২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
রমেকে টাকা না দিলে লাশ পড়ে থাকে

ঈদেও কেন বন্ধ হয়নি ট্রলিবাণিজ্য?

-

সহযোগী একটি জাতীয় দৈনিকের শিরোনাম : ‘রমেকে ট্রলিবাণিজ্য : টাকা না দিলে পড়ে থাকে লাশ’। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মচারীদের দুর্নীতি ও অমানবিকতার কথাই এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
জানা গেছে, এ হাসপাতালে ট্রলিতে রোগী আনতে ও নিতে এবার ঈদুল আজহার সময় টাকা দ্বিগুণ আদায় করা হয়েছে। রোগীদের স্বজনরা পণবন্দী হয়ে পড়েছেন কর্মচারীদের হাতে। এমনকি চিকিৎসাধীন থেকে হাসপাতালে মারা যাওয়াদের লাশ ট্রলিতে করে নিচতলায় নামিয়ে আনতে বেআইনিভাবে ঘুষ নেয়া হচ্ছে ২০০ টাকা করে। কারণ টাকা ছাড়া লাশ পড়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এসব দেখার যেন কেউ নেই। হাসপাতাল পরিচালক থেকে শুরু করে সবাই জিম্মি হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ।
ঈদের পরদিন সরেজমিন প্রথমেই দেখা গেছে, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ড্রেস পরিহিতা একজন মহিলা ট্রলিতে রোগী নামানো ও অ্যাম্বুলেন্সে তাকে তোলার জন্য ৪০০ টাকা গুনে নিচ্ছেন। এই টাকা পেয়েই দুই মহিলা কর্মচারী তাকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিলেন। তাদের নাম জানতে চাইতেই তারা সাংবাদিককে দেখে নেয়ার হুমকি দেন এবং ‘সহযোগী’দের নাম ধরে উচ্চৈঃস্বরে চিৎকার করতে থাকেন।
জানা গেছে, বৃহত্তর রংপুরের গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার এক গ্রামের বৃদ্ধ রোগী এখলাসুর রহমান স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসক তাকে সিটি স্ক্যান করাতে বললেও তা করাতে হয় হাসপাতালের বাইরে। কেননা, মেডিক্যাল কলেজের সিটি স্ক্যান মেশিন আড়াই মাস ধরে বিকল। তাই বাধ্য হয়েই সিটি স্ক্যান করাতে প্রাইভেট হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে নিয়ে যেতে হয় রোগীকে। বৃদ্ধ রোগী এখলাসের জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে আনা হয়েছিল। এতে তোলার জন্য এই রোগীকে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে ট্রলিতে তুলে লিফটে দু’জন নারী কর্মচারী নিচে আনেন। কিন্তু তারা অ্যাম্বুলেন্সে তাকে তোলার জন্য তাদের ‘টাকা’ দিতে হবে, বলেছেন। অথচ এটি সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আদায় করা হচ্ছে।
তবুও সে রোগীর আত্মীয়রা ৩০০ টাকা দিতে বাধ্য হন। কিন্তু কর্মচারীরা সাফ জানিয়ে দেন, ‘৪০০ টাকার কমে হবে না কিছুতেই। পুরো ৪০০ টাকা পেলেই রোগী ট্রলি থেকে অ্যাম্বুলেন্সে যেতে পারবেন।’ ফলে উল্লিখিত টাকা দেয়ার পর তারা তা গুনে নেন এবং রোগীকে তখন অ্যাম্বুলেন্সে যেতে দেয়া হয়। এ বিষয়ে নারী কর্মচারীদের কথা হলোÑ ‘আমরা অনিয়মিত চাকরিতে মাত্র ছয় হাজার টাকা বেতন পাই। এমনিতে নিচে নামাতে রোগীপ্রতি ১০০ টাকা করে নেয়া হয়। ঈদের সময় তা মাত্র ডাবল করা হয়েছে।’ পরদিনও একই দৃশ্য চোখে পড়ে। এমনকি জরুরি বিভাগেও একই রকম ‘ট্রলিবাণিজ্য’ চালানো হচ্ছে। ঈদের ছুটিতে দেখা গেছে, হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী আসার সাথে সাথেই রোগীপ্রতি ২০০ টাকা করে আদায়পূর্বক দু’জন কর্মচারী ট্রলি করে তাদের ওয়ার্ডে নিয়ে যান। তবে রংপুর মেডিক্যালের পরিচালক কোনো কথা বলতে রাজি হননি এ ব্যাপারে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে বলে আমরা আশা করছি। না হয় জনভোগান্তির পরিসীমা থাকবে না।


আরো সংবাদ



premium cement