২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
চা-শিল্প বিপর্যস্ত

লোডশেডিং কেন হবে?

-

নয়া দিগন্তের শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতার খবর, ভরা মৌসুমে ‘চায়ের রাজধানী’ খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অব্যাহত লোডশেডিংয়ের দরুন নানাভাবে বিপর্যয়ের মুখে চা-শিল্প। ফলে চা উৎপাদন টার্গেট ও মান অর্জন দুটোই মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন এখন। এর প্রভাব পড়বে দেশের চা-শিল্পের রফতানি বাজারে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সাশ্রয়ের জন্য লোডশেডিংয়ের রুটিন চালু হওয়ার ফলে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বাংলাদেশের একটি বড় অর্থকরী ফসল- চা।
উল্লেখ্য, শ্রীমঙ্গলসমেত মৌলভীবাজার জেলায় এখন দিনে চার পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হচ্ছে লোডশেডিং। জেলায় কোথাও কোথাও তার মাত্রা আরো বেশি। এ কারণে চলতি বছর ১০ হাজার কেজি চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের যে আশা ছিল, তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, গোটা বাংলাদেশে মোট ১৬৩টি চা-বাগান রয়েছে। তার ৯২টিই এ জেলায়। মৌলভীবাজার তথা শ্রীমঙ্গলের চা গুণে-মানে উন্নত এবং দেশের বেশির ভাগ চা-পাতা উৎপন্ন হয় এ জেলাতেই। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে তা বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে। আকস্মিকভাবে লোডশেডিং শুরু হওয়ায় দেশের চা-শিল্প এখন বিষম সঙ্কটে। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, হঠাৎ বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের দরুন চায়ের উৎপাদন প্রক্রিয়ার ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপকভাবে। প্রতি বছর জুলাই মাস থেকে অক্টোবর অবধি হলো চা উৎপাদনের মৌসুম। তখন প্রতিটি বাগানের কারখানায় ক্ষেত্রভেদে পাঁচ থেকে ৭০ হাজার কেজি চা-পাতা আসে প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য। তবে এখন বিদ্যুৎবিভ্রাটে এই কাঁচা চা-পাতা নিয়ে বিপাকে পড়ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। একাধারে বিদ্যুতের দরকার হলেও তা না থাকায় বাগানের চা-কারখানাগুলো সর্বক্ষণ খোলা রাখা যাচ্ছে না। তাই চায়ের গুণগতমান বজায় থাকছে না। খারাপ মানের চা-পাতা রফতানি করা সম্ভব নয়। রফতানি করার পর তা ফেরত পাঠানো হতে পারে স্বদেশে। এ অবস্থায় বিশ্বে আমাদের চায়ের ইমেজ তথা মানমর্যাদা ক্ষুণœœ হতে পারে। এ দিকে জেনারেটর চালিয়ে চা-কারখানা চালু রাখা কঠিন। কারণ এটি ব্যয়বহুল। অনেকে বলছেন, এ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জ্বালানি না থাকার সমস্যাও। এসব বিপর্যয় থেকে সহসা উত্তরণের আশা নেই। স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এহেন আচরণে বাগানমালিক ও কর্মকর্তারা হতাশ।
ন্যাশনাল টি কোম্পানির একজন বাগান ব্যবস্থাপক বলেন, ‘চা-উৎপাদন অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে একটানা মাত্র দু’ঘণ্টাও চা-ফ্যাক্টরি চালানো যায় না। দিনে ২৪ ঘণ্টায় ১২ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ নেই। এক ঘণ্টার বিদ্যুৎ পরের দুই ঘণ্টা ধরেই থাকে না। একটানা চা-কারখানা না চললে চা-মানসম্পন্ন হয় না।’ আরেক চা-বাগানের ব্যবস্থাপক বলেছেন, লোডশেডিং আমাদের মারাত্মক ক্ষতির কারণ। একে তো এখন ব্যয় বেড়ে গেছে, তদুপরি জেনারেটর চালানোর প্রয়োজনীয় ডিজেল পর্যন্ত মিলছে না। এর দাম প্রতি লিটার ৮৫ টাকা হলেও তা পাওয়া যায় না চাহিদা অনুসারে। তা ছাড়া এখন বলা হচ্ছে, ‘পেট্রলপাম্প সপ্তাহের সাত দিনে এক দিন বন্ধ থাকবে। তাই জেনারেটরেও চা-উৎপাদন ঠিক থাকছে না।’ ইস্পাহানির একজন চা-বাগান কর্মকর্তা জানান, তারা প্রত্যহ চার থেকে সাড়ে চার হাজার কেজি চা-পাতা প্রক্রিয়াজাত করে থাকেন। কিন্তু এখন বিদ্যুৎ না থাকায় বেশি খরচ করেই গ্যাসচালিত জেনারেটর ব্যবহার করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। চা-সমিতির এক নেতা জানালেন, ‘বিদ্যুৎ সঙ্কটে সবার চা-উৎপাদন বিঘিœত হচ্ছে। জেনারেটর দিয়ে চা-উৎপাদনের সব যন্ত্রপাতি চলে না। সব কিছুর দাম বাড়লেও চায়ের দাম বাড়েনি। গুণগতমান না থাকলে তা আরো কমবে।’ চা রফতানিকারী প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তার কথা, গুণগতমান না থাকলে রফতানি বাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। খারাপ মানের চা-পাতা বিশ্ববাজারে চলে না। তা কোনোমতে বিক্রি করা হলেও ফেরত আসবে। এতে আমাদের রফতানি বাজার ও চা-শিল্পের ক্ষতি হবে। স্থানীয় বিদ্যুৎ সমিতি বলেছে, এখানে অনেক চা-কারখানা। তাই আমরা কিছুই করতে পারছি না এবং কাউকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া যাচ্ছে না। এখন বিদ্যুতের চাহিদার মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ পূরণ করা যায়। পিক আওয়ারে চাহিদা ৯০ মেগাওয়াট হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ মাত্র ৬০ মেগাওয়াট।
দেশের ঐতিহ্যবাহী চা-শিল্পকে বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে যাবতীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আশাবাদী আমরা।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement