নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করুন
- ০৪ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
জাতীয় প্রবৃদ্ধির (জিডিপি) ১০ শতাংশের বেশি আসে তৈরী পোশাকশিল্প থেকে। বিশ্বে তৈরী পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে চীনের পর দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। বিপর্যয়কর বৈশ্বিক মহামারীর সময় স্বাভাবিকভাবে রফতানি আয়ের বৃহত্তম এ শিল্পের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় সরকার। সব শিল্প-কারখানা বন্ধ রাখা হলেও গার্মেন্ট কারখানা খোলা রাখা হয়। পরে মহামারীর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সর্বোচ্চ প্রণোদনা দেয়া হয় এ খাতে। এ সবই ছিল যথার্থ। কারণ এ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমাদের অর্থনীতিতে ধস নামতো। কর্মসংস্থানের দিক থেকেও এ শিল্প অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। ৪৪ লাখ মানুষ এ শিল্পে কর্মরত।
সম্প্রতি এ শিল্পের জন্য বড় আঘাত হয়ে এসেছে দেশের জ্বালানি পরিস্থিতি। বিশেষ করে বিদ্যুৎসঙ্কট। লোডশেডিং হচ্ছে সারা দেশে। সরকারিভাবে দৈনিক এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের ঘোষণা দেয়া হলেও বাস্তবে হচ্ছে অনেক বেশি। ফলে শিল্প-উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, লোডশেডিংয়ের সময় নিজস্ব ডিজেলচালিত জেনারেটরের সাহায্যে কারখানা চালু রাখতে ব্যয় হচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ অর্থ। এতে পোশাকের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। অথচ ওয়ালমার্টের মতো বৃহৎ ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশী রফতানিকারকদের পোশাকের দাম আরো কমাতে বলছে।
লোডশেডিং গার্মেন্ট শিল্পে বড় একটি আঘাত। কিন্তু এটিই একমাত্র আঘাত নয়। কোভিড-১৯-উত্তর বিশ্বে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে ভোগ্যপণ্যের, বিশেষ করে তৈরী পোশাকের চাহিদা কমছে। বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পে এটি দ্বিতীয় ও গুরুতর আঘাত। বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় উঠে আসতে শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অর্থনৈতিকবিষয়ক মিডিয়া ব্লুমবার্গের এক খবরে এ দু’টি বিষয়কে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পে দ্বৈত আঘাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রয়াস হুমকির মুখে পড়ছে। রিপোর্টে একটি গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রির মালিকের বরাত দিয়ে বলা হয়, গেল জুলাই মাসে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পে এক বছর আগের তুলনায় নতুন ক্রয়াদেশ ২০ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা ক্রেতারা প্রস্তুত হয়ে যাওয়া পোশাকেরও শিপমেন্ট স্থগিত করছেন অথবা অর্ডার বিলম্বিত করছেন। এটি হচ্ছে তৈরী পোশাক রফতানির দু’টি প্রধান গন্তব্য ইউরোপ ও আমেরিকায় মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার কারণে। ফলে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
দেশের বিদ্যুৎ বা জ্বালানি পরিস্থিতি জানতে ব্লুমবার্গের রিপোর্ট পড়ার প্রয়োজন পড়ে না। প্রতি মুহূর্তেই উপলব্ধি করা যায়। লোডশেডিংয়ে শিল্প উৎপাদন কিভাবে ব্যাহত হচ্ছে, দেশীয় মিডিয়াতে এর প্রতিফলন ঘটছে। কিন্তু কোভিড-১৯-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে যখন সব ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি সে সময় বিদ্যুৎ খাতে ধস নামা গুরুতর অশনিসঙ্কেত হিসেবে দেখতে হবে।
সত্য হলো- গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতে সরকার সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। লাখো কোটি টাকা বিনিয়োগ করে দেশজুড়ে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কৃতিত্ব নিয়েছে। এমনকি কুইকরেন্টাল নামের অস্থায়ী কেন্দ্রগুলো একরকম স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে বসিয়ে রেখে বিদ্যুৎ কেনা ছাড়াই এখনো কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। সুতরাং বিদ্যুৎ খাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সার্বিক ব্যর্থতা মেনে নেয়া জাতির জন্য খুব কষ্টকর।
কিন্তু গার্মেন্ট খাতের সঙ্কট কেবল ওই খাতে সীমিত থাকবে না। লোডশেডিংয়ে সব শিল্পেই উৎপাদন কমে যাবে। ফলে যে রফতানি খাত এ মুহূর্তে দেশের একমাত্র ইতিবাচক প্রবণতা দেখাচ্ছে; তাতেও ধস নামার আশঙ্কা আছে।
বাড়তি মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নেমে আসা ও রেমিট্যান্স বাড়াতে ব্যর্থতা অর্থনীতির জন্য খুব খারাপ ইঙ্গিত। এ মুহূর্তে শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা