জীবনযাত্রার ব্যয়ে চাপ বাড়বে
- ২২ মে ২০২২, ০১:৫৫
গত এক যুগে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এ সময় পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ দাম বেড়েছে। এখন পাইকারি পর্যায়ে গড়ে প্রায় ৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গঠিত ‘কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি’। বিইআরসির কারিগরি কমিটি যে ৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে, তা ভর্তুকি ছাড়া। এর মানে, পাইকারিতে বাড়লে খুচরায়ও দাম বাড়বে।
বিইআরসির কারিগরি কমিটি দাম বাড়ানোর যে সুপারিশ করেছে, তা জানানো হয় গত বুধবার কমিশন আয়োজিত গণশুনানিতে। এর আগে পিডিবি বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৬৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়াতে বিইআরসির কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল। গণশুনানিতে দাম বাড়ানোর সুপারিশের তীব্র বিরোধিতা করেন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা। বিদ্যুতের দাম বাড়লে শিল্পকারখানা ও ব্যবসাবাণিজ্যে কী কী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তা তুলে ধরেন তারা।
গণশুনানিতে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো হলেও বিদ্যুৎ খাতে পরিকল্পিত উন্নয়ন হয়নি। ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। বসিয়ে বসিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ভাড়া দিতে হচ্ছে। এ জন্য গত এক দশকে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি গেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়ায়। বন্ধ না করে উচ্চ ব্যয়ের ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (কুইক রেন্টাল) মেয়াদ বারবার বাড়ানো হয়েছে। বেশি দক্ষতার কেন্দ্রের বদলে কম দক্ষতার কেন্দ্র চালানোয় উৎপাদন খরচ বাড়ছে। অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর না দিয়ে চড়া দামের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হচ্ছে। বাড়তি খরচের এ বোঝা চাপছে গ্রাহকের ওপর।
কারিগরি কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বেশ কিছু অসঙ্গতি চিহ্নিত করে গণশুনানিতে দাম বাড়ানো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। গ্যাসের দাম এখনো বাড়ানো হয়নি। অথচ গ্যাসের দাম সাড়ে ২২ শতাংশ বাড়তি ধরে পিডিবির খরচ হিসাব করা হয়েছে। এর আগে দাম বাড়ানোর সময় কুইক রেন্টালের মেয়াদ না বাড়ানোর নির্দেশনা ছিল কমিশনের। সেটি না মেনে সম্প্রতি পাঁচটি কুইক রেন্টালের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এসব কেন্দ্রের খরচ হিসাব করেছে কারিগরি কমিটি। ফার্নেস অয়েলে শুল্ক ও কর অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার এবং কয়লায় ভ্যাট আরোপকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় বাড়ার কারণ হিসেবে তুলে ধরে ক্যাব। সংগঠনটির অভিযোগ, কম দক্ষতার কেন্দ্র চালিয়ে উৎপাদন খরচ বাড়ানো হচ্ছে। বিদ্যুতের দক্ষ ব্যবহার, সেবার মান, জ্বালানি পরিচালনা, আন্তর্জাতিক মান ও কৌশল অনুসরণে পিডিবির দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দীর্ঘ দিনের।
জ্বালানির ওপর আরোপিত করভার ভোক্তাসহ দেশের উৎপাদনশীল কাজের ওপর চাপিয়ে দেয়া আত্মঘাতী প্রবণতা। তাই বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সুপারিশ কোনোভাবেই বিবেচনাযোগ্য নয়। এর দাম বাড়লে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হবে। ফলে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে। এ ছাড়া করোনা-উত্তর রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতি মিলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন বড় সমস্যা। এ সঙ্কটের সময় দাম বাড়ানোর সুপারিশ সুবুদ্ধির পরিচয় বহন করে না; বরং দাম না বাড়িয়ে পিডিবির ঘাটতি মোকাবেলায় যেসব পরামর্শ বিশেষজ্ঞরা দিয়েছেন তা বিবেচনায় নেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে ক্যাব হিসাব দিয়ে দেখিয়েছে, পাইকারি পর্যায়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি সমন্বয় করেও তিন হাজার ৩৭২ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রাখা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের মতো আমরাও মনে করি, ভর্তুকি প্রদান না করে এবং খরচ কমানোর যথাযথ পদক্ষেপ না নিয়ে অযৌক্তিক ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যুৎ যেহেতু অর্থনীতিসহ জনজীবন সচল রাখার অন্যতম প্রধান বিষয়, এ খাতে দেয়া ভর্তুকিকে নিছক লোকসান হিসেবে না দেখে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে। এমনিতেই নানামুখী চাপে মানুষ। এ জন্য বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সুপারিশ থেকে সরে আসতে হবে অবিলম্বেই।
করোনাকালে দেশের বেশির ভাগ মানুষের আয় কমে যাওয়া, বর্তমানে নিত্যপণের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ালে নাগরিক জীবনযাত্রার ব্যয়ে আরো চাপে পড়বে, এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা