পুলিশের অসহিষ্ণু আচরণ
- ০২ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
যেকোনো বিষয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সাংবিধানিক অধিকার; কিন্তু দেশে গত দেড় দশক ধরে সরকারের অনীহায় এই গণতান্ত্রিক অধিকার সঙ্কুচিত হয়ে এখন একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে। বিরোধী মতের নেতাকর্মী, এমনকি মানবাধিকারকর্মীদের অধিকার খর্ব করতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাবাহিনীকে যথেচ্ছ ব্যবহার করা হচ্ছে; বিশেষ করে সরকারবিরোধী সভা-সমাবেশ পুলিশ দিয়ে ভণ্ডুল করা হচ্ছে। লক্ষণীয়, সরকারের ইচ্ছা বাস্তবায়নে পুলিশকে ব্যবহার করতে গিয়ে তাদের একধরনের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। ফলে পুলিশ সদস্যরা ‘ধরাকে সরা জ্ঞান’ করছেন। এ সুযোগে এই বাহিনীর হাতে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে বেশুমার।
বর্তমান ক্ষমতাসীনদের এমন কাণ্ডে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর উপর্যুপরি দাবির পরও এ নিয়ে সরকার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বহু মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার। অনেকে এখনো নিখোঁজ। এ অবস্থায় গত বছর শেষের দিকে দেশের অভিজাত বাহিনী র্যাব ও সংস্থাটির বর্তমান ও সাবেক কয়েক কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মার্কিন এমন পদক্ষেপে বেশ কয়েক মাস ধরে বিচারবহির্ভূত হত্যা প্রায় বন্ধ। গুমের ঘটনাও আর ঘটছে না।
আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা সংশোধন ও মানবাধিকার পুনরুদ্ধার নিয়ে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপীয় পার্লামেন্টে সম্প্রতি আলোচনা হয়েছে। ইউরোপে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উপস্থিতিতে আলোচনায় বলা হয়, বাংলাদেশে জাতীয় ও স্থানীয় উভয় নির্বাচন অত্যন্ত বিতর্কিত। নির্বাচনে কারচুপি, সহিসংতা চলছে, অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমাগত অবনতির দিকে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও মানবাধিকারকর্মীরা কোণঠাসা। বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা উদ্বেগজনক অবস্থায়।
এই যখন পরিস্থিতি তখন সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি যদি নিয়মাতান্ত্রিক কর্মসূচি নিয়ে আমার কার্যালয় ঘেরা করতেও আসে, তাদের বাধা দেয়া হবে না, বরং ডেকে চা খাওয়ানো হবে’। তবে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে তার দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘রাজনৈতিক হিউমার’। তবু অনেকে প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যে আশ্বস্ত হয়েছিলেন; কিন্তু কয়েক দিনের ব্যবধানে গত রোববার কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে ভোলায় এক বিএনপি নেতা জীবন দেয়ায় সেই আশ্বাসটুকুরও অপমৃত্যু হলো।
খবরে প্রকাশ, ভোলায় বিএনপির কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে এক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা গুলিতে নিহত হয়েছেন। পুলিশসহ আহত হয়েছেন শতাধিক নেতাকর্মী। বিদ্যুতের লোডশেডিং, জ্বালানির অব্যবস্থাপনা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে গত রোববার জেলা বিএনপি সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বিএনপির দাবি, পুলিশ বিনা কারণে তাদের মিছিলে হামলা করেছে। ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুরুতর আহত ছয়জনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ভোলা সদর হাসপাতালে যেসব রোগী ভর্তি হয়েছেন, তাদের বেশির ভাগ গুলিবিদ্ধ।
শুধু ভোলা নয়, সারা দেশে পুলিশ অপেশাদারি আচরণ করছে। এর পেছনের কারণ, অনেকের মতে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরতে পুলিশকে ব্যবহার করা। বিনিময়ে পুলিশ বাহিনীকে একধরনের দায়মুক্তি দেয়া হয়। ফলে এ বাহিনী বেপরোয়া আচরণ করতে পারছে। ভোলায় বিনা উসকানিতে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশি বাধা ও গুলিবর্ষণ সেই বেপরোয়া আচরণেরই প্রতিফলন।
বিদ্যুতের দাবিতে বিক্ষোভ ভণ্ডুল করতে যেখানে পুলিশ এমন বেপরোয়া গুলি চালাতে পারে সেখানে সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন বা কর্মসূচি কিংবা নির্বাচনের সময় বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কেমনতর অবস্থান নেবে তা সহজে অনুমেয়। এ কথা বলা অসঙ্গত হবে না যে, রাষ্ট্রীয় বাহিনী পুলিশের দলীয় অর্থাৎ অপেশাদার কিংবা অসহিষ্ণু আচরণ কারো জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা