২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে অস্ত্রের ব্যবহার

কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না সরকার

-

সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়েছে। কয়েক দিন আগে ছাত্রদলের ওপর আক্রমণের সময় ছাত্রলীগের হাতে দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন প্রতিহত করতে প্রকাশ্যে এর ব্যবহার করেছে তারা। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আধিপত্য ধরে রাখতে আগ্নেয়াস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার চলছে। স্থানীয় নির্বাচনে বিজয়, হাটবাজার-বন্দর ও স্টেশনের দখল ধরে রাখতে পেশিশক্তি হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের বিবদমান পক্ষ একে অপরের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করছে। দেশের নানাপ্রান্তে বিভিন্ন স্তরের নেতা এর ব্যবহার বাড়াচ্ছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ ব্যবহার আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে সন্ত্রাসীদের পাকড়াও করা কঠিন না হলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় তারা পার পেয়ে যাচ্ছে।
সহযোগী একটি দৈনিকে ‘এত আগ্নেয়াস্ত্র কিনছে কারা’ শিরোনামে একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে। মার্চের শেষের দিকে রাজধানীর মতিঝিলে আওয়ামী লীগের একাংশের প্রভাবশালী সদস্য জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার আগে গত বছর নভেম্বরে কুমিল্লা শহরের একজন প্রভাবশালী কাউন্সিলর তার এক সহযোগীসহ দুর্বৃত্তদের গুলিতে প্রাণ হারান। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রামের স্থানীয় দু’টি নির্বাচনে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হয়, তাতে দু’জন প্রাণ হারান। পত্রিকাটি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের আরো নজির তুলে ধরেছে। মূলত স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সর্বশেষ নির্বাচনে সারা দেশে আগ্নেয়াস্ত্রের বিপুল ব্যবহার ও এতে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
চলতি বছর প্রথম চার মাসে র্যাব ৮৫৮টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে। গত বছর সর্বমোট ৮৪৬টি অস্ত্র উদ্ধার করে সংস্থাটি। এতে বোঝা যাচ্ছে, চলতি বছরে অস্ত্র উদ্ধার অনেক বেড়ে গেছে। অস্ত্র ধরা পড়ার একটি গড় হার রয়েছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর প্রস্তুতি অনুযায়ী, প্রতি পাঁচটি অস্ত্র চালানের মধ্যে একটি ধরা পড়ে। এটি একইভাবে অস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি ইন্ডিকেট করছে।
অস্ত্রপাচারের বিভিন্ন রুট রয়েছে। আবার দেশের অভ্যন্তরে এটি তৈরির কারখানাও রয়েছে। সাথে যুক্ত হচ্ছে বৈধ লাইসেন্সকৃত অস্ত্র। এগুলোর মধ্যে থেকেও একটি অংশ অবৈধভাবে ব্যবহার হচ্ছে। রাজনৈতিক সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র আসছে প্রতিবেশী দু’টি দেশ থেকে। ভারত থেকে পিস্তল রিভলবারসহ ক্ষুদ্রাস্ত্র আসছে বেশি, মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ভারী অস্ত্রও ঢুকছে। বোমা তৈরির কাঁচামাল বিস্ফোরক দ্রব্যও আসছে। সীমান্তে কিছু দিন পরপর বিজিবি আটক করছে এসব সামগ্রী। কোন জেলা দিয়ে কী ধরনের অস্ত্র প্রবেশ করছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সূত্রে জানা যাচ্ছে। পার্বত্য জেলায় অস্ত্র চোরাকারবারিদের নামও পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় দেশে অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। ইউরোপ থেকে ডাকযোগে অস্ত্রের চালান ধরা পড়ার ঘটনাও ঘটেছে।
মাদককারবারি ও মানবপাচারকারী চক্র অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। তারা ব্যবসার সুবিধার্থে অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহে রাখে। নানা সময় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও দেশ থেকে মাদক ও মানবপাচারকারীদের উপড়ে ফেলা জায়নি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- আগ্নেয়াস্ত্রের রাজনৈতিক ব্যবহার। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হাতে অবৈধ অস্ত্র দেখা যাচ্ছে। সেগুলো দিয়ে নির্বাচনে জেতা, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের মতো অবৈধ কর্মকাণ্ড সমানে চালাচ্ছেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেও এটা দেখা গেল। নির্বাচন সামনে রেখে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় অবৈধ অস্ত্র প্রবেশে ও এর ব্যবহার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। সরকার এ ব্যাপারে এখনো কোনো ধরনের সক্রিয়তা দেখাচ্ছে না। দেশের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে এ নিয়ে অবশ্যই সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement