২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বাধাহীন যৌন নিপীড়ন

দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার ফল

-

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) এক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। অভিযুক্তরা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য। তবে এ ঘটনায় সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের মুখে জড়িতদের শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনী আটক করতে বাধ্য হয়েছে। চবিতে গত বছর যৌন হয়রানির আরেকটি ঘটনা ঘটিয়েছিল ছাত্রলীগ। ওই ঘটনায় অভিযুক্তরা কেউ শাস্তি না পাওয়ায় ফের তারা আরো জঘন্য যৌন নিপীড়ন চালাতে পারল। দায়মুক্তি পাওয়ার সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে কলুষিত করে চলেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আজ যেন অরক্ষিত। এখানে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নেই। বিশেষ করে ছাত্রীদের। চবির এই ছাত্রী নিজ ক্যাম্পাসে ভয়াবহ লাঞ্ছনা ও অপদস্থ হয়েছেন। ঘটনার বিবরণের জানা যাচ্ছে, কয়েকজন দুর্বৃত্ত ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তার বন্ধুকে ঘিরে ফেলে। একপর্যায়ে তাকে বেঁধে ফেলে। তার বস্ত্র খুলে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। সাথে থাকা বন্ধু প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে মারধর করে আটকে রাখে। পরে সন্ত্রাসীরা মোবাইল ও মানিব্যাগ রেখে তাদের ছেড়ে দেয়। র্যাব ঘটনার সাথে জড়িত পাঁচজনকে আটক করেছে। খবরে প্রকাশ, ঘটনার সাথে জড়িত ছয়জনই ছাত্রলীগের কর্মী। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারী এক বহিরাগত রয়েছে।
ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে রেখে-ঢেকে প্রকাশ করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের কৃত গুরুতর অপরাধ এভাবে প্রকাশ করতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এতে অপরাধীদের নিষ্কৃৃতি পাওয়া সহজ হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। চবির ঘটনাটি অকল্পনীয়। প্রকাশ্যে ক্যাম্পাসে ঘটানো হয়েছে। বিশ্বের অন্য কোথাও কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটলে কঠোর প্রতিক্রিয়া হতো। বস্তুত সমসাময়িক বিশ্বে এ ধরনের ঘটনা অন্তত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটে না।
এ বছরের শুরুতে যৌন নিপীড়নের আরেকটি ঘটনা একই গ্রুপ করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেটি ছিল এর চেয়েও জঘন্য। দলবদ্ধ ধর্ষণ। ছাত্রসংগঠনটির এক পূর্বসূরি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ধর্ষণের শততম উৎসবের আয়োজন করে, যা অশ্লীলতা বেহায়াপনায় নজির সৃষ্টি করে।
দুর্ভাগ্য হচ্ছে, যৌন নিপীড়নের মতো গুরুতর ঘটনা প্রথমে না দেখার ভান করে চবি কর্তৃপক্ষ। সেখানে যৌন নির্যাতনবিরোধী একটি সেল রয়েছে। নির্যাতিত ছাত্রী অভিযোগ করতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে বাধা দেয়। কর্তৃপক্ষ ছাত্রীকে কোনো ধরনের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। অপরাধীদের শনাক্ত করতে পদক্ষেপ নেয়নি। বরং ভিসির নেতৃত্বে কমিটি ছাত্রীদের হলে ফেরার সময়সূচি বেঁধে দিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ দমাতে সচেষ্ট হয়। সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্তৃপক্ষের একই ধরনের প্রবণতা লক্ষণীয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগের অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বদলে তাদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে। এক কথায় প্রশাসন ও ছাত্রলীগ হাত ধরাধরি করে চলছে।
যৌন নিপীড়নের ঘটনা যেকোনো সমাজে গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। এমন অপরাধ দমনে আইনের কঠোর ধারা যথাযথ অনুসরণ করা হয়। বাংলাদেশেও কিছু ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ দেখা যায়। তবে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের বিরুদ্ধে অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি এ অপরাধেও ছাড় দেয়া হচ্ছে। সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগ সদস্যরা স্বামীর কাছ থেকে ছিনিয়ে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের রেকর্ড গড়ার পেছনে দায়মুক্তির সংস্কৃতিই দায়ী। অন্য দিকে, এমন গুরুতর ঘটনা ঘটলে ছাত্রলীগ তার সদস্যদের বিরুদ্ধে বহিষ্কার বা দলীয় পদ স্থগিতের মতো লোক দেখানো উদ্যোগ নেয়। সময়-সুযোগ মতো তা প্রত্যাহার করে নেয়। প্রশ্ন হচ্ছেÑ ক্যাম্পাসকে ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ রাখা হবে কি না। ক্ষমতাসীনরা ছাত্রলীগকে এ ক্ষেত্রে ছাড় দেবে, না লাগাম টেনে ধরবে? লাগাম টেনে না ধরা হলে ক্যাম্পাসগুলোতে এই সংস্কৃতির চর্চা বাধাহীন বাড়তে থাকবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement