আইনের রক্ষক, না ভক্ষক?
- ১২ জুন ২০২২, ০০:০০
পদ্মায় বর্ষার আগমনে পানি তথা স্রোত বেড়ে গেছে। তাই আসন্ন পদ্মা সেতুর নিরাপত্তাবিধানের জন্য গত ২৬ মে থেকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা-বিআইডব্লিউটিসি। এখানে ফেরি বন্ধ থাকায় জাজিরা-শিমুলিয়া রুটে মঙ্গলমাঝির ঘাটে ফেরিতে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সুযোগে আবারো পণ্যবাহী যানচালকদের কাছ থেকে পুলিশ এবং কিছু সরকারি স্টাফের চাঁদাবাজি শুরু হয়ে গেছে। এদের মধ্যে কিছু কর্মকর্তাও রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এবার গত ঈদের আগে নানা গণমাধ্যমে মঙ্গলমাঝি ফেরিঘাটে স্থানীয় লোকজনের যোগসাজশে ট্রাফিক পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিসির চাঁদাবাজির খবর প্রকাশিত হলে একজনকে আটক করা হয়েছিল ফেরিঘাটে চাঁদাবাজির দায়ে। ফলে চাঁদাবাজি এখানে প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তবে বর্তমানে খোদ ডিউটিরত পুলিশ এবং বিআইডব্লিউটিসির নামে অভিযোগ এসেছে চাঁদাবাজি করার। আর তা পদ্মা নদী পার হতে আগত পণ্যবাহী ট্রাকের ড্রাইভারদের পক্ষ থেকে।
সরেজমিন দেখা গেছে, মঙ্গলমাঝি ঘাটে ট্রাফিক পুলিশ ‘যথারীতি’ ডিউটি করছে। তারা যানবাহনকে ফেরি পার হওয়ার জন্য রাস্তার পাশে সারি বাঁধার জন্য বলছে। অবশ্য একটু পরপরই দেখা যায়, দায়িত্বরত পুলিশ সার্জেন্টের সাথে ‘কথাবার্তা’ বলছেন ট্রাকচালক/হেলপার এবং প্রাইভেট গাড়ির চালক/মালিক। এ প্রসঙ্গে জানা গেছে, লাইন না মেনেই ফেরিতে ওঠা যায় সবার আগে। তবে এ জন্য সার্জেন্টকে আগে ‘খুশি করতে হবে’। দেখা যায়, সিরিয়াল পাওয়ার পরে ফেরিতে ওঠার জন্য টিকিটের গায়ে লেখা নির্দিষ্ট ভাড়ার তুলনায় গাড়িপিছু ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে বেশি নেয়া হচ্ছে। টিকিটের দায়িত্বে রয়েছে বিআইডব্লিউটিসি। অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার কারণ জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট টিকিটম্যান কোনো জবাব না দিয়ে কাউন্টার বন্ধ করে সরে পড়েন। একজন ট্রাকড্রাইভার বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহেই খুলনা থেকে ঢাকা যাই এ পথে। কাঁচামালের গাড়ি আগে যেতে দেয়াই নিয়ম; কিন্তু সিরিয়ালের জন্য পুলিশকে ৫০০ থেকে হাজার টাকা দিতে হয় ফেরিতে ওঠার জন্য, ২০০-৩০০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে সর্বদাই।’ আরেক চালকের বক্তব্য, ‘সেতু হওয়া পর্যন্ত আর মাত্র অল্প ক’দিন অপেক্ষা করতে হবে।’ তার কথা আঞ্চলিক ভাষায়, ‘ওরা তো হারা জীবন রক্ত চুইশ্যা খাইল। অহনো খাইতাছে। দেহি, পদ্মা সেতু হওয়ার পর ওরা বাঁচে কী খাইয়া।’ সাংবাদিকের প্রতি তার সোজা কথা, ‘আর জিগাইয়েন না। এ জুলুম ওরা সারা জীবন করতাছে। এতে আমাগো ক্ষতি না অইলেও যারা মাল কিনতাছে ওগো কষ্ট বাড়তাছে। কারণ চাঁদার বাড়তি খরচের দরুন মালের দাম বাড়ে। এইহানে ফেরিওয়ালারা জনপ্রতি ২০০ টাকার বেশি দিতে অয় পুলিশরে। গোড়া ঠিক না থাকলে আগায় পানি ঢাইল্যা কী লাভ?’ অন্য একজন চালক বলেছেন, ‘সাংবাদিক হাজির থাকলে পুলিশ ঝামেলা করে না। কিন্তু ওগো আকাম-কুকামের কথা জানালে পুলিশ আর বিআইডব্লিউটিসি আমাগো গাড়িই ঘাটে ঢুকতে দেবে না। সুযোগ পাইলেই ওরা ক্ষতি করবে আমাগো।’ কিন্তু অভিযুক্ত পুলিশ সার্জেন্ট সবকিছু অস্বীকার করে বলেন, ‘এসব কথা মিথ্যা। এমন কাজে কোনো পুলিশই জড়িত নয়।’ আর ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক বলেন, ‘বাড়তি টাকা নেয়ার নিয়ম নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ২১ জেলার লাখ লাখ মানুষ বাংলাবাজার-শিমুলিয়া এবং মাঝিকান্দি-শিমুলিয়া রুট ব্যবহার করে রাজধানী ঢাকায় আসা যাওয়া করে থাকেন। তাদের বিকল্প পথ যেমন নেই; তেমনি নেই চরম দুর্ভোগের অবসান। বর্তমানে একটি মাত্র ফেরিরুট চালু থাকায় এটা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। তবুও কর্তৃপক্ষের হুঁশ নেই।
পুলিশ ও প্রশাসন আইনের বাস্তবায়নকারী। তারা রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা নিলে সাধারণ জনগণ যাবে কার কাছে?
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা