আশীর্বাদ হোক জাতির জন্য
- ২৫ জুন ২০২২, ০০:০০
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের উন্নয়নের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এটি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ সহজ করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দুয়ার খুলে দেবে। সেতু নির্মাণের প্রস্তাব ওঠার পর বড় বড় বাধা-বিপত্তির মোকাবেলা করতে হয়। ২৩ বছর আগে এই সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেতু নির্মাণের প্রথম উদ্যোগের সময়টা বিবেচনায় নিলে এটির বাস্তবায়নের সময়কাল আরো দীর্ঘ হবে। নানা জটিলতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয় বারবার। শেষপর্যন্ত সেতু নির্মাণ আদৌ সম্ভব হবে কিনা এমন দ্বিধাও ছিল। নির্মাণশৈলীর বৈচিত্র্য, নতুন প্রযুক্তির সংযোজন বা বৃহৎ আকারের জন্য নয় বরং বিভিন্ন জটিলতার কারণে প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত ও অতিরিক্ত নির্মাণ ব্যয়ের কারণে এটি বিশেষভাবে আলোচিত। তবে এ সেতু বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক আশার সঞ্চার করেছে।
পদ্মা সেতুর কারণে বেশি লাভবান হবে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ২১ জেলার মানুষ। বিশেষ করে এই অঞ্চলের দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে। খুলনায় ২৭ শতাংশের বেশি ও বরিশালে ২৬ শতাংশের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। উত্তরাঞ্চলের পর এ দুটো বিভাগে দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি। সেতুর সুবিধা নিয়ে এই দরিদ্র জনগোষ্ঠী জাতীয় অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় শামিল হতে পারবে। ওই অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য রাজধানীসহ সারা দেশে তুলনামূলক কম খরচে সরবরাহ করা যাবে। তাই এসব অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্যসম্পদ দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখবে। ২০১৯ সালে এক জরিপে দেখা গেছে, সেতু হলে এ অঞ্চলের ৩০ শতাংশ মানুষের আয় ১৬ থেকে ২০ শতাংশ বাড়বে। যশোর ও পটুয়াখালীতে দুটো রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (ইপিজেড) নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে। পদ্মা সেতুর সুবিধা নিয়ে ইপিজেডগুলো ওই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরো গতি আনবে।
সেতু বিভাগ বলছে, সেতু চালু হলে জাতীয় উৎপাদন ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বড়বে। পদ্মার ওপারের দু’টি বিভাগের প্রবৃদ্ধি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। দেশী-বিদেশী অন্যান্য গবেষণা সংস্থাও অর্থনৈতিক এই সম্ভাবনার কথা বলছে। রেলসেতু সংযোজন হলে সম্ভাবনা আরো বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের আশা। ভারতের সাথে বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি সহজ হবে। ওই সব এলাকা থেকে রাজধানী ঢাকায় আসতে ২৪-৩৬ ঘণ্টা লাগে। এখন সেই সময় ৬-৭ ঘণ্টায় নেমে আসবে। আশা করা হচ্ছে, এর ওপর রেলসেতু সংযোজিত হয়ে এটি দেশকে সংযুক্ত করবে ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ের সাথে। সব মিলিয়ে সেতুটি আমাদের অর্থনীতির নতুন আশার সঞ্চার করেছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করে এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন হলে আমাদের অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ করবে। এখন দরকার সারা দেশের সাথে এর মসৃণ যোগাযোগ স্থাপন। বন্যায় পানিপ্রবাহের কথা বিবেচনায় পরিবেশবান্ধব পরবর্তী ধাপের অবকাঠামো উন্নয়ন করা গেলে পদ্মা সেতুর সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হবে।
দেশের বড় রাজনৈতিক পক্ষগুলো একে অন্যকে পদ্মা সেতু নির্মাণের বিরোধিতাকারী হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। বাস্তবে এ সেতুর নির্মাণের দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় উভয়পক্ষকে কিছু বিতর্ক ছাড়া কর্তব্য পালনে আন্তরিক দেখা গেছে। তাই দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে সবারই বেরিয়ে আসা উচিত। আবার প্রচারণা আর কৃতিত্ব নেয়ার মাত্রাতিরিক্ত প্রচেষ্টাও শোভন নয়। এমন সেতু পৃথিবীতে আরো অনেক রয়েছে। সাগরে একাধিক দ্বীপকে সংযোগকারী সেতু এবং দৈর্ঘ্যে কয়েকগুণ বড় সেতুরও অভাব নেই। উন্নত দেশগুলো একক প্রচেষ্টাতেই সেগুলো বানিয়েছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের অর্জনের মূল্যায়ন করতে হবে। এটি নির্মাণে আমাদের সহযোগী ছিল একটি চীনা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া প্রকৌশলগত পরামর্শ ও সহযোগিতা বিশ্বের অন্য অনেক দেশ থেকেও নিয়েছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পদ্মা সেতু আমাদের একটি জাতীয় অর্জন। আমরা আশান্বিত, জাতীয় উন্নয়নে এটি অভূতপূর্ব অবদান রাখবে। আশীর্বাদ বয়ে আনবে দেশবাসীর জীবনে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা