অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন
- ২২ জুলাই ২০২২, ০০:০০
বাংলাদেশে রেলওয়ের টিকিট অনিয়মের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। এই বিভাগে হাজারো দুর্নীতির মধ্যে টিকিট কালোবাজারি একটি। প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ এই চক্রের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কর্তৃপক্ষ অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন বোধ করে বলে মনে হয় না। সরকারি অন্যান্য বিভাগের মতো এ বিভাগে অবাধে চলা দুর্নীতি নিয়ে মানুষের মনে বিস্ময় জাগে। অন্য দিকে এর প্রতি সরকারের এই নীরব সায়ের কারণে ভুক্তভোগীরা ধরেই নিয়েছেন অনিয়মই নিয়ম হয়ে গেছে। তাই আর্থিক, মানসিক ও সময় নষ্টের ক্ষতি মানুষ এক প্রকার কবুল করে নিয়েছে। তবে এবার একটি ব্যতিক্রম দেখা গেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী অনলাইনে টিকিট কিনতে গিয়ে প্রতারিত হয়ে অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তার নিজের বিরুদ্ধে ঘটা অপরাধের আংশিক প্রতিকার পেয়েছেন।
বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহিউদ্দির রনির আন্দোলনটি একটি ‘ওয়েক আপ কল’ হতে পারে। ঘটনার বিস্তারিত বিবরণে জানা যাচ্ছে, তিনি ১৩ জুন ঢাকা থেকে রাজশাহীর চারটি টিকিট কেনেন অনলাইনে। দেখা গেল, তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয়া হলেও টিকিট তাকে দেয়া হলো না। তিনি সশরীরে কাউন্টারে গিয়ে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানান। উপস্থিত কর্মকর্তারা এর কোনো প্রতিকার না করে তার দাবি এড়িয়ে যান। রনি দেখতে পান, তারই প্রাপ্ত টিকিটগুলো অন্যের নামে ইস্যু করা হয়েছে। এর পর থেকে তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে কোনো প্রতিকার পাননি। তাকে বলা হয়েছিল, এই কালোবাজারি চক্র অনেক শক্তিশালী। আবার তাকে দমে যাওয়ার জন্য হুমকিও দেয়া হয়েছিল। তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, এর একটি প্রতিকার তিনি করবেনই। তাই ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে একাই আন্দোলন শুরু করেন।
রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে ঢুকে পড়া ব্যাপক অব্যবস্থাপনা ঠিক জায়গায় ফিরিয়ে আনার একটি সুযোগ দেখা যাচ্ছে। মহিউদ্দিন রনি টানা ১৪ দিন আন্দোলন চালানোর পর সফলতা এসেছে। ভোক্তা অধিকার অধিদফতর তার অভিযোগ তদন্ত করে এর সত্যতা পেয়েছে। তারা টিকিট বুকিং অপারেটর সহজ ডটকমকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে। জরিমানার ২৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৫০ হাজার টাকা তিনি পাবেন। আন্দোলনে তিনি ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। তিনি জানান, এই প্রাথমিক বিজয়ের পর তিনি থেমে থাকবেন না। এবার এসব দাবি পূরণের জন্য দীর্ঘমেয়াদে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে তার অবস্থানকালেই সারা দেশ থেকে টিকিট কালোবাজারির শিকার হওয়া মানুষ তার প্রতি সাড়া দিয়েছে। অনেক ছাত্র স্থানীয় রেল স্টেশনগুলোতে অবস্থান কর্মসূচিসহ তাদের বঞ্চনার কথা জানিয়ে তার প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে।
দুর্ভাগ্য হচ্ছে, কর্তৃপক্ষের অবহেলা, গাফিলতি ও তাদের ভেতরে-বাইরের অপরাধী চক্রের দৌরাত্ম্য কিন্তু কমছে না। গত বুধবার রাজধানীর বিমানবন্দর স্টেশনে একদল ছাত্র টিকিট কিনতে গিয়ে কালোবাজারির শিকার হয়। মাত্র কয়েকটি টিকিট বিক্রি করে ছাত্রদের জানিয়ে দেয়া হয়, আর কোনো টিকিট নেই। তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তিন ঘণ্টা যোগাযোগ বন্ধ থাকার পর টিকিট পাওয়ার আশ্বাসের পর আবার ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। ছাত্ররা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে অন্যায়ের প্রতিকার পেলেন। অথচ রেলওয়ের কাছ থেকে সব নাগরিক সমান সেবা পাওয়ার কথা। এভাবে সারা দেশে প্রতিদিন কত যাত্রী হয়রানির শিকার হচ্ছে তার কোনো হিসাব নেই। তাদের কাছে এমন কোনো শক্তি নেই এসব অপরাধ রুখে দেবেন।
আমরা মনে করি, রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হয়ে রেলের টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করা উচিত। যারা নিজেদের আখের গোছানোর জন্য এটি করে তাদের চিহ্নিত করা রাষ্ট্রের জন্য কঠিন কোনো কাজ নয়। এর আগেও অপরাধীরা নানাভাবে জনসাধারণের সামনে শনাক্ত হয়েছে; কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে পুরো চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ আগায় না। একইভাবে, রেলের প্রত্যেকটি শাখা-প্রশাখায় যে অনিয়ম-দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে তার সব উৎপাটন করা যায়। এমনকি সরকারি প্রত্যেকটি বিভাগে জেঁকে বসা দুর্নীতিকে সরকার চাইলে ক্রমান্বয়ে উৎপাটন করতে পারে। অন্যথায় একসময় আসবে যখন প্রতিবাদীরা দুর্নীতিবাজদের শায়েস্তা করার জন্য আন্দোলনে নামবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা