২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সরকারের ব্যর্থতার দায় জনগণ নেবে কেন

গ্যাসের দাম বাড়ানো অযৌক্তিক

-

গ্যাসের দাম আবারো বাড়ল। দাম বাড়ানোর পক্ষে সরকারের অনেক যুক্তি; কিন্তু এ বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ তাদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি মূলত সরকারি সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার ফল। নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেই প্রায় এক যুগ ধরে। পুরনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোর সংস্কার বা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় গুরুতর ঘাটতি আছে। গ্যাসের মজুদ কমবে। এলএনজি আমদানি করে ঘাটতি পূরণ করতে হবে এমন প্রাক্কলন করেছে খোদ পেট্রোবাংলা; কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনিক পাঁচ কোটি ঘনফুট উৎপাদন বাড়াতে পারলে ছয় লাখ ৫০ হাজার ডলারের গ্যাস আমদানি ঠেকানো সম্ভব। এতে বছরে সাশ্রয় হবে দুই হাজার কোটি টাকা। গত এক বছরে দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমেছে দৈনিক ৪০ কোটি ঘনফুট। দেশে এখন গ্যাস উৎপাদন করছে দু’টি বিদেশী ও তিনটি দেশী কোম্পানি। এর মধ্যে শুধু সিলেট গ্যাসফিল্ডেই (এসজিএফএল) দৈনিক উৎপাদন ১৫ কোটি ঘনফুট থেকে কমেছে।
গতকাল একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেছেন, দেশে গ্যাস অনুসন্ধানে যেমন উদ্যোগ নেই, তেমনি কূপ সংস্কার ও ব্যবস্থাপনাতেও রয়েছে অবহেলা। তিনি বলেন, নাইকোর সাথে বিরোধ মেটার কয়েক বছর পার হয়েছে; কিন্তু এখনো ছাতক থেকে গ্যাস উত্তোলনের কোনো উদ্যোগ নেই। এখান থেকে দিনে ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস মিলতে পারে।
গ্যাস খাতে উদ্ভূত পরিস্থিতি যে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিছক অবহেলাজনিত তা স্পষ্ট। উল্লিøখিত প্রতিবেদনে সিলেট গ্যাসফিল্ড কোম্পানির আওতাধীন রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্রের একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, সেখানে একটি কূপের সাথে শুধু কয়েক কিলোমিটার পাইপলাইন সংযোগ তৈরি না করায় দৈনিক প্রায় ১০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ সেখানে কূপ খনন সম্পন্ন হয়েছে ২০১৭ সালে। প্রসেস প্ল্যান্টও রয়েছে। পাঁচ বছর ধরে এই সামান্য কাজটুকু ফেলে রাখা হয়েছে। অবহেলার দৃষ্টান্ত শুধু এটুকুই নয়। এই প্রতিষ্ঠানেরই আরেকটি গ্যাসক্ষেত্র কৈলাসটিলার ২ ও ৩ নম্বর কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায় যথাক্রমে ২০২০ ও ২০২১ সালে। বন্ধ হওয়ার আগে কূপ দু’টি থেকে দৈনিক প্রায় ৩০ এমএমসিএফ গ্যাস মিলত। সংস্কার করা হলে এ দুই কূপ থেকে দৈনিক ৩০ এমএমসিএফ থেকে ৫০ এমএমসিএফ গ্যাস মিলতে পারে, যার বাজারমূল্য ৯ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকা। কিন্তু কূপ সংস্কারে দ্রুত উদ্যোগ না নিয়ে সময়ক্ষেপণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কয়েক শ’ গজ ব্যবধানে অবস্থিত কূপ দু’টির জন্য দু’জন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিয়ে দু’টি পৃথক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এতে সময় ও অর্থ দুটোরই অপচয় হবে বলে তাতে সন্দেহ নেই; কিন্তু সবচেয়ে যেটি উদ্বেগের সেটি হলো, এই অবহেলা ও দুর্নীতির সুযোগ করে দেয়ার পেছনে একধরনের গোপন উদ্দেশ্যের আভাস।
মনে হয়, দেশের গ্যাস খাতে ধস নামানোর একটি গোপন নীলনকশা যেন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সবার অগোচরে। এমন ধারণার কারণ, দীর্ঘমেয়াদি অনুসন্ধান কার্যক্রমে স্থবিরতার পেছনে ইচ্ছাকৃত অবহেলা ও উদ্যোগহীনতার নানা দৃষ্টান্ত। এখন গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে আমদানি করা হচ্ছে এলএনজি গ্যাস। শুধু আগামী অর্থবছরেই ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে এ খাতে। আর ভর্তুকির টাকা আদায় করা হচ্ছে জনগণের পকেট কেটে, বারবার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতো আমরাও মনে করি, কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন থেকে বেরিয়ে এলে, অবাঞ্ছিত ব্যয়, দুর্নীতি ও গ্যাস চুরি বন্ধ করলে ভর্তুকি কিংবা মূল্যবৃদ্ধি কোনোটারই প্রয়োজন পড়ে না; বরং গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিটে ১৬ পয়সা কমানো সম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের প্রশ্ন, সরকারের ব্যর্থতার দায় কেন জনগণকে নিতে হবে?

 


আরো সংবাদ



premium cement
কুড়িগ্রামে পিলখানা হত্যার তদন্ত ও চাকরিতে পূর্ণবহালের দাবি গাজা যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত : হামাস অ্যাডভোকেট সাইফুল হত্যা : সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবীদের প্রতিবাদ সমাবেশ নৌ-পরিবহন উপদেষ্টার সাথে মালদ্বীপের হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ হিজবুল্লাহ-ইসরাইল অস্ত্রবিরতি চুক্তিকে স্বাগত বিশ্ব নেতাদের আয়ারল্যান্ডকে ১৫৪ রানে হারিয়ে রেকর্ড গড়ল টাইগ্রেসরা ববিতে চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি মার্কিন দূতাবাস থেকে বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তির বিষয়ে সব পক্ষের মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের হাসিনার পালানোর দৃশ্য মনে করতে বললেন ফারুকী ঢাকা ইপিজেড ও সংলগ্ন এলাকায় ১২ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে গ্যাস

সকল