২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
আয়-ব্যয়ে ভারসাম্য থাকছে না

শহর ছেড়ে যাচ্ছে মানুষ

-

মহামারী করোনার দীর্ঘ দু’টি বছর বড় কষ্টেসৃষ্টে পার করেন দেশের বেশির ভাগ মানুষ। করোনা পরিস্থিতি কোনোভাবে কাটিয়ে এসেছেন তারা। আশা ছিল করোনার পর ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে আসবে; কিন্তু সে আশা এখনো অধরা। উল্টো নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় আশা এখন দুরাশায় রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্তর জীবন ধারণ হয়ে উঠেছে কঠিনতর। বাস্তবতা হলো, চলতি বছরের শুরু থেকে নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যাওয়ায় দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী বিপাকে পড়েছে। মূল্য বৃদ্ধির সেই প্রবণতা এখনো অব্যাহত। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে শহরে থাকার মতো আর্থিক সঙ্গতি হারিয়ে ফেলছেন অনেকেই।
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, নিত্যপণ্যের দাম কয়েক গুণ বাড়লেও বেশির ভাগ মানুষের আয় এক পয়সাও বাড়েনি; বরং করোনাকালে অনেকের আয় যতটা কমেছিল; সেই পরিমাণ অর্থ এখনো অনেকেই আয় করতে পারছেন না। জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে আয় বাড়েনি। ফলে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ দুর্বিষহ জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত নিত্যপণ্যের দামে চিঁড়েচ্যাপটা অবস্থা। ফলে উপায়ান্তর না দেখে শহরাঞ্চলে বসবাসকারী মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর অনেকে পরিবার-পরিজন গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
সরকারি-বেসরকারি পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে, দেশের অর্থনীতিতে এখন মন্দাভাব স্পষ্ট। ডলারের তুলনায় টাকার মান কমে গেছে। এতে করে মুদ্রাস্ফীতি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। আমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এই সুযোগে দেশে উৎপাদিত পণ্যের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী, যার কারণে স্বল্প আয়ের মানুষ জীবন নির্বাহ করতে অসহায় হয়ে পড়েছে। তারা আয়-ব্যয়ে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছে না। বলা ভালো, পরিবার নিয়ে জীবন ধারণ করাই তাদের কাছে দায় হয়ে উঠেছে।
অবস্থা এমন যে, প্রতিদিনের খাওয়া কমিয়ে দিতে হয়েছে অনেক পরিবারকে। করোনাকাল থেকে এখন পর্যন্ত খেয়ে না খেয়ে দিন গুজরান করলেও বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে আর তাল মেলাতে পারছে না তারা। দুর্বিষহ এই পরিস্থিতিতে শহুরে জীবন ছেড়ে অনেকে পাড়ি দিচ্ছে গ্রামে। কষ্টের জীবন থেকে রেহাই পাওয়ার একটু চেষ্টা এই শহর জীবন ত্যাগ করা।
স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর খাদ্য তালিকায় মাছ-গোশত অনেক দিন ধরেই উধাও। মাছের ধারেকাছে যেতে না পেরে ভরসা ছিল ডিম। কোনোভাবে ডিম আর সবজি দিয়ে খেয়ে জীবন কাটছিল তাদের। এখন সেই ডিমের দামও প্রতিটি ১২ টাকার কাছাকাছি। এ দিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে, গ্যাসের দাম বাড়বে। এত চাপ নিয়ে কিভাবে চলবে সাধারণ মানুষ? সামনে আরো কঠিন দিন আসছে। কম খেয়ে, খাদ্য তালিকা কাটছাঁট করেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না অনেকের। তাই বাধ্য হয়ে পরিবারের সদস্যদের পাঠিয়ে দিচ্ছে গ্রামের বাড়িতে। টিকে থাকতে তাদের কাছে আপাতত এর চেয়ে ভালো কোনো বিকল্প নেই।
সরকার উন্নয়নের কথা জোরগলায় প্রচার করলেও তা যে দেশের বেশির ভাগ মানুষের জীবনে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারছে না তা না বলাই ভালো; বরং আমরা বলতে চাই, সাধারণ মানুষের জীবনমান ধরে রাখতে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে যথাসম্ভব বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। সাথে সাথে গণমানুষের কষ্ট লাঘবে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে শহরাঞ্চলে ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহ বাড়াতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement