২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
জিএসপি পেতে ইইউর শর্ত

আশাবাদের জায়গা সামান্যই

-

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে বাংলাদেশী পণ্য রফতানিতে জিএসপি বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা পাওয়া নিয়ে নতুন উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে। কারণ এ সুবিধা পেতে বাংলাদেশে মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে ইইউ। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিটির প্রতিনিধিদল এ মুহূর্তে ঢাকায়। দলের প্রধান স্পষ্ট করে বলেছেন, জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা একটি মৌলিক শর্ত। আর মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেই শ্রম অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব। তিনি বলেন, নাগরিক সমাজের জন্য মতপ্রকাশের যথেষ্ট স্বাধীনতা থাকতে হবে। বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যমান পরিস্থিতি জিএসপি সুবিধা পাওয়ার শর্তের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। জিডিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিশেষ করে সাংবাদিকদের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে ইইউর উদ্বেগ স্পষ্ট করেন তিনি।
কূটনীতিক ও বিদেশী যেকোনো প্রতিনিধিদল কোনো দেশ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গেলে সচরাচর কূটনৈতিক ভাষায়ই কথা বলেন। আভাস ইঙ্গিতের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার সেই ভাষায় একটা কুশলী আড়াল থাকে। কিন্তু এখন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিদেশীদের কথায় সেই আড়াল বা সৌজন্যটুকু যেন অন্তর্হিত। তাদের যা বক্তব্য বা অবস্থান তা তারা কোনোরকম রাখঢাক ছাড়াই সরাসরি বলছেন। এটি আমাদের জন্য সুখকর পরিস্থিতি নয়।
ইইউ প্রতিনিধিদলের প্রধান ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট হেইডি হটুলা বলেন, এক বছর আগে বাংলাদেশ সরকার শ্রমসংক্রান্ত পথনকশা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। শ্রম রোডম্যাপের পূর্ণ ও সফল বাস্তবায়ন আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের পূর্বশর্ত। বাংলাদেশে শ্রম আইন ও রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) আইন বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সব বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ইপিজিডে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিলম্ব গ্রহণযোগ্য হবে না।
বাংলাদেশের জন্য জিএসপি সুবিধা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমাদের প্রধান পণ্য তৈরী পোশাকের ৬০ শতাংশেরও বেশি রফতানি হয় ইইউর বাজারে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে একটি বিশেষ স্কিমের অধীনে জিএসপি সুবিধা পায় বাংলাদেশ। ফলে শুল্ক ছাড়াই বাংলাদেশী পণ্য রফতানি করা যায়। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসির তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হলেও পরবর্তী তিন বছর জিএসপি বহাল থাকবে। কিন্তু তার পর থেকে ১২ শতাংশ হারে শুল্ক দিয়ে পণ্য রফতানি করতে হবে। সেটি পোশাক খাতে কতটা প্রভাব ফেলবে বলা মুশকিল।
এরই মধ্যে আরেকটি ঘটনা আমাদের জন্য শঙ্কা তৈরি করছে। ২০২৪-৩৪ সালের জন্য জিএসপির নতুন নীতিমালা তৈরি করছে ইউরোপীয় কমিশন। আগামী বছরের শেষ দিকে ইইউ পার্লামেন্টে সেটি অনুমোদিত হলে বাংলাদেশের জিএসপি প্লাস পাওয়া একরকম অসাধ্যই হয়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, খসড়া নীতিমালা পাস হলে ইইউর বাজারে পোশাক রফতানিতে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনাই থাকবে না। এমনকি মূল্য সংযোজনের গ্যাঁড়াকলে অন্য কয়েকটি খাত জিএসপি প্লাস থেকে বঞ্চিত হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনকে যুক্ত করে সরকারি পর্যায়ে ইইউর সাথে আলোচনার তাগিদ দেন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু আমাদের সরকার এসব বিষয়ে কতটা সক্রিয় তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। সক্রিয় থাকলে শ্রম সংক্রান্ত রোডম্যাপ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি এক বছর ধরে ঝুলে থাকত না। এর চেয়েও বড় কথা, দেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্র- এসব বিষয় চাপাচাপি করে বাস্তবায়নের বিষয় নয়। এগুলো ক্ষমতাসীনদের বিশ্বাস ও চর্চার বিষয় যা এ দেশে অনুপস্থিত প্রায়। সুতরাং খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ আছে মনে হয় না।


আরো সংবাদ



premium cement