২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি, ভোগান্তিতে ঢাকাবাসী

উন্নয়নকাজে চরম সমন্বয়হীনতা

-

বৈশ্বিক যেকোনো তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, বিশ্বে বসবাসের অনুপযোগী বড় শহরের মধ্যে ঢাকা অন্যতম। এই নগরীর বায়ু এবং শব্দদূষণের মাত্রা বহু আগেই সহনীয় পর্যায় ছাড়িয়ে উচ্চ ঝুঁকিতে পৌঁছেছে। বাস্তবে উন্নয়নকাজের ডামাডোলে ঢাকা এখন দূষিত নগরী। ফলে এর অধিবাসীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। নগরবাসী সবসময় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। এ থেকে নিষ্কৃতি পেতে চান তারা। তবে নগরের উন্নয়নকাজে যে সমন্বয়হীনতা এবং পরিকল্পনার অভাব, তাতে নিকট ভবিষ্যতে নিষ্কৃতি মিলবে এমন লক্ষণ আপাতত দৃশ্যমান নয়।
রাজধানীতে সাম্প্রতিক সময়ের মেগা প্রজেক্ট মেট্রোরেলের কাজ চলছে কয়েক বছর ধরে। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় লাইন সম্প্রসারণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়েও রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে। এতে করে ঢাকা এখন ধুলার নগরীতে পরিণত হয়েছে। অন্য দিকে এলাকাভিত্তিক সড়ক উন্নয়নে রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে। এতে ওই সব সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নগরবাসী। এর ওপর রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভন্ন সড়কে পয়ঃনিষ্কাশন নালা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। এ জন্য দেড় শতাধিক স্থানে জলাবদ্ধতার স্থান চিহ্নিত করে ওই সব জায়গায় সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি।
নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শহরের উত্তর যাত্রাবাড়ীর যে সড়কেই চোখ যায় প্রায় প্রতিটিই খুঁড়ে রাখা হয়েছে। কোথাও পয়ঃনিষ্কাশন নালা নির্মাণ, কোথাও রাস্তা সংস্কার করা হচ্ছে। এক দিকে রাস্তা খুুঁড়ে সেই মাটি তুলে রাখা হয়েছে সড়কের অন্য দিকে। এতে রাস্তা সরু ও বৃষ্টির পানিতে কাদাপানি হয়ে একাকার হয়ে পড়ছে। ফলে ওই সব সড়কে চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষজনকে। পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকা চানখাঁরপুলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। বাসাবো বৌদ্ধমন্দির থেকে কালিবাড়ী সড়কে তিন মাস ধরে কাজ চলছে। শুরুতে সড়ক বড় করতে কিছু অবৈধ স্থাপনা ভাঙা হয়। রাস্তার দু’পাশে এতদিন ফুটপাথ ছিল না। এখন পয়ঃনিষ্কাশন নালা নির্মাণ করে ফুটপাথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে কোথাও কোথাও রাস্তা সরু হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ দিন থেকে রাস্তার উন্নয়নের কাজ করায় কাদাপানিতে ওই সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। বরং হেঁটে চলাও দায় হয়ে উঠেছে। এ দিকে নারিন্দার বেশ কয়েকটি সড়কে পয়ঃনিষ্কাশন নালার নির্মাণকাজ গত তিন মাসেও শেষ হয়নি। এ জন্য সেখানকার ওই সব সড়ক এখন যাতায়াতকারীদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। দোকানের সামনে মাটির স্তূপ থাকায় ক্রেতারা আসতে পারছেন না। মালামাল ওঠা-নামাতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
কমলাপুরের টিটিপাড়ার ব্যস্ততম সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এর জন্য মাঝে মধ্যে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারীদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। গত কয়েক দিন আগে রাস্তার এক লেন বন্ধ করে দেয়া হয়। শুধু এক লেন দিয়ে দুই দিকের গাড়ি চলতে গিয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। কমলাপুর রেলস্টেশনগামী সড়কের পশ্চিম লেনে দীর্ঘ দিন থেকে ড্রেন নির্মাণ ও সড়ক উন্নয়নে কাজ চলছে। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার নাম নেই। কোনো রকমে পিচ ঢালাই দিয়ে রাখলেও কাজ সম্পূর্ণ না করায় নিয়মিত দুর্ভোগ নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে পথচারীসহ সব ধরনের যানবাহনের যাত্রীদের। এ দিকে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় দীর্ঘ দিন থেকে রাস্তা উন্নয়নে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। কিন্তু কাজ শেষের নাম নেই। এ পথে চলতে গিয়েও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
শুধু উল্লিøখিত এলাকাগুলোই নয়; রাজধানীর আরো অনেক জায়গায় অপরিকল্পিত উন্নয়নকাজ চলছে। কিন্তু কোথাও সমন্বয় নেই। অথচ সরকারের সেবা সংস্থাগুলো উন্নয়নকাজ হাতে নেয়ার আগে আন্তঃসংস্থাগুলোর সমন্বয় থাকলে নগরবাসীর ভোগান্তি অনেকাংশে কমতে পারত।


আরো সংবাদ



premium cement