পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নিন
- ২৮ জুন ২০২২, ০০:০০
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়া সিলেটের ক্ষয়ক্ষতির শেষ নেই। বাড়িঘর, ফসল, প্রাণিসম্পদ সব কিছুরই ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি নামার সাথে সাথে এখন সর্বত্র দৃশ্যমান হচ্ছে ধ্বংসের চিত্র। সিলেট শহর, ১৩টি উপজেলা ও পাঁচটি পৌরসভাসহ মোট ৯৯টি ইউনিয়নের চার লাখ ১৬ হাজার ৮১৯টি পরিবারের ২১ লাখ ৮৭ হাজার ২৩২ সদস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২২ হাজার ৪৫০টি ঘরবাড়ি, ২৮ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
ত্রাণের জন্য হাপিত্যেশ করছেন লাখো মানুষ। ত্রাণ মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দিয়েছে এক হাজার ৪১২ টন চাল, ১৩ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার ও দুই কোটি ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ বানভাসিরা মাথাপিছু ৬৪৫ গ্রাম চাল বরাদ্দ পেয়েছেন। অন্য দিকে একেকজন বানভাসির বিপরীতে নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১০ টাকার কম। বরাদ্দ এতই কম যে, বিতরণ করাই সমস্যা। পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, সিলেটে সরকারি ত্রাণতৎপরতা কেমন চলছে। কেউ কেউ এটিকে চিহ্নিত করছেন, দুর্গত ও বিপন্ন মানুষের সাথে উপহাস হিসেবে।
সচেতন সিলেটবাসী মনে করেন, স্থানীয় প্রশাসনের উচিত দ্রুত, কার্যকর ও সমন্বিত ত্রাণতৎপরতা চালিয়ে যাওয়া। অনেক বেসরকারি সংস্থা, সংগঠন কিংবা ব্যক্তি সরাসরি ত্রাণতৎপরতা চালাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে কোনো সমন্বয় নেই। সমন্বয় করা গেলে ভালো হতো। কারণ বিভাগের ৮০ শতাংশেরও বেশি এলাকা এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। কেবল সিলেটের সুরমা অঞ্চল ঘেরা বিভিন্ন নদীর পানি কিছুটা কমেছে। ফলে সিলেট নগর ও আশপাশের এলাকায় পানি কিছুটা নেমেছে। অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। তবে এখন রাস্তাঘাটে জমে থাকা বন্যার ময়লা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। বন্যার পর জনস্বাস্থ্য হুমকির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
বন্যাকবলিত এলাকায় বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে নিত্যপণ্য ও সবজির দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষ বিপাকে পড়েছে। আয়রোজগার না থাকা মানুষ দ্রব্যমূল্যের চাপে দিশেহারা। কিন্তু তা রোধে কোনো তদারকি নেই। পাশাপাশি বন্যার পর পুনর্বাসনের পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে। বন্যায় শুধু ব্যক্তিগত সম্পদের ক্ষতি হয়েছে এমন নয়; স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, অবকাঠামোসহ সব কিছুরই ক্ষতি হয়েছে। বন্যার ভয়াবহতা বোঝা যাচ্ছে সড়কগুলোর ক্ষতচিহ্ন দেখে। পানির চাপ এতটাই প্রবল ছিল যে, ঘূর্ণিঝড়ে গাছ-ঘরবাড়ি যেমন দুমড়েমুচড়ে যায়, সড়কগুলোর অবস্থা ঠিক সেরকম হয়ে গেছে।
স্বাস্থ্য খাতেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে নজিরবিহীন। ওসমানী মেডিক্যালের জেনারেটর জলমগ্ন হওয়ায় হাসপাতালের বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এমআরআই, সিটিস্ক্যান ও রেডিও থেরাপি মেশিনে পানি ঢুকে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে এসব সেবা। শুধু ওসমানী হাসপাতালই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভাগের অনেক সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিক। ফলে বিভাগজুড়ে স্বাস্থ্যসেবা বিঘিœত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে, সিলেট বিভাগের মোট ৪০টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে ২৪টি বন্যাকবলিত হয়। ৮৫টি ইউনিয়ন সাব-সেন্টারের মধ্যে ৩১টিতে পানি ঢোকে।
সুনামগঞ্জে ২০ শয্যার দু’টি হাসপাতাল নিমজ্জিত হয়। এ ছাড়াও ৯২৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ৪১৪টি ক্লিনিক তলিয়ে যায়। সিলেটের তিনটি উপজেলা- জৈন্তাপুর, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ ছাড়াও অন্য ১০টি উপজেলার সব স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ জলমগ্ন ছিল। কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় ১০ ফুট পানি ছিল। স্র্রোতের কারণে আসবাবপত্রও ভেসে গেছে কিছু প্রতিষ্ঠানের।
সব মিলিয়ে সিলেটের জন্য বন্যা-উত্তর সমন্বিত পুনর্বাসন কার্যক্রম এখনই শুরু করা জরুরি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা