২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বন্যায় ২৩ জেলার সড়ক যোগাযোগ বেহাল

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার করুন

-

বাংলাদেশ বন্যাপ্রবণ দেশগুলোর অন্যতম। প্রায় প্রতি বছরই এ দেশের কোনো না কোনো এলাকা প্লাবিত হয়। এতে ফসলসহ অবকাঠামোর ক্ষতি হয়। সাধারণত বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে বন্যার পর মানুষের সড়কে চলাচল করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাই দ্রুততম সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, সেতু ও কালভার্ট মেরামত করলে জনদুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হয়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) জেলাভিত্তিক জরিপ প্রতিবেদন মতে, এবার বন্যায় সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলাসহ দেশের ২৩ জেলায় দুই হাজার ৭৪২ দশমিক ১২২ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২১২টি সেতু ও কালভার্ট; যা মেরামতে সরকারের ব্যয় হবে দুই হাজার ৪০৫ কোটি ৮৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।
সব জেলার পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট বিভাগের চার জেলায় দুই হাজার ৪৩১ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে এক হাজার ৪৭৩, সুনামগঞ্জে ৬৩০, হবিগঞ্জে ৯৯ ও মৌলভীবাজারে ৬১ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা এবারের বন্যায় সারা দেশে ক্ষতিগ্রস্ত মোট সড়কের ৮৮ শতাংশ। সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই হাজার ৫৯৬ দশমিক ৮৩ মিটার। সব মিলিয়ে এ বিভাগে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দুই হাজার ১২৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকার বেশি।
দ্বিতীয় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ময়মনসিংহ বিভাগ। এখানকার চার জেলায় ২৬৮ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ময়মনসিংহে ১২৪, নেত্রকোনায় ১০৬, জামালপুরে ৩৩ ও শেরপুরে চার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ চার জেলায় ৩৮টি সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার পরিমাণ তিন হাজার ৯৫৩ মিটার। সব মিলিয়ে এ বিভাগের আর্থিক ক্ষতি ১৯৪ কোটি সাত লাখ টাকা। রংপুর বিভাগের সাত জেলার মধ্যে কুড়িগ্রাম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এখানে প্রায় ২৫ কিলোমিটার সড়ক ও সাতটি সেতু এবং কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দিনাজপুরে তিনটি, পঞ্চগড়ে চারটি সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বিভাগে আর্থিক ক্ষতি পাঁচ কোটি ২৫ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৯ ও ফেনীতে সাত কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ দুই জেলায় ৩১ কোটি ১৮ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ঢাকা বিভাগের গাজীপুরে আর্থিক ক্ষতি দুই কোটি ৭৫ লাখ। আর রাজশাহী বিভাগের দুই জেলার আর্থিক ক্ষতি কোটি টাকা।
এলজিইডির তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, সেতু ও কালভার্ট সংস্কারে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির কাজ চলছে। চলতি মাসের মধ্যে ডিপিপি প্রস্তুত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়ার পরই সংস্কারকাজ শুরু হবে।
অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, সেতু ও কালভার্ট সংস্কারে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতায় জনদুর্ভোগ অবর্ণনীয় হয়ে ওঠে। অথচ সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের উচিত, কিভাবে দ্রুত জনদুর্ভোগ লাঘব হয় সে পদক্ষেপ নেয়া। বাস্তবে তেমন উদ্যোগ দেখা যায় না। বরং নির্দিষ্ট সময়ে সংস্কারকাজ করার নজির নেই বললেই চলে। এবারো সেই লক্ষণ স্পষ্ট। চলতি বর্ষায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জনপদগুলোতে কী পরিমাণ সড়ক, সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; এখন পর্যন্ত শুধু তার প্রাথমিক জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। এর পর প্রকল্প তৈরি করে সংস্কারকাজ হাতে নেয়া হবে। এতে যে বেশ সময় লাগবে তাতে সন্দেহ নেই।
আমরা মনে করি, এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ থেকে এটি স্পষ্ট যে, কোনো কোনো জনপদের সড়ক যোগাযোগ বেশি বেহাল। তাই সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কর্তব্য হবে অগ্রাধিকারভিত্তিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সড়ক, ব্রিজ ও কালভার্ট মেরামত কর্মসূচি হাতে নেয়া। সেসব কর্মসূচি যত দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে মানুষের দুর্ভোগেরও তত দ্রুত অবসান হবে।


আরো সংবাদ



premium cement