২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
গোরস্থানের দেয়াল তৈরিতে পরামর্শক

উন্নয়নের নামে হরিলুট

-

দেশে উন্নয়নের নামে কত প্রকল্পে যে বিচিত্র সব খাতে খরচ দেখানো হচ্ছে তার হিসাব নেই। গণমাধ্যমের কল্যাণে প্রতিনিয়ত এমন সব খবর জেনে সাধারণের চক্ষু চড়কগাছ। অতীতে বালিশকাণ্ড, পর্দাকাণ্ড ইত্যাদি দেশে আলোড়ন তোলে। পুকুর খনন এবং আনারসের চাষপদ্ধতি দেখতে আমলাদের বিদেশ ভ্রমণ ছিল মানুষের কাছে কৌতূহলোদ্দীপক ঘটনা। এতে সংশ্লিষ্টরা যে খুব চিন্তিত বা বিচলিত তা মনে হয় না। বাস্তবতা হলো, লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে যে যেভাবে পারছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ অর্থাৎ জনগণের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। যে করে হোক অর্থ উপার্জনই তাদের আরাধ্য। এ কারণে সরকারি প্রকল্প প্রণয়নের সময় অদ্ভুত সব খাতে পরামর্শক রাখা হচ্ছে যা দেখলে বিস্মিত হতে হয়।
এমন একটি খবর গতকাল শুক্রবার নয়া দিগন্তে প্রকাশিত হয়েছে। কৌতূহলোদ্দীপক সংবাদটি হলো, কবরস্থান উন্নয়ন ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণেও পরামর্শক রাখা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, জলাশয়ে বাঁধ নির্মাণে লাগছে পরামর্শক। অবকাঠামোসহ এসব সাধারণ কাজে পরামর্শক খাতে ব্যয় হবে ১৭ কোটি টাকা। আগে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১৩ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের তথ্যানুযায়ী, রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন নামে দুই হাজার ৯৩১ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রায় সাড়ে চার বছরে বাস্তবায়নে একটি প্রকল্প ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুমোদন দেয়া হয়। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। নগরীতে সড়ক ও সড়ক অবকাঠামোর নির্মাণ এবং উন্নয়ন, আর্থসামাজিক ও ধর্মীয় অবকাঠামো নির্মাণ বা উন্নয়ন ছাড়াও স্মৃতিসৌধ ও মুর্যালও নির্মাণ করা হবে প্রকল্পের অধীনে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৩৪ শতাংশ। বিপরীতে অর্থ ব্যয় হয়েছে ৮০৩ কোটি টাকা বা বরাদ্দের ২৭ শতাংশ।
এই প্রকল্পে পরামর্শক খাতে যেসব বিষয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে তাতে চরম আপত্তি তুলেছে খোদ স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কবরস্থান উন্নয়ন, বাউন্ডারিওয়াল নির্মাণসহ সিটি করপোরেশনের এ ধরনের নিয়মিত কাজের জন্য পরামর্শক সেবা খাতে বরাদ্দ গ্রহণযোগ্য নয়। আর স্থানীয় সরকার সচিব গত ৭ জুলাই এ প্রকল্পের পর্যালোচনা সভায় বলেছেন, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই যথাযথভাবে না করায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
বাস্তবে বেপরোয়া উন্নয়ন কোনো দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে কল্যাণ বয়ে আনে না। বরং অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফাঁদে পড়ে মহাবিপদে পড়তে হয়, যার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত শ্রীলঙ্কা। আর এ কথাও সত্য, ওই দেশে প্রকল্পের নামে শাসকশ্রেণী রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটের মহোৎসব করেছে। ফলে দেশটি এখন দেউলিয়া। পরিণামে সাধারণ জনগণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে না পেরে ধুঁকে মরছে।
অতি সম্প্রতি এমন দৃষ্টান্ত সামনে থাকায় আমরা মনে করি, আমাদের দেশেও এখন থেকেই উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়ার আগে এর উপযোগিতা তীক্ষèভাবে যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। সাথে সাথে যথাসাধ্য সাশ্রয়ীভাবে তা বাস্তবায়নের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হবে। এজন্য চাই চলমান প্রকল্পগুলোর খরচের পর্যালোচনা। পর্যালোচনায় যদি দেখা যায় কোনো ব্যয় অযৌক্তিক ও উদ্ভট, তা হলে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। না হলে রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয় রোধ করা যাবে না। তাই সঙ্গত কারণে দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে আগেভাগেই অর্থ হরিলুট বন্ধ করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement