প্রতিবেশীদের জন্য রয়েছে শিক্ষা
- ১৬ জুলাই ২০২২, ০০:১৮
রাষ্ট্রে পরিবারতন্ত্র জেঁকে বসলে তাকে কিভাবে গণতন্ত্রের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হয় শ্রীলঙ্কার জনগণ বিশ্ববাসীকে সে পথই দেখাচ্ছে। বেশ কয়েক মাস ধরে রাজপথে অব্যাহত সংগ্রামের মাধ্যমে তারা সফলভাবে পরিবারতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটাতে পেরেছে। দেশটিতে শৃঙ্খলা ও গণতান্ত্রিক শাসন ফিরিয়ে আনতে হলে এখন রাজনৈতিক নেতাদের প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে হবে।
পৃথিবীর বহু দেশের মানুষ এখন অধিকারবঞ্চিত। শ্রীলঙ্কায় জনগণের এ বিজয় বিশ্বব্যাপী ক্রমেই বেড়ে চলা কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী সরকারের জাঁতাকলে পিষ্ট সেই বঞ্চিত মানুষের জন্য একটি আশার আলো। অন্য দিকে যারা মনে করেন, রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সব প্রতিষ্ঠান সমুদয় কব্জা করে আজীবন জনগণের ওপর স্টিমরোলার চালিয়ে যাবেন, এই বিজয় তাদের মধ্যে শঙ্কার বীজ বপন করবে।
বিগত এক দশকে শ্রীলঙ্কার শাসনব্যবস্থার লক্ষণীয় প্রবণতা ছিল পারিবারিকীকরণ। রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব পদ রাজাপাকসে পরিবার নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। রাষ্ট্রের প্রধান দু’টি পদ প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর আসনে এই পরিবারের গোতাবায়া রাজাপাকসে ও মাহিন্দা রাজাপাকসে আসীন হন। একটি নির্বাচনী ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সাংবিধানিকভাবে তারা পদাধিকারী হলেও মূলত ক্ষমতার বলয়ে থাকায় এটি সম্ভব হয়েছে। শুধু তাই নয়, মন্ত্রিপরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সব সদস্য ছিল এই পরিবারের সদস্য। প্রশাসন পরিচালনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর নির্বাহী পদগুলোতেও ছিল একান্ত অনুগতরা। এমন শাসনব্যবস্থা বিশ্বের বহু দেশে প্রাচীনকাল থেকেই দেখা গেছে। এ ধরনের পরিবারতন্ত্রে ক্ষমতাসীনরা জনগণকে সেবা দেয়ার পরিবর্তে শাসন ও শোষণ করে থাকে। অন্য দিকে, প্রতিবাদী সব কণ্ঠস্বর নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয়। রাজাপাকসে পরিবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না।
প্রাচীনকালে বিচ্ছিন্ন বিশ্বে এমন শাসন দীর্ঘ হওয়ার সুযোগ ছিল। এখন বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনা একটি গ্রামের মতো। কোনো গ্রামের মধ্যে একটি বাড়িতে ডাকাত হানা দিলে প্রতিবেশীরা মাথা ঘামাতে পারে। এখন দেশের জনগণ সজাগ হলে ডাকাতদের পালিয়ে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে।
প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে গণ আন্দোলনের মুখে মে মাসের শুরুতে পদত্যাগ করেন। জনরোষ থেকে বাঁচতে নিজের বাসভবন থেকে হেলিকপ্টারে করে সপরিবারে অজ্ঞাত স্থানে আত্মগোপন করেন। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া মনে করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগে জনরোষ কমবে। বাস্তবে জনগণ চাচ্ছিল এ পরিবারের সবাই ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াক। তারা হাল ছেড়ে দেয়নি। শেষ পর্যন্ত গোতাবায়াও পালাতে বাধ্য হলেন। মূলত জনরোষের বিস্ফোরণ ঘটলে স্বৈরাচারীদের পালানোর পথ থাকে না। কেউ তাদের আশ্রয়ও দিতে চায় না। রাজাপাকসে পরিবারের ধামাধরা প্রশাসন ও বাহিনীগুলোও তাদের আশ্রয় দেয়নি। পালানোর জন্য গোতাবায়া প্রথমে পরিবারসহ বিমানবন্দরে গিয়ে ফিরে আসেন। ইমিগ্রেশনের কেউ তার পরিবারের সদস্যদের কাগজপত্রে সই ও সিল দিতে রাজি হয়নি। নিরুপায় হয়ে তিনি মালদ্বীপে পালিয়ে যান। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে রয়েছেন। রাজাপাকসের বিশাল পরিবারের প্রত্যেকের জীবন এখন অনিশ্চিত। ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত প্রচুর। কিন্তু স্বৈরাচারীরা তা থেকে কখনো শিক্ষা নেয় না।
শ্রীলঙ্কার নিষ্পেষিত জনগণ চরম অর্থনৈতিক দুরবস্থায় পড়েই ঐক্যবদ্ধভাবে বিক্ষোভ করতে পেরেছে। শাসক রাজাপাকসে পরিবার বেশ কয়েকটি আনাড়ি সিদ্ধান্ত জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিল। বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ছাড়াই মুদ্রা ছাপিয়েছে। যৌক্তিক চিন্তাভাবনা ছাড়া দেশে রাসায়নিক সার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সাথে ছিল পছন্দের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন। সেখান থেকে অবাধ লুটপাট। একপর্যায়ে জ্বালানির মজুদ শেষ হয়ে যায়, বিদ্যুৎ সরবরাহ বহু জায়গায় বন্ধ হয়, সরবরাহ বন্ধ হয়ে ওষুধশূন্য হয়ে পড়ে দেশ। খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে অবিশ্বাস্য পর্যায়ে পৌঁছেছে। অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়ার বহু আগে নানা লক্ষণ প্রকাশিত হয়েছিল। কর্তৃত্ববাদী শাসকরা সাধারণত কোনো কিছুর তোয়াক্কা করে না। ক্ষমতাসীনরা সময়মতো সাড়া দিলে লঙ্কানদের এমন ভয়াবহ দুর্দশায় পড়তে হতো না।
আমরা মনে করি, এ গণ অভ্যুত্থান থেকে প্রতিটি দেশের জন্য শিক্ষণীয় রয়েছে। তাতে উপকার হবে আশা করা যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা