প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু সুরাহা হোক
- ২৮ মে ২০২২, ০০:০০
বেশ কয়েক বছর ধরে গুম নিয়ে বাংলাদেশে ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর কেউ এর দায়-দায়িত্ব শিকার করছিল না। আবার এ নিয়ে সরকারি দায়িত্বশীল সংস্থার কোনো শাখা-প্রশাখা নিজেদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের নিষ্পত্তিও করেনি। নিরপেক্ষ কোনো সংস্থা এ নিয়ে তদন্তেরও সুযোগ পায়নি। তাদের মধ্য থেকে যারা জানপ্রাণ নিয়ে ফিরেছেন সবাই এ ব্যাপারে অজ্ঞাত কারণে সম্পূর্ণ মুখ বন্ধ রেখে ভীতি আরো বাড়িয়েছেন। গুম হওয়ার পর আবার কারো কারো লাশ পাওয়া গেছে। গুমের অভিযোগগুলো আন্তর্জাতিক ফোরামে জোরালো উত্থাপিত হওয়ার পর পরিস্থিতি এখন বদলাতে শুরু করেছে। প্রথমে সরকার কায়দা কানুন করে প্রসঙ্গটি এড়ানোর চেষ্টা করেছে। শেষ পর্যন্ত জানা যাচ্ছে, সরকার জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার পরিষদের কার্যক্রমে সাড়া দিতে শুরু করেছে। আশা করা যায়, অচিরেই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গুম হওয়া ব্যক্তিদের কেউ যদি বেঁচে থাকেন তারা উদ্ধার পাবেন।
জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপে ৭৬টি গুমের ঘটনার তথ্য-উপাত্ত দিয়েছে সরকার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সরকারের দেয়া উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ২৪ এপ্রিল তাদের ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, এতদিন যাবত সরকারের অস্বীকৃতির নীতিটি পরিবর্তিত হয়েছে। এ বিষয়ে সহযোগিতার নীতি গ্রহণ করায় গুমবিষয়ক কমিটি সরকারের প্রশংসা করেছে। তবে তারা উল্লেখ করেছে ৬৬ ঘটনায় সরকার পর্যাপ্ত তথ্য দেয়নি। আর ১০টি ঘটনাকে তারা গুম নয় বলে নাকচ করে দিয়েছে। অর্থাৎ ৭৬টি ঘটনার একটিও পূর্ণ নিষ্পত্তি হয়নি।
গুমের অভিযোগগুলো সরকারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়েছে। এ বিষয়ক প্রতিবেদনও তারাই রচনা করেছে। এমনকি গুম বিষয়ে আলোচনা করার জন্য জাতিসঙ্ঘের কমিটিকে এই সরকার বছরের পর বছর আসতে দেয়নি। জানা যাচ্ছে, এবার সরকার তাদের আগমনকেও স্বাগত জানাচ্ছে। এখন সদস্য হারানো পরিবার, দেশীয় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাকে সরেজমিন এ তথ্য যাচাই করার সুযোগ দিতে হবে। গুম হওয়া ব্যক্তি কোথাও রয়েছে সেটা তখন নিশ্চিত করে জানা যাবে। সরকারের মন্ত্রীরা অনেক সময় বলেছেন, নিজের থেকে লুকিয়ে গিয়ে কিংবা ঋণের দায় থেকে বাঁচা বা অন্য কোনো কারণে মানুষেরা আত্মগোপনে চলে যাচ্ছেন। এমনকি ভূমধ্যাসাগরে প্রাণ হারিয়ে গুম হয়েছেন বলে দাবি করছেন এমন পরিবারও রয়েছে, সরকারের দাবিমতে। এ ছাড়া এ নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করা হয়েছে বলেও গুম হওয়া পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, গুমের শিকার পরিবারগুলোর প্রতি বিভিন্ন বাহিনীর হয়রানির অভিযোগ। র্যাব ও এর কয়েকজন সদস্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর সারা দেশে এমন পরিবারের সদস্যদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। সংবাদমাধ্যমে সেটা প্রকাশ্যে বিস্তারিত না এলেও এমন চাপ প্রয়োগের খবর সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। জাতিসঙ্ঘ গুমবিষয়ক গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গুমের বিষয়ে অভিযোগকারী, গুম হওয়া ব্যক্তির স্বজন, আইনজীবী, সাক্ষীসহ সন্ধানের প্রক্রিয়ায় যুক্ত সংশ্লিষ্টদের সব ধরনের ভয়ভীতি ও প্রতিশোধমূলক হামলা থেকে রক্ষা করতে হবে। তাদের পক্ষ থেকে আরো স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় গুম হওয়া ব্যক্তিদের বা তাদের লাশ খুঁজে বের করতে বাংলাদেশ সরকারের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি।
গুমের শিকার পরিবারগুলো দীর্ঘ সময় ধরে কোনো ধরনের প্রতিকার আদায় করতে পারেনি রাষ্ট্র থেকে। তারা ‘মায়ের ডাক’ নামে একটি সংগঠন করে কোনো রকমে নাক উঁচিয়ে বেঁচেছিলেন মাত্র। গত বৃহস্পতিবার গুম সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনার থেকে তারা নিজেদের দীর্ঘ বঞ্চনার কথা উল্লেখ করেছেন। তারা এখন আরো বাড়তি দাবি নিয়ে মাঠে থাকতে চাইছেন। নিজেদের হারানো সন্তান ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি তারা একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা চান। যেখানে প্রতিটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা থাকবে। অন্তত রাষ্ট্রীয় বাহিনী কারো জীবন কেড়ে নেয়ার চিন্তা কখনো করবে না। আমরা মনে করি, দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংস্থা, গণতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক প্রভাবশালী রাষ্ট্র এবং সব নাগরিক এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করবেন। আমাদের রাষ্ট্রে সঙ্ঘটিত প্রত্যেকটি গুমের ঘটনায় প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল তা সুরাহার জন্য সবাই এক কাতারে এসে যাবেন। সরকারও সবার সাথে একাত্ম হয়ে এ অন্যায়ের অপনোদনে সুযোগ নিতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা