আন্তরিক প্রয়াস দরকার
- ২৭ জুন ২০২২, ০১:৫৮
পুঁজিবাজারে অস্থিরতা কাটছে না। নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর গত দুই সপ্তাহ ধরেই দরপতনের ধারায় রয়েছে এ বাজার। দুই সপ্তাহে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে আট হাজার কোটি টাকার বেশি। আর গত এক সপ্তাহে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের পাশাপাশি কমেছে মূল্যসূচক। ডিএসইর বাজার মূলধন প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমেছে।
পুঁজিবাজারে দরপতনের মুখে গত মার্চে জরুরি ভিত্তিতে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। দরপতন ঠেকাতে শেয়ারের মূল্য পতনের নতুন সীমা নির্ধারণ করে দেয়। সীমা অনুযায়ী, কোনো শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ২ শতাংশ কমানো যাবে এবং বাড়ানো যাবে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ও বিশ্লেষকরা তখনই বলেছিলেন, এসব পদক্ষেপে স্থায়ী সমাধান হবে না। হয়ওনি।
বিশেষজ্ঞরা সবসময়ই সমস্যার মূল কারণ দূর করার তাগিদ দিয়েছেন। সমস্যাগুলো চিহ্নিতও করেছেন তারা। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা একটি কারণ। ২০১৩ সালে বাজারে অস্বাভাবিক দরপতন হলে তখন থেকে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগকারীদের ঋণ দিয়ে আসছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করছে। লাভ কমার আভাস পেলেই তারা তাদের শেয়ার বিক্রি করে দেয়। এটিও পুঁজিবাজারে সঙ্কটের অন্যতম কারণ। কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ সমস্যার আরেক কারণ। এসব বিনিয়োগকারী কোনো রকম ঝুঁকি নিতে চান না। বাজারে কোনো কারণে শেয়ারের দাম কমলেই, এমনকি গুজব শুনেও নিজের শেয়ার ছেড়ে দেন। ফলে বাজার অস্থির হয়। বিনিয়োগকারীদের স্বল্প সময়ে লাভ পাওয়ার মানসিকতাও একটি বড় কারণ। বিনিয়োগের সুফল পেতে যে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তাভাবনা থাকা দরকার তা অনেকেরই নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিনিয়োগ করতে গেলে ঝুঁকির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। লাভ-ক্ষতি মিলিয়েই ব্যবসায়। কিন্তু বাজারে দরপতন হলে যে ধরনের ঝুঁঁকি নিতে হতে পারে তা অনেকে বিবেচনা করেন না। তারা শুধু লাভ চান।
পুঁজিবাজারে কিছু লোকের কারসাজির অভিযোগ আছে বহু বছর ধরে। তবে গত এক যুগে দেখা গেছে, ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে দু’টি ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে। হাজার হাজার বিনিয়োগকারী পথে বসেন। এসব ঘটনার পেছনে বিশেষ মহলের কারসাজি ছিল বলে সবারই বিশ^াস। ঘটনায় তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ১৫টি মামলা করা হয়। কিন্তু মামলাগুলোর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখনো হয়নি। শুধু একটি মামলায় ট্রাইব্যুনাল দু’জনকে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। ২০১০ সালের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, একটি মহলের কারসাজির কারণেই বিপর্যয় ঘটেছে। কিন্তু সরকার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। ওই ঘটনায় যাদের নামে অভিযোগ উঠেছিল তাদের সবাই এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। কারো বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি।
আমরা মনে করি, পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় সমস্যা সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার অভাব। এ অভাব স্পষ্ট হয় যখন তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ না করে গোপন রাখা হয়। কারসাজির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পরিবর্তে তাদের রক্ষা করার চেষ্টাই মূল সমস্যা। প্রভাবশালী ওই বিশেষ মহল সবসময়ই সক্রিয় আছে এবং গুজব ছড়িয়ে ও নানাভাবে বাজার প্রভাবিত করে ফায়দা লুটছে। পুঁজিবাজার ঠিক করতে হলে সবার আগে পুরনো সব ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ ও অপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে এই সিন্ডিকেট সবার আগে ভাঙতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা