২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের অর্থ জমার উল্লম্ফন

তবু মিলছে পাচারকারীদের দায়মুক্তি

-

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (এসএনবি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশীদের অর্থ জমানোর পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। হিসাব অনুযায়ী, ২০২০-এর তুলনায় ২০২১ সালে ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। মুদ্রা পাচার নিয়ে দেশে বেশ কয়েক বছর ধরে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলছে। মুদ্রা পাচারকারীদের সবাই জাতীয় শত্রু বলছেন। তবে দুর্ভাগ্য হলো সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এ নিয়ে যতটা মুখরোচক আলোচনা পছন্দ করেন; এর সামান্যই অপরাধীদের শনাক্ত করা এবং পাচার বন্ধে উদ্যোগ নেন। কার্যত বর্তমান সরকারের বিগত দুই আমলে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে প্রতি বছরই পাচার হওয়া অর্থের অঙ্কটি স্ফীত হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০২০ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের গচ্ছিত অর্থ পাঁচ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। পরের এক বছরেই দুই হাজার ৯২৮ কোটি টাকা জমা হয়। দেশটিতে বাংলাদেশীদের অর্থ গচ্ছিত রাখার গতি কিভাবে বেড়েছে গত ২১ বছরের প্রতিবেদন থেকে তা স্পষ্ট। ২০০০ সালে গচ্ছিত ছিল ৪৯৩ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে দাঁড়ায় চার হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। শুধু ২০১৯ ও ২০২০ সালে সেখানে জমানো অর্থ কিছুটা কমে। গত বছর আবার একলাফে বেড়ে আট হাজার ২৭৫ কোটি টাকা হয়। এই জমানোর প্রবণতা এমন একটা সময় বেড়েছে যখন সরকার বিদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর ফন্দিফিকির করছে। বাংলাদেশে অর্থ পাচারের গতির সাথে জাতীয় নির্বাচনের একটি সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণত নির্বাচনের আগে-পরে দেশ থেকে বেশি অর্থ পাচার হয়।
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের জমানো অর্থের অঙ্ক দেখে দেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে তা অনুমান করা দুরূহ। মূলত গত শতাব্দীর শেষ দিক থেকে সুইস ব্যাংক অবৈধ অর্থের নিরাপদ গন্তব্য হয়ে ওঠে। বিগত দশকগুলোতে অবৈধ অর্থের গন্তব্যের পরিমাণ বহুগুণে বেড়ে গেছে। অনেক দেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে পাচারকারীদের সুযোগ করে দিচ্ছে। কোনো দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় এমন ফাঁকফোকর রয়েছে; যে কেউ চাইলেই অবৈধ অর্থ পাচার করতে পারে। অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থা এবং ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে গড়ে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার হচ্ছে। আমদানি-রফতানির আড়ালে প্রধানত এমন কর্ম সংঘটিত হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একক বছরে সেটা এক লাখ কোটি টাকা পর্যন্ত হয়েছে। সেভাবে দেখলে ২০২১ সালে সুইস ব্যাংকে জমা হওয়া অঙ্কটি সামান্যই। বছরপ্রতি গড় অর্থ পাচারের তুলনায় মাত্র ৪ শতাংশের একটু বেশি।
সুইস ব্যাংকে নগদ অর্থ ছাড়াও স্বর্ণসহ অন্য উপায়ে সম্পদ গচ্ছিত রাখা যায়। সে হিসাব কিন্তু এর মধ্যে আসেনি। বাংলাদেশী নাগরিকের নামে জমা হওয়া সব অর্থের উৎস যে বাংলাদেশ এমনো নয়। এ অর্থ অন্যান্য দেশ থেকে নিয়ে গিয়েও সেখানে জমা রাখতে পারেন। সুইস ব্যাংকে এখনো সারা বিশ্বের মানুষের আংশিক অবৈধ অর্থ জমা রাখার একটি প্রবণতা রয়েছে। ২০২১ সালে ভারতের ৩৬ হাজার ৩৮৫ কোটি ও পাকিস্তানের নাগরিকরা ছয় হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রাখেন। বাস্তবতা হচ্ছে মুদ্রা পাচারের হার এ দুটো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে অনেক বেশি। তাই বাংলাদেশ থেকে মুদ্রা পাচারের প্রবণতাকে সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের অঙ্ক দিয়ে তুলনা করা সঠিক হবে না।
মুদ্রা পাচার বন্ধে সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে। ৭ শতাংশ কর দিয়ে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে চান অর্থমন্ত্রী। কিন্তু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ নেই তার। সংসদে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল লোকেরা অনেক সময় হুমকিও দিয়েছেন, ‘মুদ্রা কারা পাচার করেন’ তা তারা জানেন। অন্যদিকে আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা মুদ্রা পাচারকারীদের শনাক্তের ক্ষমতা রাখে। এসব প্রতিষ্ঠান চাইলে স্বল্পসময়ের মধ্যে তাদের নাম প্রকাশ করতে পারে। দুদক আইনিপ্রক্রিয়া সচল করতে পারে। কিন্তু দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করছেন না। বিষয়টি এখন জাতীয় হতাশায় রূপ নিয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের বিবৃতি দেয়া অনধিকার চর্চা : উপদেষ্টা নাহিদ কুড়িগ্রামে পিলখানা হত্যার তদন্ত ও চাকরিতে পূর্ণবহালের দাবি গাজা যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত : হামাস অ্যাডভোকেট সাইফুল হত্যা : সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবীদের প্রতিবাদ সমাবেশ নৌ-পরিবহন উপদেষ্টার সাথে মালদ্বীপের হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ হিজবুল্লাহ-ইসরাইল অস্ত্রবিরতি চুক্তিকে স্বাগত বিশ্ব নেতাদের আয়ারল্যান্ডকে ১৫৪ রানে হারিয়ে রেকর্ড গড়ল টাইগ্রেসরা ববিতে চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি মার্কিন দূতাবাস থেকে বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তির বিষয়ে সব পক্ষের মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের হাসিনার পালানোর দৃশ্য মনে করতে বললেন ফারুকী

সকল