ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে
- ০৫ জুন ২০২২, ০০:০০
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বিশেষ করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কতটুকু ভোগ করতে পারছেন; তা নিয়ে দেশে-বিদেশে আলোচনা-সমালোচনার মাত্রা বেড়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো- জোরজবরদস্তি করে নিজের মত অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়া পছন্দনীয় হয়ে উঠেছে আমাদের সমাজ-বাস্তবতায়। এ জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ভিন্নমত দমনে সরকারদলীয় অনেক নেতা বিরোধীদের কণ্ঠ রোধ করতে সচেষ্ট। কিন্তু গণতান্ত্রিক শাসন-ব্যবস্থায় এই পরিস্থিতি গ্রহণীয় হতে পারে না। তবে যতই অগ্রহণীয় হোক না কেন; বাস্তবে এ অবস্থা ব্যক্তিপর্যায় থেকে শুরু করে সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে বাড়ছে বৈ কমছে না। ক্ষেত্রবিশেষে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও ভিন্নমতের লোকজনকে মুক্তভাবে মতপ্রকাশ করতে দিতে অনিচ্ছুক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপকভাবে এটা পেয়ে বসেছে ক্ষমতাসীনদের কর্মকাণ্ডে। এ প্রবণতা রোধ করা না গেলে তা আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।
প্রশ্ন হলো- এটি রোধের উপায় কী? জবাবে নিশ্চিত করে বলা যায়, গণতান্ত্রিক শাসন-ব্যবস্থা জোরদারের মধ্য দিয়েই এ থেকে নিষ্কৃতি মিলতে পারে। আর সবার জানা, গণতান্ত্রিক শাসনে সর্বপ্রথম হতে হবে অবাধ নির্বাচন। কিন্তু বাংলাদেশে গত দু’টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং এর ধারাবাহিকতায় স্থানীয় নির্বাচনও অবাধ নিরপেক্ষ হয়েছে, কেউ তা দাবি করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। উপন্তু এবলা বলা যায়- আমাদের নির্বাচন-ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অথচ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ভোট গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পালাবদল বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। আমাদের দেশে এই স্বীকৃত পন্থার ব্যত্যয় ঘটেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন একতরফা হয়েছে। একইভাবে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে রাতেই ব্যালটবাক্স ভরে ফেলায় বিদেশী গণমাধ্যম ‘নিশি ভোটের’ তকমা দিয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বিদেশী বন্ধুরাষ্ট্র ও উন্নয়ন অংশীজন গণতন্ত্রের স্বার্থে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও স্বচ্ছ হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করছে; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তি। এই ধারাবাহিকতায় ওয়াশিংটনে গত শুক্রবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নিড প্রাইস বলেছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসন, মানবাধিকার, শ্রম অধিকারসহ মৌলিক অধিকার, নিরাপত্তা এবং শরণার্থীদের সুরক্ষা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে আমাদের শক্তিশালী অংশীদারিত্ব রয়েছে। এই অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে আমরা অনেক ইস্যু তুলতে পারি ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করতে পারি। এ আলোচনা আমরা প্রকাশ্যে অথবা ব্যক্তিগতভাবে করে থাকি। মুখপাত্র আরো বলেন, সমাবেশের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদের অধিকার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মতো বাংলাদেশের জন্যও এটি সমানভাবে প্রযোজ্য। আমরা নিরাপত্তাবাহিনী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে এ অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানাই। এ দিকে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও গত মঙ্গলবার কূটনৈতিক সংবাদদাতা সমিতির (ডিকাব) সাথে মতবিনিময়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে অবশ্যই গণতন্ত্র অর্থাৎ গণতান্ত্রিক শাসন-ব্যবস্থা জোরদারের বিকল্প নেই। তাই সবার আগে অগ্রাধিকার দিতে হবে অবাধ নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ভোট গ্রহণের ওপর, যাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার শান্তিপূর্ণ পথ সুদৃঢ় হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে যারাই ক্ষমতায় আসুন না কেন তারা যেন জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব করেন। তার জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ হচ্ছে; বাধাহীন শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করার পরিবেশ নিশ্চিত করা। মানে, বিশ্ব স্বীকৃত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার নিশ্চিত করা। এই পরম্পরায় চূড়ান্ত পর্যায়ে সব রাজনৈতিক দলকে স্বচ্ছ নির্বাচনের একটি গ্রহণযোগ্য পথ খুঁজে বের করাই হবে এখনকার রাজনৈতিক কর্তব্য।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা