শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে
- ০৯ জুন ২০২২, ০০:০০
করোনা মহামারীর প্রভাবে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। আগে যেখানে দেশে আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করত; সেখানে নতুন করে আরো আড়াই কোটি দারিদ্র্যসীমায় নেমে গেছে। নতুন-পুরনো মিলিয়ে দেশে এখন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা পাঁচ কোটির মতো, যা আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ । বাস্তবতা হলো- মুষ্টিমেয় কিছু লোক এবং একটি বিশেষ গোষ্ঠী ছাড়া দেশের বাদবাকি মানুষের আয় কমেছে। অনেকে চাকরি হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাদের জীবন এখন দুর্বিষহ। এ দিকে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে আপতিত হয়েছে প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া। ফলে বেশির ভাগ মানুষ আর্থিক টানাপড়েনে আছেন। বলা চলে দেশের বেশির ভাগ মানুষের সংসার চালানোই এখন দায় হয়ে পড়েছে।
নতুন করে দরিদ্রের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগের আয় কমা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া দাম বৃদ্ধির জাঁতাকলে নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের চিঁড়েচ্যাপ্টা অবস্থায় সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী খাতের গুরুত্ব যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। অথচ এবারো এ খাতে শৃঙ্খলার পরিবর্তে বিশৃঙ্খলাই বেশি দেখা যাচ্ছে। একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এ খাতে আগামী অর্থবছরে এমন সব বিষয় জুড়ে দেয়া হচ্ছে যেগুলো আদৌ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মধ্যে পড়ে না। যেমন- সঞ্চয়পত্রের সুদ, উপবৃত্তি ও পেনশন ভাতা, এসব উপখাত নিয়ে বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন।
সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপও নেই সরকারের। প্রতিবারের বাজেটেই এ খাতে বড় আকারের বরাদ্দ দেখানো হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সূত্রমতে, আগামী অর্থবছরে এ খাতে সরকার এক লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো রাখার কথা বলবে, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ শতাংশের কম। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল এক লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ১১ শতাংশ।
নগদ সহায়তা, খাদ্যসহায়তা ও কর্মসৃজন, বৃত্তি, বিশেষ সহায়তা, বিশেষ জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তা, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ইত্যাদি বিষয়ে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী খাতের আওতায় আগামী অর্থবছরে ১২২টি বিষয় বা কর্মসূচি রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের। তবে এ খাতের উপকারভোগীদের পুরো তথ্য নেই সরকারের কাছে। উপকারভোগী নির্বাচনের সমস্যাও প্রকট।
সরকার ২০১৫ সালে জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশলপত্র (এনএসএসএস) করলেও অনেক ক্ষেত্রেই এর সাথে চলমান সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী সঙ্গতিপূর্ণ নয়। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) ২০১৬ সালেই তথ্য-উপাত্ত দিয়ে জানিয়েছিল যে, দেশের ৬৪ শতাংশ দরিদ্র মানুষ সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচিগুলোর একটির সুবিধাও পায় না।
অতীতের মতো আসন্ন অর্থবছরেও বেশি বরাদ্দ দেখানোর বিষয়টি গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে। মূলত সামাজিক নিরাপত্তায় কম বরাদ্দের লজ্জা থেকে বাঁচতে অথবা বাড়িয়ে দেখানোর প্রবণতায় সরকার প্রতি বছর বাজেটে এ খাতে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বরাদ্দ দেখাচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হয়। এসব দেখে বলা যায়, বরাদ্দ কম, মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং সহায়তা পাওয়ার যোগ্যদের সবাই সহায়তা না পাওয়াই হচ্ছে এ খাতের অন্যতম তিনটি সমস্যা। ঠিক ব্যক্তির কাছে টাকা যাচ্ছে কি না, তারও যথাযথ তদারকি নেই। সঙ্গত কারণে তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে এগুলোর মূল্যায়ন করা হলে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে।
আমরা মনে করি, সনাতনী পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হলে বেশি সুফল মিলবে। প্রকৃত দুস্থ ও অভাবীরা এতে উপকৃত হবেন। এতে করে দেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাপনে ন্যূনতম ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা