২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
কৃষি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর

প্রয়োজনীয়তা যাচাই করুন

-

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষির উন্নয়নই এ দেশের প্রকৃত উন্নয়ন। এ খাতে সরকার নানাবিধ প্রকল্প ও কর্মসূচি নিয়ে থাকে। এ জন্য দরকার বিপুল পরিমাণ টাকা। এসব প্রকল্প ও কর্মসূচির জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ বা অন্য কারণেও প্রয়োজন হতে পারে বিদেশ সফরের। কিন্তু অনেক কর্মকর্তা কারণে অকারণে সরকারি খরচে বিদেশ ভ্রমণে অতি উৎসাহী। এই মানসিকতা এখন প্রকট হয়ে উঠেছে কৃষি মন্ত্রণালয়ে।
করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর কৃষি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ধুম পড়েছে। এখন চলছে নেদারল্যান্ডস যাওয়ার মাতামাতি। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধের পরিপত্র জারির পরও ফাঁকফোকরে তাদের ভ্রমণ চলছেই। ছোট-বড় প্রায় সব প্রকল্পেই রাখা হয়েছে বিদেশ সফরের সুযোগ। কখনো প্রশিক্ষণের নামে, কখনো মেলা কিংবা আনারস দেখতে, আবার কখনো মসলা চাষ শিখতে বিলাসী ভ্রমণে যাচ্ছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। অপ্রয়োজনেও ভ্রমণে ছুটছেন অনেকে। বিদেশ যেতে কর্মকর্তারা লেগে আছেন তদবিরে। এসব সফরে সরকারি ভাণ্ডার থেকেও খরচ হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি বরাদ্দ না থাকলেও ভ্রমণ থেমে নেই, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টাকায়ও বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেউ কেউ।
নয়া দিগন্তসহ একাধিক পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, নেদারল্যান্ডসে ‘ফ্লোরিয়েড এক্সপো-২০২২’ মেলা উপলক্ষে খামারবাড়িতে চলছে তুমুল আলোচনা। কে নেদারল্যান্ডস যাচ্ছেন, কার নামে বিদেশ সফরের সরকারি আদেশ (জিও) জারি হলো- কর্মকর্তাদের কক্ষে কক্ষে এমন কথাবার্তা। মেলা দেখতে মন্ত্রণালয়, দফতর ও সংস্থা থেকে ১৫০ জনের তালিকা করা হয়। অন্তত ১০০ কর্মকর্তা ঘুরেও এসেছেন। একা নন, কেউ গেছেন স্ত্রী নিয়ে, কারো সফরসঙ্গী ছিলেন স্বামী।
এ দিকে পরীক্ষামূলকভাবে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় এবং পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে শুরু হয়েছে এমডি-২ জাতের আনারস চাষ। গত বছর ডিসেম্বরে ফিলিপাইন থেকে আনা আনারসের চারা বড় হয়েছে। এখন চাষিরা ফলের অপেক্ষায়। কিন্তু এ মুহূর্তে আনারসের চারার ভালোমন্দ ও চাষাবাদ পদ্ধতি দেখতে ফিলিপাইনে রয়েছেন পাঁচ কর্মকর্তা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) ‘কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলাবীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ’ প্রকল্পের (তৃতীয় পর্যায়) মেয়াদ শেষ হয় গত জুনে। মেয়াদ শেষের সাড়ে চার মাস বাকি থাকতে গত ফেব্রুয়ারিতে তৃতীয়বারের মতো ২০ কর্মকর্তা মসলা চাষ শিখতে তুরস্কে যান। এ প্রকল্পের অধীনে এর আগে ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ এই দুই অর্থবছরে ২০ জন করে ৪০ জন চীন ও ভিয়েতনাম সফর করেন।
খবরে প্রকাশ, গত নভেম্বর থেকে চলতি ১৪ জুলাই পর্যন্ত কৃষি মন্ত্রণালয়ে বিদেশ সফরের জন্য ৭৭টি জিও হয়েছে। এই জিওর অনুকূলে ৩৩২ জনের বিদেশ সফরের আদেশ হয়েছে। এর মধ্যে দেশে ডলার সঙ্কট দেখা দেয়ায় গত ১২ মে বিদেশ সফর বন্ধে অর্থ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারির পরও ৩০টি জিও হয়। যার অনুকূলে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি পান ১১৪ জন। সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ীদের নামও রয়েছে এ তালিকায়।
লক্ষণীয়, কিছু জিওতে প্রাইভেট কোম্পানির অর্থায়নে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের কথাও উল্লেখ রয়েছে। তবে কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অর্থে বিদেশ গেলে যারা যাবতীয় খরচ বহন করবে, তারা তা যে ষোলোআনা উসুল করে নেবে এটা সহজেই অনুমেয়।
আমরা মনে করি, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর কতটা প্রাসঙ্গিক ও যৌক্তিক তা খতিয়ে দেখতে হবে। যেহেতু এ মুহূর্তে সারা বিশ্বই সঙ্কটে রয়েছে। অনেক দেশে চলছে অর্থনৈতিক মন্দা। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে অপ্রয়োজনীয় খরচের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। তা না হলে আখেরে পস্তাতে হবে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement