২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ছোট মাছের কৃত্রিম প্রজনন-পদ্ধতি উদ্ভাবন

মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ করতে হবে

-

কৃষি গবেষণায় দেশের বিজ্ঞানীদের সাফল্য প্রশংসনীয়। পাট গবেষণায় যেমন বিপুল সাফল্য তারা দেখিয়েছেন, তেমনি ধান এবং মাছ গবেষণায়ও। এর সর্বশেষ উদাহরণ বিপন্ন প্রজাতির গুঁড়া মাছের কৃত্রিম প্রজনন-পদ্ধতির উদ্ভাবন। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) সৈয়দপুর স্বাদুপানি উপকেন্দ্রে নারকেলি চেলা এবং ময়মনসিংহের স্বাদুপানি কেন্দ্রে তিতপুঁটি মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। চলতি বছরের মে মাসে তারা এই সফলতা অর্জন করেন।
গুঁড়া মাছের এই দু’টি প্রজাতিই এখন বিপন্নপ্রায়। নারকেলি চেলা অঞ্চলভেদে কাটারি ও নারকালি চেলা নামেও পরিচিত। মাছটি নদী, পুকুর, বিল, হ্রদ ও খালের তলদেশে থাকে। সুস্বাদু হওয়ায় উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছটি খুবই জনপ্রিয়। এ মাছে মানবদেহের জন্য উপকারী উপাদান ভিটামিন-এ ও জিংক আছে।
তিতপুঁটি মাছটি একসময় নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় ও পুকুরে পাওয়া যেত। বছর পাঁচেক আগেও রাজধানীর যেকোনো মাছের বাজারে প্রচুর চেলা মাছ পাওয়া যেত। এখন আর দেখা মেলে না। ছোট মাছ বা গুঁড়া মাছ একসময় বাঙালির প্রতিদিনের খাবারের তালিকার অন্যতম পদ ছিল। বিশেষ করে গুঁড়া মাছের চচ্চড়ি বেশির ভাগ মানুষের পছন্দের শীর্ষে। মলা, ঢেলা, চেলা, দাড়কিনা, পুঁটি, বাতাসি, খলসে, কাকিলা, গচি, বউ, চিংড়ি, পাবদা, গুলশা, টেংরা, কাজলি, কর্তি, বৈরালিসহ নানা প্রজাতির দেশীয় ছোট মাছ শত শত বছর ধরে বাঙালির সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। পুষ্টিগুণে ভরা এসব মাছের অনেকগুলোই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অনেকগুলো বিলুপ্তির পথে।
বিপন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ সুরক্ষা কেবল যে আমাদের সংস্কৃতি রক্ষার বিষয় তা নয়। ছোট মাছ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর পুষ্টির অন্যতম উৎস এবং এখনো অনেক মানুষ এই মাছের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু প্রাকৃতিক জলাশয় কমে যাওয়ায় এসব মাছের পুষ্টি থেকে সাধারণ ভোক্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। মানুষের পাতে আবার এসব মাছ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে গবেষকদের এই প্রয়াস আমাদের অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। দেশীয় প্রজাতির এসব মাছ পরিবেশবান্ধব, অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ, স্বাদের বৈচিত্র্যে অনন্য এবং এগুলো বিদেশে রফতানিরও যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এরই মধ্যে অন্তত ৩৬ প্রজাতির ছোট মাছের কৃত্রিম প্রজনন-পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। ময়মনসিংহে ইনস্টিটিউটের স্বাদুপানি গবেষণা কেন্দ্র । ২০২০ সালে এসব মাছের একটি লাইভ জিন ব্যাংকও প্রতিষ্ঠা করেছে। বর্তমানে আরো বেশ কিছু মাছ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। এসবই নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত মাছ শিকার ও জলাশয় সঙ্কোচনের কারণে মাছের প্রজনন ও বিচরণক্ষেত্রের বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে অনেক ছোট মাছই এখন দু®প্রাপ্য। বাজারে যে দু-চার ধরনের ছোট মাছ এখনো পাওয়া যায় সেগুলোর দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ সালে মাছের উৎপাদন ছিল দুই লাখ ৫০ হাজার টন। হিসাব মতে, গত এক যুগে দেশীয় মাছের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় চারগুণ। দেশীয় মাছ সংরক্ষণসহ গবেষণায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২০ সালে রাষ্ট্রীয়ভাবে একুশে পদকও পেয়েছে বিএফআরআই।
জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে এক নম্বর অবস্থানে যেতে পারে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ আছে চার নম্বরে। প্রথম চীন, দ্বিতীয় ভারত এবং থাইল্যান্ড তৃতীয় অবস্থানে আছে। বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফল মাঠপর্যায়ে সাফল্যের সাথে প্রয়োগ করা সম্ভব হলে বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে প্রথম হতে পারে। এ জন্য বিজ্ঞানীদের গবেষণা মাঠপর্যায়ে সফলভাবে প্রয়োগ করতে হবে। মাছের বিচরণক্ষেত্র অর্থাৎ সব জলাশয় সংরক্ষণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
সমস্ত সভ্যতার জন্য ন্যায়বিচার, সমতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার আহ্বান পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাবেক কৃষিমন্ত্রী ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর আইনজীবী হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেফতার ৬ : প্রেস উইং ওয়ানডেতে বাংলাদেশের মেয়েদের রেকর্ড সংগ্রহ স্ত্রী হত্যা মামলায় সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের জামিন দুই হত্যা মামলায় সাবেক এমপি সোলাইমান ৭ দিনের রিমান্ডে বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে চলবে জাহাজ বড় পুকুরিয়া কয়লাখনির দুর্নীতি মামলা থেকে খালেদা জিয়ার অব্যাহতি শহীদ ডা. মিলনের সমাধিতে পেশাজীবী পরিষদের শ্রদ্ধা আইনজীবী সাইফুল হত্যা : সুপ্রিম কোর্টসহ সকল বারে বিক্ষোভ সমাবেশ পানছড়ি হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ রোগীর ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা

সকল