ফলাফলটাই সবার কাছে মুখ্য
- ০২ জুন ২০২২, ০০:০০
ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ছে। এই বোরোর মৌসুমে দেশে মোট চালের প্রায় ৫৫ শতাংশ উৎপাদিত হয়। এ সময় প্রতি বছর দাম কমে। এবার তার উল্টো চিত্র। রাজধানীর বাজারে এক সপ্তাহ আগে মিনিকেট চাল ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন মূল্য দাঁড়িয়েছে ৬৭-৭০ টাকায়। বেড়েছে অন্যান্য চালের দামও।
বলা হচ্ছে, এই মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিক। মিলমালিক ও ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও মজুদদারি দাম বৃদ্ধির কারণ। মূল্যবৃদ্ধি রোধে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আটটি টিম রাজধানীতে অভিযানে নেমেছে। দেশের অন্যান্য জায়গায়ও অভিযান চলবে। এই অভিযানের লক্ষ্য- মজুদদারি ঠেকানো। অবৈধভাবে চাল মজুদ করে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করছে কি না এসব টিম তা খতিয়ে দেখবে। অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
দেশে মন্ত্রণালয়গুলো আছে জনগণের কল্যাণের জন্য। আছেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীসহ নানা পর্যায়ের পদাধিকারী। কিন্তু তারা কী কাজ করেন বোঝা মুশকিল। কারণ বছরজুড়েই চালসহ সব জিনিসের দাম অস্থিতিশীল হলেও খাদ্য অথবা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেইনি বা নিতে পারেনি। বর্তমানে যে টিম নামানো হয়েছে সেটিও জনস্বার্থ রক্ষায় দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে নয়, নেমেছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ প্রতিপালন করা হয়েছে এটা দেখানোর জন্য। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, ভরা মৌসুমেও চালের দাম বাড়ছে কেন? পরে মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়।
যেভাবেই হোক, টিম মাঠে নেমেছে এটাই একটা সুখবর। কিন্তু যেভাবে অভিযান চালাচ্ছে তাতে আদৌ কোনো ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে এমন আশা করার কারণ নেই। দু’টি বড় চালের বাজারে টিমের অভিযানের সময় ব্যবসায়ীরা দোকান ছেড়ে পালিয়ে যায়। একটি বাজারে দু’জন দোকানিকে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এগুলো লোকদেখানো কর্মকাণ্ড বলেই মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ঘোষণা দিয়ে অভিযান চালালে মজুদদাররা স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসে বলবে, এই নিন, আমার কাছে এত টন অবৈধ মজুদ আছে নিয়ে যান। এটা কি বাস্তবসম্মত?
মজুদদারি রোধে ব্যবস্থা নিতে মাঠপ্রশাসন, এনএসআই, র্যাব ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে চিঠি পাঠানো হবে। কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়সভা করারও নির্দেশ এসেছে। জনগণ যাতে অবৈধ মজুদের তথ্য জানাতে পারে সে জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কয়েকটি টেলিফোন নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এসব ব্যবস্থা সদুদ্দেশে নেয়া হচ্ছে কি না তা নিয়ে সংশয় জাগে। কারণ মজুদদারি ঠেকাতে হলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে কাজে লাগানোর কথা। অথচ দায়িত্ব চাপানো হচ্ছে জনগণের কাঁধে। ক্ষমতাসীন দলের সাথে সংশ্লিষ্ট একজন ধনাঢ্য প্রভাবশালী মজুদদারের বিরুদ্ধে তথ্য দেবেন এটা কি বাস্তবে সম্ভব?
চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে চালের দাম বাড়ার বিষয়ে এক সভায় খাদ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, যখন জাতীয় মজুদ সর্বোচ্চ তখন চালের দাম বেড়ে যাওয়াটা ‘ভালো ঠেকছে না’। চালকল মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের আমি অনুরোধ করব, কোথায় কোথায় ধান মজুদ আছে, সেই তথ্যগুলো জেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে দিন। সুনির্দিষ্ট করে বলতে হবে, কার কাছে ধান মজুদ আছে। দয়া করে তথ্যটা দিন। আমরা কিন্তু আপনাদের চালকলে ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করিনি। চাল জব্দ করিনি। ব্যবসা করছেন, লাভ হচ্ছে কি লোকসান হচ্ছে, সেটি আপনারাই বুঝবেন। আমি এগুলো বুঝতে চাই না। আপনারা দয়া করে আমাদের সহযোগিতা করুন।’
আসলে পুরো ব্যাপারটাই সবার জানা। মজুদদারদের ছাড় দিয়ে ইচ্ছেমতো ব্যবসায় করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কাজেই যেসব পদেক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তার সবই জনগণের চোখে ধুলো দেয়ার চেষ্টা কি না এমন প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা