দুর্গতদের পাশে দাঁড়াই
- ১৯ মে ২০২২, ০০:০০
বর্ষা আসতে এখনো মাসখানেক বাকি; কিন্তু এখনই সিলেটের বেশির ভাগ এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন স্থান পানিতে তলিয়ে গেছে। সিলেট নগরীরও বেশির ভাগ এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। শুধু সিলেট নয়; বৃহত্তর সিলেটই এই অসময়ে বন্যাকবলিত। পানির তোড়ে ভেঙে যাচ্ছে নদীরক্ষা বাঁধ। অন্য দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্রমতে, দক্ষিণাঞ্চলের জেলা বরগুনায় তিনটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ওই জেলার নদীতীরের বাড়িঘর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উজানে বৃষ্টি না থামলে পুরো সিলেট অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।
ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সবটুকু পানির ধারণ করতে পারছে না সিলেটসহ সারা দেশের নদ-নদীগুলো। সময় যত যাচ্ছে, সিলেটে ততই জোয়ারের মতো পানি বাড়ছে। এতে বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতসহ সবই পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। অবস্থা এতই ভয়াবহ যে, খোদ সিলেট নগরীর বহু বাসায় এখন হাঁটুপানি। আর কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হলে পুরো নগরীই তলিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা পাউবোর।
পাউবোর তথ্যমতে, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত পাঁচ দিনে এক হাজার ২৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিপাত হচ্ছে সিলেটেও। এতে করে দ্রুত বাড়ছে এ অঞ্চলের নদ-নদীর পানি। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশে বেশি বৃষ্টি হয় সুনামগঞ্জের ছাতকে- ১৮৭ মিলিমিটার। সিলেটে ৭২, লালাখালে ১৭৫, কানাইঘাটে ৭০, শেওলায় ১২৭, জকিগঞ্জে ১১৯, জাফলংয়ে ১৬৭ এবং লাটুতে ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অন্য দিকে সুনামগঞ্জে ১০২, একই জেলার লরেরগড়ে ১০০, মহেশখোলাতে ৬১, কুড়িগ্রামে ৫৯ এবং নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে ৯৫ ও নেত্রকোনার জারিয়াজঞ্জালে ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস- ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীর পানি বাড়ছে, যা আগামী দু’দিন অব্যাহত থাকতে পারে। বৃষ্টিপাতে দেশের উত্তরাঞ্চলের ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানি বাড়ছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে, যা আরো বেশ কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আর উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর মধ্যে- সুরমা, কুশিয়ারা, ভোগাই, কংস, ধনু-বাউলাই, খোয়াই, মুহুরী নদীর কয়েকটি পয়েন্টে দ্রুত পানি বাড়তে পারে।
নয়া দিগন্তের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিলেট সদর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও জৈন্তাপুরে লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এসব উপজেলার প্রধান কয়েকটি সড়কও তলিয়ে গেছে। ফলে গ্রাম থেকে উপজেলা সদর কিংবা জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ওই অঞ্চলের আরেক জেলা সুনামগঞ্জও বন্যাকবলিত। সেখানেও হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী। বন্ধ হয়ে গেছে চুনা কারখানা, ক্রাশার মিল। নদীতে নৌকা-কার্গো লোড-আনলোড বন্ধ। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বহু শ্রমিক। তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
সিলেটে অসময়ে এই বন্যা পরিস্থিতির জন্য বৃষ্টি আর উজানের ঢলের ভূমিকা আছে সত্য; কিন্তু সুরমা নদীর নাব্যসঙ্কট, সিলেট নগরীর ড্রেন, নালা, ছড়া পরিষ্কার না থাকা, ময়লা-আবর্জনা ফেলে এগুলোর গতিপথ আটকে দেয়া, কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারির অভাব- এসবও এ দুর্ভোগের জন্য দায়ী। এসব সমস্যা দূর করতে চাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা; কিন্তু এই মুহূর্তে বন্যার কারণে পানিবন্দী মানুষের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা জরুরি। একই সাথে বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহ করতে হবে। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি সবার দায় রয়েছে। তবে বেদনার বিষয় হলো, দেশে আগের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিতদের সহায়তায় তেমন সাড়া মিলছে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা