২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জ্বালানি তেলের রেকর্ড দাম বাড়ানো

জনজীবন আরো চাপে পড়বে

-

বিশ্ববাজারে বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ডিজেল, পেট্রল, অকটেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ‘যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসার সময় এসেছে’ বলে গত শুক্রবার দিনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলার পরই মধ্যরাতে রেকর্ড পরিমাণে বাড়ানো হলো জ্বালানি তেলের দাম। প্রতি লিটার ডিজেলের দাম বেড়েছে ৩৪, অকটেন ৪৬ ও পেট্রল ৪৪ টাকা। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে নতুন দাম কার্যকর হয়েছে।
ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪২.৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে প্রতি লিটার ১১৪ টাকা। পেট্রলের ৫১.১৬ শতাংশ বেড়ে প্রতি লিটারের দাম ১৩০ টাকা। অকটেনের দাম বেড়েছে ৫১.৬৮ শতাংশ, প্রতি লিটার কিনতে হবে ১৩৫ টাকায়। এর আগে গত বছরের ৪ নভেম্বর থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ থেকে ৮০ টাকা করে সরকার। তবে অকটেন ও পেট্রলের দাম অপরিবর্তিত ছিল।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কয়েক সপ্তাহ ধরে কমছে। গতকাল শনিবার আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম প্রায় যুদ্ধ-পূর্ববর্তী সময়ের কাছাকাছি ৯০ ডলারে নেমে আসে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে সরকার হঠাৎ করে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। দাম বাড়ানোর সাফাই গেয়ে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, বৈশ্বিক বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রলের মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে আগে কখনো জ্বালানি তেলের দাম একসাথে এতটা বাড়ানো হয়নি। তারা বলছেন, জ্বালানি তেল খাতে সরকারের ভর্তুকি একেবারে কমিয়ে আনার পদক্ষেপ এটি। সরকার আইএমএফ থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নেয়ার চেষ্টা করছে। আইএমএফের ঋণের শর্তের মধ্যে অন্যতম, জ্বালানি খাতে ভর্তুকি প্রত্যাহার। জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে সে শর্ত পূরণ করা হচ্ছে।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, যখন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম অনেক কম থাকে, তখন সরকার বাংলাদেশে দাম কমায় না। ২০১৬ সালে জ্বালানি তেলের দাম পুনঃনির্ধারণের সময়ও দেশীয় বাজারে জ্বালানির দাম বেশি ছিল আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায়। দ্বিতীয়ত, বিদেশ থেকে আমদানি করা জ্বালানির বেশির ভাগই পরিশোধিত। অপরিশোধিত জ্বালানি আনলে দাম অনেক কম হতো। পরিকল্পনা অনুযায়ী অধিক রিফাইনারি কারখানা স্থাপন করলে আমদানি খরচ অনেক কম পড়ত।
আমাদের দেশের বাস্তবতা হলো- ডিজেলের দাম বাড়ানোয় গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। এর অর্থ পরিবহন ভাড়া বাড়বে এবং শেষ পর্যন্ত এর দায় বহন করতে হবে যাত্রীসাধারণ ও বাজারের সবাইকে। ফলে করোনা পরবর্তী জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে আরো চাপ বাড়াবে। অন্য দিকে, এবার এত বেশি দাম বাড়ানোর চাপ অর্থনীতি নিতে পারবে না বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। দাম কিছুটা বাড়ানো হবে, এ শঙ্কা ছিল বটে। কিন্তু সেটি সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেত। যতটা বাড়ানো হয়েছে, তা চিন্তার বাইরে।
এমনিতে মূল্যস্ফীতির চাপে কাবু সাধারণ মানুষ। এর ওপর জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোতে এখন পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করবে আমজনতা, তা বোধগম্য নয়। জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড বাড়ানো কতটা যৌক্তিক হয়েছে, তা ভেবে দেখার বিষয়। দেশে পরিবহন ছাড়া কৃষিকাজে বিপুল পরিমাণ ডিজেল ব্যবহৃত হয়। সে ক্ষেত্রে ডিজেলের দাম বাড়লে কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ অনেক বাড়বে। বর্তমানে চালসহ প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এর ওপর পরিবহন ভাড়া বাড়লে সীমিত আয়ের মানুষ বিপদে পড়বে। এটা জনজীবন আরো বিপন্ন করে তুলবে। তাই সরকার আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট কমিয়ে জ্বালানির দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারে বলে আমরা মনে করি।

 


আরো সংবাদ



premium cement