চামড়ার বাজারে এবারো ধস
- ১৪ জুলাই ২০২২, ০০:০০
চলতি বছরও কোরবানির পশুর চামড়া সরকারনির্ধারিত মূল্য দূরের কথা শহরে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হলেও গ্রামগঞ্জে ক্রেতার দেখা মিলেনি। ফলে অনেকে এতিমখানায় নিজ খরচে চামড়া লবণজাত করতে পৌঁছে দিয়ে কোনোমতে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। এবারো কাঁচা চামড়ার আড়তদার চক্রের কারসাজিতে পানির দরে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। গণমাধ্যমের খবরে এমনই জানা যাচ্ছে।
ঈদুল আজহার আগে সরকার কোরবানির পশুর চামড়ার যে দর নির্ধারণ করে দিয়েছিল ওই দরে চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না বিক্রেতারা। আগের বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় নামমাত্র মূল্যে চামড়া বিক্রি হচ্ছে। এবার সরকারনির্ধারিত দাম অনুযায়ী, ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪৭-৫২ টাকা। ঢাকার বাইরে ৪০-৪৪ টাকা করা হয়। খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ১৮-২০ টাকা, বকরির প্রতি বর্গফুট ১২-১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে দাম না থাকায় চামড়া নিয়ে আগ্রহ ছিল না কারো। প্রকৃতপক্ষে গরু আর মহিষের চামড়া কিছুটা বিক্রি হলেও ছাগলের চামড়া এক রকম বিনামূল্যে সংগ্রহ করেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, ২০১৪ সালে বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া বেচাকেনা হয়েছিল। তখন ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৭০-৭৫ টাকা। ঢাকার বাইরে দর ছিল ৬০-৬৫ টাকা। তখন শেষ পর্যন্ত কোরবানির ঈদের দিন পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তায় লবণবিহীন প্রতি বর্গফুট চামড়া বিক্রি হয় ৯০-১০০ টাকায়। এর পরের আট বছর কোরবানির পশুর চামড়ার দাম দফায় দফায় কমেছে। নির্ধারিত দামে আর বেচাকেনা হয়নি। ২০১৯ সালে চামড়ার দরে রীতিমতো বিপর্যয় ঘটে। ওই বছর দাম না পেয়ে দেশের নানা অঞ্চলে চামড়া ফেলে দেয়া এবং মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনা ঘটে। তখন বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছিল। গত দুই বছর বিপর্যয় না হলেও কোরবানির চামড়া খুব কম দামে বিক্রি হয়। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, এবার রাজধানীর বাইরে ট্যানারি ব্যবসায়ীদের লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়া কেনার কথা ৪০-৪৪ টাকায়। ওই হিসাবে একটি গরুর চামড়ার দাম ন্যূনতম সাড়ে ৬০০-১০০০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লবণযুক্ত গরুর চামড়া কেনা হয় ২০০ হতে সাড়ে ৩০০ টাকায়। কিছু আড়তদার ৭০০ টাকায় গরুর চামড়া কিনেছেন। অথচ এক দশক আগেও ছোট আকৃতির গরুর চামড়ার দাম ছিল ১৪০০-১৮০০ টাকা। মাঝারি আকারের চামড়ার দাম ১৮০০-২২০০ টাকা। বড় সাইজের চামড়ার দাম ২২০০-২৮০০ টাকা। এখন একই চামড়া আকৃতিভেদে দাম ১০০-৪০০ টাকা।
গত তিন বছরে লোকসানের তিক্ত অভিজ্ঞতায় গ্রামাঞ্চলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চামড়ার কোনো ক্রেতা ছিল না এবার। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কোরবানির চামড়া নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করেও বিক্রি করতে গিয়ে আড়তদারদের কারসাজিতে মাথায় হাত পড়ছে তাদের। ২০১৯ সালে বিপুলসংখ্যক চামড়া রাস্তায় নষ্ট হয়। এর পরের বছরও একই দৃশ্য দেখা যায়। গত বছরও অনেক চামড়া অবিক্রীত থেকে যায়। যদিও ক্রেতা না থাকায় নিজ খরচে লবণজাত করতে বিভিন্ন এতিমখানায় পৌঁছে দেয়ায় চামড়া তেমন নষ্ট হয়নি। তবে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হয়। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি।
চলতি বছর প্রভাবশালী চক্রের কারসাজিতে কোরবানির পশুর চামড়া ব্যবসার সর্বনাশ হয়েছে। সরকারিভাবে চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হলেও নির্ধারিত দাম কার্যকর হলো কি না তদারকি না থাকায় প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। অন্য দিকে গরিব মানুষ এবং দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলো বঞ্চিত হচ্ছে প্রত্যাশিত আয় থেকে। তবে এ কথা ঠিক যে, আইএসও এবং এলডব্লিউজি কমপ্লায়েন্ট সার্টিফিকেট না পাওয়ায় ইউরোপের দেশে দেশে চামড়া আর চামড়াজাত পণ্য রফতানি তেমন হচ্ছে না। কেউ কেউ চীন, তাইওয়ান, কোরিয়া ও ইতালিতে কিছু রফতানি করতে পারলেও প্রত্যাশিত দাম মিলছে না। বাস্তবে আন্তর্জাতিক এ দু’টি সংস্থার স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত চামড়া শিল্পে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা আসার সম্ভাবনা খুবই কম। সে কারণে চামড়ার প্রকৃত মূল্য নিশ্চিত করাও সম্ভব হবে না।
আমরা মনে করি, বিশ্বের দেশে দেশে আমাদের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার পেতে সাভারে যে শিল্পনগরী, সেখানে পুরোপুরি কমপ্লায়েন্ট করা একান্তভাবে জরুরি হয়ে পড়েছে। এ উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। একইসাথে কোরবানির সময় চামড়ার বাজার কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে যাতে সরকার নির্ধারিত দাম পান প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা। তবেই সম্ভব হবে চামড়ার বাজার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা