খেলাপি ঋণ তার চেয়ে অনেক বেশি। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি মইনুল ইসলামের মতে, আইএমএফ বলেছিল, প্রকৃত খেলাপি ঋণ আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি। সেই হিসাব ধরলে এখন প্রকৃত খেলাপি ঋণ আসলে চার লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সুতরাং এখন যে সোয়া লাখ কোটি টাকার তথ্য দেয়া হচ্ছে, সেই হিসাব অস-য।
খেলাপি ঋণের তথ্য ব্যাংকগুলোর দেয়া। সাধারণত তিন মাস পরপর খেলাপি ঋণের তথ্য হিসাব করা হয়। গত মার্চ-জুন সময়ে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৮১৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এ সময়ে সব মিলিয়ে ব্যাংক খাতের ঋণ বেড়ে হয়েছে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বহুগুণ বেশি। একটি উদাহরণ থেকেই তা স্পষ্ট। একটি সহযোগী দৈনিকের তথ্যমতে, বেসরকারি ইউনিয়ন ব্যাংকের হিসাবে খেলাপি ঋণ ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত এপ্রিলে ব্যাংকটি পরিদর্শন করে বলেছে, আসলে তাদের খেলাপি ঋণ ৯৫ শতাংশ।
সম্প্রতি খেলাপি ঋণসংক্রান্ত নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নীতিমালার কারণে বাস্তবে না হলেও কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কমে আসবে। নতুন নীতিমালায় আড়াই থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। যেখানে আগে ১০-৩০ শতাংশ অর্থ জমা দিতে হতো। পাশাপাশি দেয়া হয়েছে খেলাপি ঋণ পাঁচ থেকে আট বছরে পরিশোধের সুযোগ। আগে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় দেয়া হতো। আবার নতুন করে ঋণও পাবে খেলাপিরা। নতুন নীতিমালায় খেলাপি ঋণের সুবিধা প্রদান ও পুনঃতফসিলের ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের হাতে। ফলে ব্যাংক মালিকরা ঠিক করবেন, কোন ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা পাবে। এ ক্ষে-রে আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগত। এটি সহজে অনুমেয় যে, যারা খেলাপি ঋণ আড়াল করতে পারছেন, বর্তমান নীতিমালায় তাদের জন্য কাজটি আরো সহজ হবে।
সরকারগুলো নানাভাবে ঋণখেলাপিদের সুবিধা দিয়ে আসছে। ফলে তা কখনো কমেনি বরং বেড়েছে। ঋণখেলাপিরা আরো প্রভাবশালী হয়েছেন। নীতিনির্ধারণে প্রভাব আছে বলে তারা বারবার খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুবিধা পাচ্ছেন, সুবিধা নিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করে রেখেছেন, বেনামে ঋণ নিয়েও আ-মসা- করছেন।
অর্থনীতি এখন নানা ধরনের ঝুঁকিতে। বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। বেসামাল ডলার-সঙ্কট। অর্থের অভাবে ভর্তুকি বন্ধ করতে একবারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে ৪২-৫১ শতাংশ পর্যন্ত। এতে জীবনযা-রার ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ। এ দুঃসময়ে যাদের সুসময় যাচ্ছে, তাদের অন্যতম ঋণখেলাপিরা। সুশাসন না থাকার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। অর্থনীতির প্রধান সমস্যা আর্থিক খাতের দুর্বলতা। সুতরাং ব্যাংক খাতে বড় ধরনের সংস্কার জরুরি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা