২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ডলার সঙ্কট তীব্র হওয়ার আলামত

বিলাসপণ্য আমদানি স্থগিত করুন

-

বাংলাদেশী টাকার দাম শুধুই কমছে। গত বৃহস্পতিবার সর্বশেষ টাকার মান কমানো হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে টাকার মান ১৯ বার কমানো হলো। নিকট ভবিষ্যতে আরো কমতে পারে। গত শনিবার খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেট) ডলারের দাম ১০১ টাকায় ওঠে। রাজধানীর গুলশান, মতিঝিল, পল্টনের মানি এক্সচেঞ্জে প্রতি ডলার ১০১ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তার পরও পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ করতে পারছে না মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো। চাহিদা অনুযায়ী ডলারের সরবরাহে ঘাটতির কারণে সঙ্কট তীব্র হচ্ছে।
ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার চক্রাকার প্রতিক্রিয়া আছে। ডলার সঙ্কটের সাথে তিনটি বিষয়ের নেতিবাচক প্রভাব আমাদের ওপর সরাসরি পড়ছে। বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতে পড়ছে। সাথে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, সরবরাহ কমে যাওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে রিজার্ভ দ্রুত কমছে।
রিজার্ভ বাড়ানোর দু’টি প্রধান উপায় হলো রফতানি আয় এবং প্রবাসী আয়। রফতানির পরিমাণ আমাদের আমদানি ব্যয়ের চেয়ে কম। আবার প্রবাসী আয়ে ক্রমাগত ঘাটতি হচ্ছে। কারণ, নতুন শ্রমবাজার উদ্ভাবন বা পুরনো বাজার ধরে রাখার ক্ষেত্রে তেমন কোনো সাফল্য দেখা যাচ্ছে না।
রিজার্ভের পরিমাণ এখন চার হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে এসেছে, যা উদ্বেগজনক বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ডলারের অভাবে জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না। দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং স্থায়ী হতে যাচ্ছে। এতে উৎপাদন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, রফতানি কমবে এবং ডলারের জোগান আরো কমে যাবে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে এবং নিচ্ছে। কিন্তু অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ডলার সাশ্রয়ের যে পরামর্শ দিচ্ছেন সরকার সেটি করার ঝুঁকি নিতে পারছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু বিলাসপণ্য আমদানি নিরুৎসাহ করতে ঋণপত্র খোলার সময় নগদ জমার হার বাড়িয়েছে। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের ওপর দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। আমদানিনির্ভর কিছু উন্নয়ন প্রকল্প আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। কিন্তু এসব পদক্ষেপ কার্যত কতটা সুফল দেবে বলা মুশকিল। কারণ, আনারসের চারা দেখতে বিদেশ সফরে গেছেন সরকারি আমলারা এমন খবর আমাদের চোখে পড়ছে এখনো।
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার আভাস এখন স্পষ্ট। ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে বিশ্ব অর্থনীতি এখন মন্দার দ্বারপ্রান্তে। খাদ্যনিরাপত্তা ভেঙে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব সংস্থা। এ মুহূর্তে বিলাসপণ্য আমদানি অন্তত ছয় মাস বা এক বছরের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা সমীচীন বলে মনে হয়। মানুষের ক্ষুধা নিবৃত্তির চেয়ে বিলাসব্যসন জরুরি নয়। কিন্তু সরকারের পক্ষে সে পথে যাওয়া সম্ভব হবে কি না সে নিয়ে সংশয় আছে। কারণটি বোধগম্য। সমাজের প্রভাবশালী, বিত্তবানদের অসন্তোষের কারণ হতে চায় না সরকার।
কিন্তু এর ফল ভালো হতে পারে না। দেশের বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোও কঠিন হবে। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাসের মধ্যে আমদানি ব্যয় ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। বিপরীতে রফতানি আয় বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। অন্য দিকে, গত অর্থবছরে প্রবাসী আয় এসেছে দুই হাজার ১০৩ কোটি ১৬ লাখ (২১.০৩ বিলিয়ন) ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ১৫.১২ শতাংশ কম।
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলার সঙ্কটের সমাধান করতে না পারলে বিপদে পড়বে অর্থনীতি। সঙ্কট মোকাবেলায় দ্রুত ডলারের সরবরাহ বাড়ানোর চেয়েও দ্রুত চাহিদা ম্যানেজ করার পরামর্শ দেন তারা। স্বল্প মেয়াদে ডলারের চাহিদা কমানো এর একটি বিকল্প। সেটি করতে হবে আমদানি চাহিদা কমানোর মাধ্যমে। এ জন্য অভ্যন্তরীণ চাহিদা আগামী এক বছরের জন্য হলেও কমাতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement