সুযোগ নেয়ার ফন্দি ছাড়তে হবে
- ০২ জুলাই ২০২২, ০০:০০, আপডেট: ০১ জুলাই ২০২২, ২১:০০
পুলিশের এন্টি-টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) এক গবেষণায় জঙ্গিবাদ নিয়ে নতুন ধরনের তথ্য মিলছে। গণমাধ্যম ও সরকারের ব্যাপক প্রচারণার সাথে বাস্তবতার মিল খুব একটা নেই। আমেরিকার নেতৃত্বে পরিচালিত সন্ত্রাসবিরোধী অনন্ত যুদ্ধের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে এ নিয়ে সরকারের কঠোর অবস্থান দেখা গেছে। সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর পরিচালিত অভিযানগুলো নিয়ে ধাঁধা ও রহস্যের জন্ম হয়েছে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সরকার ইস্যুটিকে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনে ব্যবহার করেছে। ফলে আমাদের বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে দেশের গণতন্ত্র ধারাবাহিকভাবে দুর্বল হয়েছে। এটিইউর প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যাবে, জনমনে সঞ্চারিত জঙ্গিবাদবিষয়ক ধারণার সাথে বাস্তবতার মিল নেই।
এটিইউ ২০০১-২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে আইনের আওতায় আসা সন্দেহভাজন এক হাজার ২১৭ জন জঙ্গির ওপর গবেষণা চালায়। তাতে দেখা যাচ্ছে, এদের ৫৮ দশমিক ৩ শতাংশ জেএমবি, ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ নব্য জেএমবি, ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ হিজবুত তাহরীর, ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও বাকি ১৬ দশমিক ৩২ শতাংশ অন্যান্য সংগঠনের সদস্য। উগ্র মতাদর্শের অনুসারী এসব দল কখনো বাংলাদেশে প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালায়নি। এদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের স্পষ্ট কোনো ধারণাও নেই। কিভাবে গোপনে দেশে কার্যক্রম বিস্তার করে তা নিয়েও রহস্যের জট খুলতে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ডের বদনাম এসেছে বৃহত্তর সমাজের ঘাড়ে। প্রধানত দেশের সব ইসলামী দলকে এ নিয়ে দোষারোপ করা হয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাজনৈতিক দল এমন কী ইসলামী কোনো সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে উগ্রবাদীদের সম্পর্ক রয়েছে এমনটা গবেষণায় দেখা যাচ্ছে না।
গবেষণার তথ্যমতে, জঙ্গিদের ৬৯ শতাংশ সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত। মাদরাসা শিক্ষা থেকে পাওয়া গেল মাত্র ১৭ শতাংশ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জঙ্গিবাদ নিয়ে ঘোরতর প্রচারণায় দেশে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা এবং এর সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। জাতীয়ভাবে এমন আলোচনা চলছিল যে, এ জন্য মাদরাসা শিক্ষা দায়ী, ধর্মের অনুশীলনের একটি সম্পর্ক জুড়ে দেয়া হয়। ২০১৬ সালে হোলে আর্টিজানে ভয়ঙ্কর হামলার পর হুঁশ ফেরে আমাদের। ওই হামলায় জড়িতদের কেউ মাদরাসাপড়–য়া ছিল না। ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যান, দেশে কওমি মাদরাসার ছাত্রসংখ্যা ১৪ লাখ। এ ছাড়া সরকার পরিচালিত মাদরাসার ছাত্রসংখ্যা মিলিয়ে দেশে এক-তৃতীয়াংশের বেশি মাদরাসা শিক্ষার্থী। সাধারণ ছাত্রদের তুলনায় মাদরাসাপড়–য়ারা জঙ্গিবাদের সাথে অনেক কম সম্পৃক্ত। এ ছাড়া আরেকটি কথাও জোরালোভাবে বলার চেষ্টা করা হয়েছে, দারিদ্র্যের কারণে তরুণরা জঙ্গিবাদে যুক্ত হচ্ছে। অথচ গবেষণার তথ্য, জঙ্গিদের ৪৫ শতাংশ নিম্নবিত্তের। বাস্তবে বাংলাদেশে যে দারিদ্র্য বিরাজ করছে; তাতে নিম্নবিত্তের হার এর চেয়ে বেশি হওয়ার কথা। তাহলে দারিদ্র্যও আলাদা বাস্তবতা হিসেবে কাজ করেনি। মূলত জঙ্গিবাদবিষয়ক ধারণাকে ভুলপথে পরিচালিত করা হয়েছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে।
এটিইউর গবেষণায় জঙ্গিবাদসংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত আমাদের ধারণাগুলো ভুল প্রমাণিত করছে। এ বিষয়ক কার্যক্রম যে সঠিকপথে পরিচালিত হয়নি; এখন বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। থিংকট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিসের জঙ্গিবাদ-বিষয়ক সূচকে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছি আমরা। আমাদের অবস্থান যেখানে ৪০, সেখানে উল্লিখিত দেশ দু’টি ১২ ও ১০ অবস্থানে। জঙ্গিবাদ নামে আমরা যেভাবে বাড়তি প্রচারণা চালিয়েছি আসলে তা ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়েছে। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে চাপে রাখা হয়েছে এ প্রচারণার মাধ্যমে। বহু সাধারণ মানুষ এর ভুক্তভোগী। রাজনৈতিক কর্মসূচিকেও জঙ্গিবাদ দমনের নামে ভণ্ডুল করা হয়েছে। দেশের বৃহৎ দল বিএনপিকেও এর শিকার হতে হয়। তাই জঙ্গিবাদের নামে ধাঁধা বা রহস্য বাদ দিয়ে ধর্মীয় উগ্রবাদ দমনে সরকারকে বাস্তবমুখী অবস্থান নিতে হবে। এ নিয়ে মতলবি প্রচারণা ও রাজনৈতিক সুযোগ গ্রহণের ফন্দি ছাড়তে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা