নির্বাচন কেমন হবে তা স্পষ্ট হচ্ছে
- ১৯ জুলাই ২০২২, ০০:০০
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল চমকপ্রদ বক্তব্য দিতে পারঙ্গম। গত রোববার একটি রাজনৈতিক দলের সাথে ইসির বৈঠকে তিনি নির্বাচনের সময় তলোয়ারের বিপরীতে রাইফেল নিয়ে মাঠে নামার যে পরামর্শ দিয়েছেন তাতে তার চমক সৃষ্টির প্রবণতা আবারো স্পষ্ট হয়েছে। এরও আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের সময় মাঠ না ছাড়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, রাশিয়ার আক্রমণের মুখে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট যেমন রুখে দাঁড়িয়েছেন তেমন করেই বিরোধী দলগুলোকে মাঠে থাকতে হবে। সেই বক্তব্য সব মহলে সাড়া ফেলেছিল।
কিন্তু তার রোববারের বক্তব্য একই সাথে অগণতান্ত্রিক, বেআইনি এবং উসকানিমূলক বলে মনে হয়। কাজী হাবিবুল আউয়াল কেবল যে দেশের একজন সাবেক শীর্ষ আমলা তা-ই নন, তিনি আইন বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন এবং পেশাগত জীবনের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করেছেন আইনি ক্ষেত্রগুলোতে। বিচারকাজ করেছেন অনেক বছর। সুতরাং আইন কাকে কিভাবে প্রতিরোধের অধিকার দেয় তা তার অজানা নয়। আবার তাকে সরল বা বোকা বললে আমাদের গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই অবজ্ঞা করা হবে। কারণ এই রাষ্ট্রই তাকে শীর্ষ পদে নিয়ে গেছে তার মেধা ও যোগ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে।
তাহলে ব্যাপারটি কী দাঁড়াচ্ছে? তিনি কি না বুঝে বা মুখ ফসকে এমন একটি অগণতান্ত্রিক বেআইনি বক্তব্য দিয়ে ফেলেছেন? আমাদের তা মনে হয় না।
সিইসির পুরো বক্তব্য খুব ভালো করে পড়লে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়। তিনি বলেছেন, ভোটের মাঠের সহিংসতা নির্বাচন কমিশন (ইসি) বন্ধ করতে পারবে না। বলেছেন, সহিংসতা রোধে রাজনৈতিক দলগুলোকে পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমাদের প্রয়াস যতই আন্তরিক হোক, ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।
সিইসির বক্তব্যে তলোয়ারের প্রতিরোধে যারা রাইফেল নিয়ে মাঠে নামবেন তাদের সুরক্ষার কোনো নির্দেশনাও নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হবে, তারা নানা ব্যানারে নামা তলোয়ারধারীদের পক্ষ নেবে না এমন কোনো আশ^াস তিনি দেননি। তবে বলেছেন, সরকার যদি সহায়তা না করে তাহলে নির্বাচনের পরিণতি খুবই ভয়াবহ হতে পারে। এসব বক্তব্য মূলত দায় এড়ানোর একটি আগাম পটভূমি তৈরি করে রাখার চেষ্টা হতে পারে। সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে বলা যাবে, আগেই তো বলেছিলাম, সবার সহযোগিতা ছাড়া কাক্সিক্ষত মানের নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।
দ্বিতীয় আরেকটি বক্তব্য লক্ষ করার মতো। সিইসি বলেছেন, ‘ইভিএম নিয়ে পাঁচ-সাতটি কর্মশালা করার পর আমরা রাজনৈতিক দলের সাথে এবং বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে উন্মুক্ত সভা করেছি। কেউ কোনো ত্রুটি দেখাতে পারেনি।’ বক্তব্যটি অর্থবহ। সরকারি দল চায় ৩০০ আসনেই ইভিএম মেশিনে ভোট গ্রহণ করতে। তাদের আকাক্সক্ষা পূরণের একটি পথ খোলা রাখলেন সিইসি। কতটা আসনে ইভিএম ব্যবহার করলে সব কুল রক্ষা হয়, অর্থাৎ সরকারি দলও মেনে নেয় আবার অন্য কিছু দলও সেটি মেনে নিয়ে নির্বাচনে আসে এমন একটি মাঝপথ বের করতে পারলেই কেল্লাফতে।
তলোয়ার-রাইফেলের ফরমুলাটি সিইসি অবশ্য বিকেলে নিজেই নাকচ করে দিয়েছেন। দুপুরের পর একটি দলের সাথে বৈঠকে সিইসি বলেন, ভোট মানে যুদ্ধ। তবে এই যুদ্ধে ঢাল-তলোয়ার নিয়ে নামার দরকার নেই। এই যুদ্ধে নামতে হবে জনসমর্থন নিয়ে।
নিয়োগ পাওয়ার পর সিইসি তার প্রথম প্রতিক্রিয়ায় মিডিয়াকে বলেছিলেন, নতুন কমিশনের চেষ্টা থাকবে বিএনপির মতো দলকে নির্বাচনে আনার। চেষ্টা থাকবে সবাইকে আস্থায় নেয়ার।
যে ব্যক্তি সকালে এক কথা বিকেলে আরেক কথা বলেন, তার ওপর আস্থা রাখা কতটা যুক্তিযুক্ত? বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল যে ইসির সাথে চলমান বৈঠক বর্জন করছে তার যৌক্তিক কারণ এখানেই নিহিত বলে অনেকে এখন বলছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা