প্রয়োজন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা
- ২২ জুন ২০২২, ০০:০০
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে ক্রিয়াশীল থাকে একটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যম। একটি দেশে গণতন্ত্র টিকে থাকা ও বিকশিত হওয়ার জন্য বহুলাংশে তা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর নির্ভর করে। সে জন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নিজের স্বার্থেই সংবাদমাধ্যমকে টিকিয়ে রাখার আয়োজন করে দিতে হয়। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র যেমন ক্ষয় হচ্ছে এর সাথে সংবাদমাধ্যম ক্রমেই স্বাধীনতা হারাচ্ছে। নানাভাবে এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পাচ্ছে। দেশে সাংবাদিকতার পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিগত বছরগুলোতে সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নানা ধরনের চাপ ও সঙ্কোচন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটি এবার সাংবাদিকদের অর্থদণ্ডের বিধান যুক্ত করে একটি আইন প্রস্তাব করেছে। যদিও সময়ের দাবি ছিল স্বাধীন সাংবাদিকতার পথকে সুগম করার জন্য ভূমিকা রাখা।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে তার নিষ্পত্তি করার প্রাথমিক দায়িত্ব প্রেস কাউন্সিলের। এ দায়িত্ব পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সাংবাদিকদের যাতে শক্তিশালী কোনো পক্ষ দাবিয়ে দিতে না পারে। সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশের প্রবাহ নির্বিঘœ থাকার স্বার্থে এমন দায়িত্ব পালন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া অনিয়ম দুর্নীতি- উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি, সরকারি বিভিন্ন বিভাগে ঘুষ গ্রহণ, হলমার্ক-ডেসটিনির মতো বহু কোম্পানি খুলে জনগণের অর্থ হাতিয়ে নেয়া এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেদার লুটপাট। পি কে হালদার নামের একজনই ১০ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলে এসব জাতির সামনে আগেই উন্মোচিত হতে পারত। ফলে দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। এ জন্যই সংবাদমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেয়া সর্বাগ্রে প্রাধান্য পাওয়া দরকার ছিল।
প্রেস কাউন্সিলের প্রস্তাবিত খসড়া আইনটি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তাতে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার মানোন্নয়ন, সংরক্ষণ, অপসাংবাদিকতা দূর করার কথা বলা হয়েছে। আর রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, নৈতিকতা ইত্যাদি ক্ষুণ্নের জন্য অর্থদণ্ড দিতে পারবে প্রেস কাউন্সিল। আইনের খসড়া সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এগুলো বলেন। তবে এ ব্যাপারে কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের কিছু দিন আগে দেয়া বক্তব্যটি লক্ষণীয়। রাজশাহীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি আগেই জানান দিয়েছিলেন, ‘সাংবাদিকরা ভুল করলে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার বিধান রেখে একটি আইন হচ্ছে। সংসদের আগামী অধিবেশনে সেটা পাস হতে পারে।’
ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী, দুর্নীতিবাজ চক্র প্রায়ই সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হচ্ছে। এ কারণে দেশের বহু এলাকা ও সেক্টরে সাংবাদিকতা করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। যেখানে আমাদের অবাধ তথ্যপ্রবাহ দরকার সেখানে তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০২২ সালের বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকেও তার প্রভাব দেখা গেল। আগের বছরের তুলনায় আমরা ১০ ধাপ পিছিয়ে গেছি। ১৮০টি দেশের মধ্যে এখন আমাদের অবস্থান ১৬২। প্রতিবেশী সব দেশ এ যাত্রায় আমাদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে, এবার আমরা আফগানিস্তানেরও পেছনে পড়ে গেলাম। বৈশ্বিক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, চলতি বছরে একজন সাংবাদিক নিহত ও তিনজন কারাবন্দী রয়েছেন এ দেশে। এ ছাড়া ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মামলায় অনেকে ভীতি ও শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৪৭ ধারার বহু অপপ্রয়োগ হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। এর পরে এসেছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-২০১৮ (ডিএসএ)। ইতোমধ্যে অনেক সাংবাদিক এর শিকার হয়েছেন। সাংবাদিক ও সুশীলসমাজের সদস্যরা ডিএসএ বাতিল বা সংশোধনের দাবি জানাচ্ছেন। সরকার এ ব্যাপারে কর্ণপাত করেনি। বরং সামনে সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে আরো কয়েকটি আইন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে যদিও সাংবাদিকের ওপর খড়গহস্ত হওয়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রে সরকারের জন্য কোনো আইনের প্রয়োজন হয়নি। জবরদস্তি করে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম বন্ধ ও বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে হেনস্তা করেছিল সরকার তার আগে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করা এখন জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় কোনো কিছু নয়। বরং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপদে কাজ করতে দেয়া একান্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে প্রেস কাউন্সিল যেন বিপরীত কাজটিই করতে চাচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা