২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
দৃশ্যমান হচ্ছে অব্যবস্থাপনার কুফল

অর্থনীতি নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ

-

দেশের অর্থনীতির অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নয়নের সরকারি বয়ান আর ধোপে টিকছে না। গত ১৫ বছরের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, লাগামহীন দুর্নীতি ও গোষ্ঠীবিশেষের স্বার্থরক্ষার নীতির অনিবার্য কুফল এতদিনে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা তাদের মতো করে রেখেঢেকে অর্থনীতির বিপদগুলোর কথা বলছেন। তারা এর প্রতিকারের সম্ভাব্য উপায়ের কথাও বলছেন শালীনতা অক্ষুণ্ন রেখে। গত রোববার ‘সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ : কতটা ঝুঁকিপূর্ণ’ শিরোনামে ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ’ (সিপিডি) আয়োজিত এক আলোচনায় বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য ছিল এমনই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।
বিশিষ্ট বক্তারা বলেছেন, দেশের অর্থনীতি এখন মধ্যমেয়াদি সঙ্কটে রয়েছে। এ সঙ্কট থেকে সহজে মুক্তি মিলবে না। এভাবে চললে দেশ দীর্ঘমেয়াদি সঙ্কটের দিকে যাবে। কার্যকর পদক্ষেপ এখনই খুঁজে বের করতে হবে। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়।
দেশ কিভাবে চলছে তা সবাই জানে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন অর্থ উপদেষ্টা বললেন, ব্যাংক খাতের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। দারিদ্র্য বেড়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হয়ে গেছে। এর স্বীকৃতি দরকার। অর্থ পাচার হচ্ছে। কিন্তু অর্থপাচার রোধে এনবিআর ও সরকারের বড় কোনো উদ্যোগ নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এক গভর্নর বলেছেন, দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ব্যাংক খাত এখন দুর্নীতি ও অপচয়ে নিমজ্জিত। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও মালিকদের সহায়তা করছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেকজন উপদেষ্টা বলেন, একটি সময়ে আমরা দেশের অর্থনীতির শক্তিমত্তা নিয়ে গর্ব করতাম। এখন সে অবস্থা নেই। অর্থনীতিতে একধরনের অবিচারের বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। নতুন নতুন দারিদ্র্য এ অবিচারের একটি। নতুন করে তিন কোটি লোক দারিদ্র্যসীমায় যুক্ত হয়েছে। মানুষের আয় কমেছে। অর্থনীতি এখন স্বার্থের দ্বন্দ্বনির্ভর। প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়মই নিয়ম হয়েছে। রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র শুরু হয়েছিল স্বল্পসময়ের জন্য। তাহলে এখন কেন সেগুলো অব্যাহত রাখতে হবে? এর কোনো অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা নেই। তাহলে কার স্বার্থে এ সুবিধা?
প্রশ্ন উঠে আসছে। আর প্রশ্নের জবাবটাও সবার জানা। মূলত ক্ষমতাসীনদের দলীয় বা বলয়ভুক্ত ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থে এ ব্যবস্থা। তবে প্রশ্নের জবাবটা বিশেষজ্ঞদের মুখ থেকে বেরুবে না। কারণ আছে। এখানে দেখা দেয় ক্ষমতার বাইরের রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজনীয়তা। এ রাজনৈতিক শক্তির অনুপস্থিতির কারণে সব বুঝেও কেউ টুঁ শব্দটি করবেন না অথবা করেন না। ক্ষমতার বিরুদ্ধে কথা বলার বিপদ সবাই জানে। বিরোধী রাজনীতি যদি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারত তাহলে অর্থনীতির বিপজ্জনক এ পরিস্থিতিতে সত্যি কথাটা সবাই বলার সাহস পেত। বাস্তবতা হলো- বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি নিজের অস্তিত্বের নিরাপত্তাই নিশ্চিত করতে অপারগ। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যমান ব্যবস্থার মধ্যে সবাই সমাধানের পথ খোঁজেন এবং সেটিই স্বাভাবিক।
সিপিডির আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি সুপারিশ করেছেন সঙ্কট থেকে উঠে আসার জন্য। এর মধ্যে রয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ স্থিতিশীল রাখা, মূল্যস্ফীতি ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি ধরে রাখতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো। এ সব খাতে সংস্কার দরকার।
খেয়াল করলে স্পষ্ট হবে সব কিছু যেন নতুন করে শুরুর কথা বলা হচ্ছে। রিজার্ভ ধসে গেছে। শিগগিরই বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম। জ্বালানি খাত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। পরিস্থিতির উন্নতির আশা করার সুযোগ আপাতত নেই। সব মিলিয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি সঙ্কট মোকাবেলায় জাতিকে মানসিকভাবে তৈরি করাই সম্ভবত এখন সবার কর্তব্য।

 


আরো সংবাদ



premium cement