দোষী প্রমাণের আগে হত্যা বেআইনি
- ২৩ জুলাই ২০২২, ০০:০০
বিশ্বে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ব্যতিক্রমী। সীমান্তের দুই পাশে দুটি বন্ধুপ্রতিম দেশ। এ নিয়ে উভয় দেশই সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। কিন্তু সীমান্তে একটি দেশ অন্য দেশের নাগরিকদের হত্যা করছে। পৃথিবীর অন্য কোথাও বন্ধুপ্রতিম দেশের সীমান্তে এরকম হত্যার নজির নেই। এমনকি দুটো শত্রুভাবাপন্ন দেশের মধ্যেও এত বেশি সীমান্ত হত্যার ঘটনা বিরল।
সীমান্ত হত্যা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে রয়েছে অস্বস্তি। এ নিয়ে সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে বিভিন্ন সময় কিছুটা অস্বস্তি প্রকাশ করতে দেখা গেলেও বাস্তবে এটি বন্ধে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এবার দুদেশের আলোচনায় সীমান্ত হত্যার ইস্যু ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। বিএসএফ প্রধান পঙ্কজ কুমার সিং প্রকাশ্যে বলেছেন, সীমান্তে গুলিতে নিহত বাংলাদেশী সবাই অপরাধী। ঢাকায় দুদেশের মধ্যে ৫২তম সীমান্ত সম্মেলন শেষে গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এই ঢালাও মন্তব্যের পরও ঢাকা কোনো প্রতিবাদ করেনি। তবে সীমান্ত হত্যার শিকার বাংলাদেশের জনসাধারণের মাঝে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। গণতান্ত্রিক সমাজে কোনো দেশে কাউকে আদালতে প্রমাণিত হওয়ার আগে অপরাধী বলা যায় না। কেউ অপরাধ করলেও তাকে বিনাবিচারে হত্যা আইনবহির্ভূত। তাই এ মন্তব্যে ভারতীয় মনোভাব স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। দিল্লির কাছে বাংলাদেশের নাগরিকদের জীবনের মূল্য কতটা তা-ও প্রকাশ পেয়েছে। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ প্রধান প্রতিনিয়ত অঙ্গীকার করে থাকে যে, সীমান্তে বাংলাদেশীরা হত্যার শিকার হবে না; মারণঘাতী অস্ত্রও ব্যবহার করা হবে না। বিএসএফ প্রধান প্রতি বছর একবার করে এ প্রতিশ্রুতি দিলেও আগের মতোই গুলি করে বাংলাদেশী হত্যা করা হয়। একই প্রতিশ্রুতি নিয়মিত করে থাকেন ভারতের শীর্ষ রাজনীতিকরাও।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানীকে নির্মমভাবে হত্যা করে বিএসএফ। তার খুনিরা চিহ্নিত হলেও বিচার হয়নি। বরং বিচারের নামে অভিযুক্তদের খালাস দেয়া হয়েছে। বিএসএফ প্রধান চোরাচালান সংক্রান্ত যে অপরাধের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, এর জন্য উভয় দেশের নাগরিক সমানভাবে দায়ী। সম্প্রতি এক তদন্তে বলা হয়েছে, এ কাজে বিএসএফ সদস্যরাও জড়িত। প্রশ্ন হচ্ছে, একই অপরাধে দুই দেশেরই অপরাধীদের বিরুদ্ধে কেন একই ব্যবস্থা নেয়া হয় না। গুলিতে শুধু প্রাণ হারাচ্ছেন বাংলাদেশীরা। ২০২০ সালে সরাসরি গুলি করে ৪২ জন ও অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে আরো ছয় বাংলাদেশীকে হত্যা করে বিএসএফ। এ সময় অপহরণ করা হয় ২২ জনকে। ২০১৯ সালে ৩৭ জনকে গুলি করে ও ছয়জনকে নির্যাতনে হত্যা করা হয়। ভারতের প্রতিশ্রুতির মধ্যেও বাংলাদেশী হত্যা এখনো অব্যাহত।
উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর মধ্যে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। ভারতের জন্য যেসব কর্মসূচি ফলপ্রদ তার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাহলে প্রতিবেশীদের হত্যা কেন? এমন সম্পর্ক পুরোপুরি প্রতারণাপূর্ণ। এর প্রতিকার পেতে কোনো কার্যকর আলাপ নেই। ভারত কেন এমন প্রতারণা অব্যাহতভাবে করছে; সে প্রশ্নও করছে না ঢাকা। নিজের ক্ষতি স্বীকার করে বন্ধুত্ব রক্ষার ঘটনা বিশ্বে বিরল। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় প্রতিকার না পেলে আন্তর্জাতিক ফোরামে যেতে পারে বাংলাদেশ এবং সেটাই উচিত। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা তিন মেয়াদ পূর্ণ করতে যাচ্ছেন। অথচ গুরুতর এ ইস্যু নিয়ে আঞ্চলিক ফোরামে একবারের জন্যও আপত্তি উত্থাপন করেননি। দেশের দেশপ্রেমিক ব্যক্তি সংগঠন ও মানবাধিকার গোষ্ঠী বহুদিন ধরেই বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে উত্থাপনের দাবি জানাচ্ছেন। আমরা আশা করব, সরকার এবার এ বিষয়ে উদ্যোগী হবে। সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামানো এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার বন্ধে জোরালো অবস্থান নেবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা