সরকারের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন
- ১১ জুন ২০২২, ০০:০০
উগ্র হিন্দুত্ববাদের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি ২০১৪ সালে এককভাবে দেশের ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটিতে সংখ্যালঘু বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বাড়ছেই। ভারতে ক্ষমতাসীনদের একটি প্রবণতা লক্ষণীয় যে, সেখানে রাজ্যগুলো এবং জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই বিজেপি ক্ষমতা ধরে রাখতে তীব্রভাবে মুসলিমবিদ্বেষ ছড়িয়ে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা চালায়।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানো হয় সমাজের উঁচু থেকে নিম্নতম স্তর পর্যন্ত। অবস্থা এমন হয়েছিল যে, প্রাদেশিক নির্বাচনকালে রাজ্যটিতে মুখ্যমন্ত্রী পদে বিজেপি মনোনীত প্রার্থী যোগী আদিত্যনাথ নির্বাচনী প্রচারের সময় বলেন, উত্তরপ্রদেশের এবারের নির্বাচন ৮০ বনাম ২০ শতাংশের মধ্যে। অর্থাৎ ৮০ শতাংশ হিন্দুর বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয় ২০ ভাগ দুর্বল মুসলিমকে। এতে করে সেখানকার সমাজে ভয়াবহ মুসলিমবিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়িয়ে পড়ে। স্মরণযোগ্য যে, বিজেপি ও এর রাজনৈতিক মিত্রশক্তি সংঘ পরিবার সব সময়ই এই কাজই করে আসছে। দেশটিতে কাশ্মিরে বেশির ভাগ মানুষ মুসলমান হওয়ার কারণে তাদের ওপর দশকের পর দশক ধরে জুলুম নির্যাতন চালানো হচ্ছে রাষ্ট্রীয়ভাবে। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে তা ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। ভারতীয় সংবিধান প্রদত্ত কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়েছে মোদি সরকার। এ ছাড়া আসাম, ত্রিপুরাসহ সব রাজ্যের নির্বাচনে জয়ের কৌশল হিসেবে হিন্দুত্ববাদের জিগির তোলে বিজেপি। যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠদের সমর্থন আদায় করা সহজ হয়। ভোটের রাজনীতিতে বিরোধীদের কুপোকাত করতে বিজেপি সাম্প্রদায়িকতার অস্ত্রটি বারবার ব্যবহার করছে। ফলে ভারতের বহুত্ববাদী সমাজে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে সংখ্যালঘু মুসলমানরা নিগৃহীত হচ্ছেন। সাম্প্রদায়িক কূটকৌশল বিজেপি সফলভাবে প্রয়োগ করায় এত দিন ফলদায়কই ছিল। বিজেপি নেতৃত্ব একই তুরুপের তাস খেলে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে ছক এঁকে এগোচ্ছিল। তারই প্রতিফল ঘটেছে সম্প্রতি বিজেপির উঁচুপর্যায়ের দুই নেতার মুখে নবী মহাম্মদ সা:-এর প্রতি তীব্র অবমাননাকর বত্তব্য দেয়ার মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে বিজেপি সরকার যতই বলুক না কেন ওই বক্তব্য ভারত সরকারের নয় দুই নেতার ব্যক্তিগত মতামত। দলটির জাতীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মা একটি টিভি টকশোতে নবী করিম সা:-এর সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। এর পরই দিল্লির গণমাধ্যম বিভাগের প্রধান নবীন কুমার জিন্দাল একই টুইটে নবী করিম সা:-কে নিয়ে জঘন্য মন্তব্য করেন। ঘটনার ধারাবাহিকতায় এটা মনে হওয়া অবান্তর নয় যে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মূলত বিজেপির আদর্শই তাদের বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
নবী করিম সা:-এর প্রতি বিজেপির দুই নেতার অবমাননাকর মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে মুসলিমবিশ্বে। দেশে দেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দাবাদসহ ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়। মুসলমানদের এই যে প্রতিক্রিয়া দেখানো; এটিই স্বাভাবিক। এ ঘটনায় নিজ নিজ দেশে ভারতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে আনুষ্ঠানিকভাবে কড়া প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়েছে। আর মুসলিম দেশগুলোর সংস্থা ওআইসি ভারতকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে, যা যুক্তিসঙ্গত। শুধু তাই নয়; মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হয়েছে। শুধু মুসলিম বিশ্বেই নয় ভারতের অভ্যন্তরেও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হচ্ছে। মালদ্বীপের মতো ছোট্ট একটি দেশও আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ৯০ শতাংশ মুসলিম জন-অধ্যুষিত দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের সরকার এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানায়নি। নীরবতা অবলম্বনকেই শ্রেয় মনে করছে। এই নীরবতা জনমানসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ভারত বন্ধুরাষ্ট্র বলে এ ঘটনা দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে সরকার এড়িয়ে গেলে মুসলিম বিশ্বসহ দেশের বেশির ভাগ মানুষের আবেগ-উপলব্ধির প্রতিফল সরকারের রাষ্ট্রনীতিতে অনুপস্থিত বলে ধরে নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা