২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
ব্যাংক থেকে ধার করা বাড়ছে সরকারের

অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ধীর হতে পারে

-

ব্যাংক থেকে অর্থ ধার করা সরকারের জন্য নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরে সরকারগুলো এ কাজ করছে। এটি এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু সম্প্রতি তা অনেকটাই বেড়ে গেছে। আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি পূরণে বড় ধরনের ব্যাংক ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার।
নয়া দিগন্তসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রের খবরে জানা যাচ্ছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। এ ঘাটতি পূরণে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ধার করা হবে এক লাখ এক হাজার ৮১৮ কোটি টাকা। ফলে প্রথমবারের মতো ব্যাংক থেকে ঋণের পরিমাণ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ওই খবরে সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে বলা হয়, গত চার অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় দ্বিগুণ বা ১৯৪ শতাংশ বেড়েছে। এর পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়া হবে আরো ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যখন সঙ্কুচিত এবং অর্থনীতি করোনা মহামারীর ধকল কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে সেই সময় ব্যাংকঋণ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া মন্থর করতে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে ছয় লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রাক্কলন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এতে রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে চার লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৫.৫৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতি জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। ওই হিসাবে ঘাটতি কমছে; কিন্তু টাকার অঙ্কে ঘাটতি বাড়ছে ৩০ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা।
ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে যদি সরকারই লাখ কোটি টাকা ধার নেয় তাহলে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রাপ্তি অনিশ্চিত হবে। ফলে বেসরকারি খাত ব্যাংক ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারে। এটা এমন সময়ে ঘটছে যখন বেসরকারি খাত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। গত মার্চে বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এরই মধ্যে ব্যাংকগুলোতে তারল্যসঙ্কট তীব্র হয়েছে। কলমানি রেট বেড়েছে। সর্বোপরি ডলারের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। আমদানি ব্যয় বিপুলভাবে বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যমূল্য মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। একটি জাতীয় দৈনিকে সরকারি সংস্থার পরিসংখ্যান দিয়ে বলা হয়েছে, একজন শ্রমজীবী মানুষের এক দিনের খাবারে প্রয়োজন মতো চাল, আটা, ডাল, তেল, আলু ও চিনি কিনতে বছর তিনেক আগে যে ব্যয় হতো, এখন তার চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি খরচ হচ্ছে।
লক্ষণীয়, অর্থনীতির সূচকগুলোর বেশির ভাগ নেতিবাচক প্রবণতার দিকে যাচ্ছে। তবে রফতানিতে কিছুটা ভালো অবস্থা দেখা যায় বিশেষ করে তৈরী পোশাকের কল্যাণে। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের প্রধান অন্য খাত প্রবাসী আয়ে রীতিমতো ধস নেমেছে। বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি লাগামছাড়া বেড়েছে। মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে।
এ অবস্থায় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া অর্থনীতির জন্য শুভ ফল বয়ে আনবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন না। তারা সরকারকে মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরা এবং প্রবাসী আয় বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
আমরা মনে করি, বিপুলায়তন বাজেট প্রণয়নের পরিবর্তে অর্থনীতির সতেজ বিকাশে সরকারের মনোযোগ দেয়ার সময় এসেছে। এ জন্য আপাতত নানা ধরনের অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বিলাসদ্রব্য আমদানি বন্ধ করে সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তিকর অবস্থা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ বেশি জরুরি।


আরো সংবাদ



premium cement