২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
লোডশেডিং সমাধান নয়

টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থাপনা নিন

-

‘জ্বালানি নিরাপত্তা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জাতীয় নিরাপত্তা বলতে যা বুঝায় তার অগ্রভাগে থাকে জ্বালানি নিরাপত্তা। সচেতন জাতিগুলো জ্বালানির নিরাপদ প্রবাহ নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকে। দেশে সঠিক জ্বালানি নীতি না থাকলে বৈশ্বিক পরিস্থিতির যেকোনো নেতিবাচক পরিবর্তনে সংশ্লিষ্ট দেশটির ভিত দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। অনেকসময় রাষ্ট্রের সীমানা রক্ষার চেয়েও এটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি এমনই এক সাম্প্রতিক উদাহরণ। বাংলাদেশও তেমন অবস্থায় পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা যে নাজুক সেটি ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। গত সোমবার সরকারের নেয়া সিদ্ধান্ত তেমনই ইঙ্গিত দেয়। বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন নিয়ে আমাদের সন্তুষ্টির অন্ত ছিল না। উন্নয়নের অন্যতম প্রধান খাত ছিল এটি। সরকার নিজে এবার মেনে নিতে বাধ্য হলো যে, আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা টেকসই ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। ডিজেলের সঙ্কটের কারণে বেশ কয়েকটি উৎপাদন কেন্দ্র না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জ্বালানিবিষয়ক এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, খরচ কমাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো হচ্ছে। তবে তিনি জানান, পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটলে উৎপাদন আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।
পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কিছু নতুন কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। দিনে এক থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং করা হবে। এ জন্য বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ একটি সূচি নির্ধারণ করেছে কখন কোথায় বিদ্যুৎ থাকবে না। ওয়েবসাইটে এ তালিকা দেয়া হয়েছে। একসাথে এক বা দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হবে না। দিনের বিভিন্ন সময়ে ভাগ করে দেয়া হবে। জানা যাচ্ছে, মফস্বলে লোডশেডিং ভাগে বেশি পড়বে। এমনিতেই মফস্বলে লোডশেডিং অনেক বেশি। এখন সেখানে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে সেটি স্পষ্ট। বিদ্যুৎ ও জ্বালানিমন্ত্রী সেই আশঙ্কার কথা এরই মধ্যে বলেছেন। সপ্তাহে এক দিন পেট্রল পাম্প বন্ধ রাখা, রাত ৮টার পর দোকান বিপণিবিতান বন্ধ রাখা, সব ধরনের আলোকসজ্জা নিষিদ্ধ এবং অফিসের সময়সূচি সংক্ষিপ্ত করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ছাড়াও বিধিনিষেদের একটা লম্বা ফিরিস্তি সরকার প্রণয়ন করেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সরকার আগাম যে ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে সেটি বাস্তবেও ঘটত। অর্থাৎ লোডশেডিংসহ বিস্তৃত পরিসরে যে অসুবিধা সেটি জনসাধারণকে ভোগ করতেই হবে। তাদের মতে, সরকারের নৈতিক অবস্থান শক্তিশালী নয়। সরকার প্রত্যেকটি ইতিবাচক ঘটনার জন্য নিজেরা পূর্ণ কৃতিত্ব দাবি করে, কিন্তু যখনই কোনো দুরবস্থা জাতির সামনে আসে অমনি জাতিকে সেটি মেনে নেয়ার যুুক্তি প্রদর্শন করে। দুর্বল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার কারণে পণ্যমূল্য বেড়ে গেলে যেমন সরকার বিশ্ববাজারের দোহাই দিয়ে সেটি জাতিকে কবুল করে নিতে বলেছে।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বেশি সুযোগ রয়েছে সরকারি বিভিন্ন অফিস ও তাদের কর্মকর্তাদের বিলাসিতা বন্ধ করে। সাধারণ মানুষ নিজে থেকে এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অপচয় করে না। সরকারি সিদ্ধান্তের লক্ষ্য সাধারণ মানুষ।
আমাদের জ্বালানি খাত যে নাজুক তার প্রমাণ সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্তগুলো। অথচ এই সরকার সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে এ খাতে। এ পর্যন্ত যে খরচ হয়ে গেছে এবং আরো যেসব খরচ এ খাতে হতে চলেছে তার ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে দেশের অর্থনীতি ভবিষ্যতে বড় চাপের মধ্যে পড়বে। কুইক রেন্টাল খাতের অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর ব্যয় করা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, জনগণের নামে এত খরচ করার পরও কেন এই খাতটি এতটা নাজুক হয়ে থাকল। জ্বালানি সঙ্কটের কারণে একটি দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা যেকোনো সময় তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে পারে। আমরা আশা করব, সরকারের বোধোদয় হবে। শ্বেতহস্তী পোষা বাদ দিয়ে সরকার টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলায় আন্তরিক হবে।


আরো সংবাদ



premium cement