২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
গ্যাস সঙ্কট ও লোডশেডিংয়ে বাড়ছে ভোগান্তি

জ্বালানি নীতি পর্যালোচনা করুন

-

সারা দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমেছে। প্রায়ই লোডশেডিং করতে হচ্ছে। উৎপাদন কম হওয়ায় খোদ রাজধানীতে দিনে-রাতে চার থেকে পাঁচবার লোডশেডিং করা হচ্ছে। সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে দিনে লোডশেডিং হচ্ছে ১০ বারের বেশি। আর এ অবস্থা দেখা দিয়েছে মূলত গ্যাস সরবরাহে ঘাটতির কারণে। পত্রিকান্তরের রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, গত পক্ষকালের মধ্যে গ্যাসের সরবরাহ কমেছে ৩৫ কোটি ঘনফুট। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে দুই হাজার মেগাওয়াট।
গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় প্রতিদিন নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে রাজধানীবাসী। বেশির ভাগ সময় চুলা জ্বলছে না বাসাবাড়িতে। অনেক এলাকায় বেলা ১১টার পর চাপ কমে যাচ্ছে। বিকেলে স্বাভাবিক হচ্ছে। আবার কিছু এলাকায় ভোর থেকেই গ্যাসের চাপ থাকে না। কর্মজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের অনেককে সকালে বাসিমুখে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে হচ্ছে।
এই জ্বালানি পরিস্থিতি সবচেয়ে আশঙ্কার কারণ হয়েছে শিল্প-কারখানার জন্য। ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও ময়মনসিংহ এলাকার বিপুলসংখ্যক পোশাকশিল্প ও অন্যান্য কল-কারখানায় গ্যাসের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক কারখানা সময়মতো উৎপাদন শেষ করতে না পারলে পণ্য পাঠানোর সময়সীমা রক্ষা করতে পারবে না- এমন আশঙ্কা করছে। যথাসময়ে শিপমেন্ট ধরতে না পারলে শুধু যে রফতানির আদেশ বাতিল হবে তা-ই নয়, ভবিষ্যতে ক্রেতাদেরও মুখ ফিরিয়ে নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কিন্তু এ গ্যাস সঙ্কট হঠাৎ করে হয়েছে এমন নয়। সরকারের জ্বালানি নীতিই এর কারণ। অভ্যন্তরীণ গ্যাস আহরণের সুযোগ তৈরির পরিবর্তে সরকার এলএনজি আমদানি করে গ্যাসের চাহিদা পূরণের নীতি গ্রহণ করেছে। এ জন্য গত এক যুগে গ্যাস অনুসন্ধানের তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। দেশী বা বিদেশী কোনো প্রতিষ্ঠানকেই এ ক্ষেত্রে নিয়োগ করা হয়নি। এমনকি বিদ্যমান গ্যাসকূপেরও অনেকগুলোতে উত্তোলনের পরিমাণ কমে গেছে। সামান্য সংস্কার ইত্যাদি কাজ করা হলে যেখানে উত্তোলন বাড়ানো সম্ভব সেখানেও সেই কাজটি করা হয়নি। ফলে সঙ্কট ধীরে ধীরে ঘনীভূত হয়েছে।
এলএনজির ওপর নির্ভরতার অনেক সুবিধা। গ্যাস অনুসন্ধান ও আহরণে যে বিপুল প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, যে মহা ঝকমারি পোহাতে হয়, এলএনজি আমদানিতে তার কিছুই করতে হয় না। নগদ টাকা দিয়ে আমদানির সহজ প্রক্রিয়ায় সেটি আনা যায়। লেনদেনের মাঝ থেকে সংশ্লিষ্টদের পকেট ভারী হওয়ার কিছু আশঙ্কা থাকে। কিন্তু সম্প্রতি বিশ^বাজারে এলএনজির দাম বেড়ে গেছে। যে এলএনজি আমদানি করা হতো ২৫ ডলারে, তার দাম এখন বেড়ে হয়েছে ৪০ ডলার। আর ডলারের রিজার্ভ ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। সামনে আছে শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা। ফলে সরকার এখন আর চড়া দামে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার সাহস করছে না। সমস্যাটা সম্ভবত এখানেই।
এলএনজি আমদানি করে দেশের পুরো বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প-কারখানা চালু রাখার চিন্তা কতটা বাস্তবসম্মত আমাদের জানা নেই। তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এটি কখনো সমর্থন করেননি। তারা সবার আগে দেশে গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর অগ্রাধিকার দেন। আমরাও সে নীতি গ্রহণই যুক্তিযুক্ত মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement