গণতন্ত্রের স্বার্থে সবার নমনীয় হওয়া দরকার
- ১৫ জুন ২০২২, ০০:০০
মানুষের স্বাধীন মতামত প্রকাশ ও কর্মসূচি পালনের অবাধ অধিকার দেয় গণতন্ত্র। বিংশ শতাব্দীতে এসে গণতন্ত্র তাই সারা বিশ্বে দ্রুতবেগে জনপ্রিয় হয়েছে, একবিংশ শতাব্দীতেও তা অব্যাহত আছে। রাষ্ট্রের শাসক হিসেবে বহু ‘পরোপকারী’ একনায়কের আবির্ভাব হয়েছে পৃথিবীতে। জনসাধারণের কাছে তারা অত্যন্ত প্রিয় ও বরণীয়ও হয়েছেন। দেশ চালনায় তারা অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয়ও দিয়েছেন। তার পরও একনায়কত্ব পৃথিবীর কোথাও আর সমাদৃত হচ্ছে না গণতন্ত্রের অবাধ স্বাধীনতার কারণেই। বাংলাদেশের জনসাধারণও রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি হিসেবে গণতন্ত্রকে গ্রহণ করেছে একই কারণে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে এ দেশে গণতন্ত্র সেভাবে আর কার্যকর নয়। মানুষের অবাধে মতপ্রকাশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ওপর অনেকটাই বিধিনিষেধ আরোপ করে রাখা হয়েছে। আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বিরোধী দলকে ছাড় দেবেন বলে মন্তব্য করেছেন। দেশের নাগরিকরা আশা করে, সব দল ও মতের ওপর থেকে সরকার সবধরনের অলিখিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেবে।
সোমবার নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বিরোধী দলকে ছাড় দেয়ার ব্যাপারে মতামত দিয়েছে নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সশস্ত্রবাহিনীগুলোর প্রধান ও তাদের প্রতিনিধিরা এবং পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা। আনুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গণতান্ত্রিক দেশে ভিন্ন মত থাকবে। ভিন্ন পথ থাকবে। নিজেদের বক্তব্য রাখার সভা সমাবেশ ও মিছিল করার অধিকার সবার আছে। এসব কর্মসূচিতে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। কারো বিরুদ্ধে কোনো ধরনের হয়রানিমূলক পদক্ষেপ সরকার নেবে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সরকারবিরোধীরা দীর্ঘ দিন অবাধে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারছে না। সম্প্রতি বিএনপি সারা দেশে দু’দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি দেয়। গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বিভিন্ন জায়গায় পণ্ড করে দেয়। কোথাও কোথাও তারা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেছে, সভামঞ্চ ভাঙচুর করেছে, চেয়ার ছুড়ে মেরে বাধা দিয়েছে। শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিনা উসকানিতে হামলা চালানো হয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- এসব কর্মসূচি পালনের জন্য আগে থেকে তারা পুলিশের অনুমতি নিয়েছিল। আবার কোথাও কোথাও বিরোধীরা কর্মসূচি পালনের অনুমতিই পায়নি। পুলিশের খেয়াল রাখা উচিত, তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তাদের কাছে সরকারি দল, বিরোধী দল, এমনকি যেকোনো নাগরিক সবাই সমান। এ ধরনের বাড়াবাড়িমূলক আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের পেছনে পুলিশের একশ্রেণীর মতলববাজই দায়ী। তারা বিরোধীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে সরকারের নজর কাড়তে চায়। এমন নীতি শেষ পর্যন্ত কারো উপকারে আসে না।
প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদের কর্মসূচি পালন করার অধিকার দেয়ার ঘোষণার আগেও দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে একই ধরনের সুযোগ বিরোধীদের দেয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছিল। তার কয়েক দিন পরে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল-সমাবেশ করতে গিয়ে সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন, ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়। পরে তারা ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে ঢোকার বিভিন্ন পথে লাঠিসোটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বাধা দেয়। উচ্চ আদালতের চত্বরে ছাত্রদলের কয়েকজন সদস্যকে দলবদ্ধভাবে তারা বেধড়ক পিটিয়েছে। তাদের মধ্যে এক ছাত্রীকে পিটিয়ে তারা গুরুতর আহত করে। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর সরকারি দল এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আর করবে না।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান শান্তিপূর্ণভাবে জমায়েত হওয়াসহ সব রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অধিকার দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠকে তারই পুনরুল্লেখ করেছেন। সাধারণভাবে প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণারও প্রয়োজন পড়ে না এসব কর্মসূচি পালনে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতির ঘোরতর অবনতির কারণে বিরোধীরা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ পাচ্ছিলেন না। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও সরকারি দলের নেতাকর্মীরা এখন এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ছে যেন বিরোধীদের রাজনৈতিক অধিকার ছিনতাই করা তাদের কর্তব্য। এ ধরনের মানসিকতা কোনোভাবে গণতান্ত্রিক হবে না। গণতন্ত্রের স্বার্থেই এই মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর আশা করা যায়, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর উৎসাহী সদস্য ও সরকারি দলের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক অধিকার হরণ থেকে বিরত থাকবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা