২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সাংবাদিককে ইউএনওর গালমন্দ

পেশাদারিত্বের অভাব

-

বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের মান যে অধোমুখী, বিষয়টি এখন উৎকটভাবে দৃশ্যমান। এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই, শুধু আমলাতন্ত্র নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে আমাদের নৈতিকতার অবনমন হয়েছে। উঁচু থেকে শুরু করে একেবারে মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের দাম্ভিক আচরণে ক্ষমতার অনিয়ন্ত্রিত বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। জনপ্রশাসনের কর্মীরা যে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন সাধারণ মানুষের সাথে তাদের আচরণ থেকে তা স্পষ্ট। গণমাধ্যমকর্মীরাও এ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকদের নাজেহাল থেকে শারীরিক নির্যাতন পর্যন্ত করা হচ্ছে।
২০২০ সালের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা আরিফুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, মাদকবিরোধী অভিযানে বাড়িতে মাদক রাখার অপরাধে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে জানা যায়, আসলে কুড়িগ্রাম শহরে সরকারি টাকায় সংস্কার করা একটি পুকুরের নাম তৎকালীন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন নিজের নামে নামকরণের চেষ্টার সংবাদ প্রকাশ করায় আরিফুলকে চড়া মাশুল দিতে হয়। আর এবার সংবাদ প্রকাশের জেরে কক্সবাজারের স্থানীয় এক সাংবাদিক অকথ্য ভাষায় গালমন্দের শিকার হয়েছেন এক ইউএনওর কাছে। এ ঘটনায় টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কোনো রং হেডেড পারসন ছাড়া এভাবে কথা কেউ বলতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন উচ্চ আদালত। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর গত রোববার আদালতের নজরে আনলে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। আদালত বলেন, ‘ইউএনও যে ভাষায় কথা বলেছেন, তা মাস্তানের চেয়েও খারাপ। এ বিষয়ে ইউএনও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এর অর্থ তার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন তিনি।’
শাসনতন্ত্রে রাষ্ট্রব্যবস্থাপনায় আমলাতন্ত্র একটি অপরিহার্য অঙ্গ। এটি ছাড়া দেশে সুশাসন কায়েম অসম্ভব। সঙ্গত কারণে একজন সরকারি কর্মকর্তাকে যেকোনো পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হয়। কারণ তাদের প্রতিটি কাজের প্রভাব সমাজে পড়ে। বাস্তবে দেশে গত এক যুগে আমলারা তাদের আচরণ নিয়ে ভাবিত নন বলে মনে হয়। বিশেষ করে মাঠপ্রশাসনের অনেকে অপেশাদার আচরণ করছেন। এসব কর্মকর্তা ভুলতে বসেছেন যে, তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তাদের বেতনভাতাসহ সব সুবিধাদি দেয়া হয় জনগণের করের টাকায়।
প্রশ্ন হলো, আমলাদের অসহিষ্ণু ও অপেশাদার আচরণ দিন দিন বাড়ছে কেন? একটি সহযোগী দৈনিকের এক প্রতিবেদন থেকে এ বিষয়ে আঁচ করা যায়। ওই প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবী আলী রিয়াজের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়, গত রোববার আলী রিয়াজ ঢাকায় তার একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বলেন- ‘দেশে যে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি হয়েছিল, তা ভেঙে গেছে। এখন নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি হয়েছে, তা গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক শক্তির সাথে আমলাতন্ত্রের এক ধরনের সেটেলমেন্ট (সমঝোতা বা অলিখিত চুক্তি) হয়েছে। যা আগে ছিল না’।
এই অলিখিত চুক্তি কী তা অনুমান করতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। দেশের রাজনৈতিক শক্তি, মানে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের সাথে আমলাদের একধরনের আঁতাত হয়েছে। যাতে উভয়পক্ষ দেশের সম্পদ বেহিসাবি ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের আয়েশি জীবন বাধাহীনভাবে নিশ্চিত করতে পারেন। পরিণতিতে দেশে গত এক যুগে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। সংবাদপত্রে প্রতিনিয়ত সেসব দুর্নীতির খবর ছাপা হচ্ছে। তাদের এ সুবিধা অর্জনের মাশুল জনগণ পরিশোধ করছে রাজনৈতিক অধিকার হারিয়ে।
আমরা মনে করি, দেশের আমলাতন্ত্রে জবাদিহি ফিরিয়ে আনতে হলে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। কেবল অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত একটি সরকারের পক্ষে সম্ভব আমলাদের পেশাদার আচরণ করতে বাধ্য করা ও জবাবদিহির আওতায় আনা।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ২৪ ঘণ্টায়ও মহাসড়ক ছাড়েনি ডিইপিজেডের লেনী ফ্যাশনের শ্রমিকরা বুধবার সকালে ঢাকার বাতাসের মান ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ চীন সীমান্তের কাছে গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিল মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা সুদানে গৃহযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা আগের হিসাবকে বহুগুনে ছাড়িয়ে গেছে, বলছে গবেষণা চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা : যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ২০ শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ‘গণহত্যার’ অভিযোগ নিহত আইনজীবীকে নিয়ে অপপ্রচার করছে ভারতীয় গণমাধ্যম : প্রেস উইং হিজবুল্লাহ-ইসরাইল অস্ত্র-বিরতি চুক্তি জয় দিয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শুরু করতে চায় টাইগ্রেসরা সহজ জয়ে সিরিজে সমতা পাকিস্তানের

সকল