সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দিতে পারে
- ১৭ মে ২০২২, ০০:০০, আপডেট: ১৬ মে ২০২২, ২১:২৪
বই পড়ায় বাঙালির আগ্রহ সামান্যই। এ নিয়ে নানা রসাত্মক কথাও চালু আছে। একজন শিক্ষিত মানুষ শিক্ষাজীবন শেষে বা কর্মজীবনে একটিও বই পড়েননি এমন নজির ভূরি ভূরি। মনন বিকাশের উপযোগী সৃজনশীল সাহিত্য দূরে থাক পেশাগত বিষয়ের বইপড়া মানুষও মুষ্টিমেয়। বই না পড়ায় মেধা-মননের যে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে তার প্রমাণ আমাদের প্রতিদিনের যাপিতজীবনে স্পষ্ট। যুক্তির পরিবর্তে কুযুক্তি, সুন্দরের বদলে কদর্য দিন দিন সমাজে জেঁকে বসছে। বেশির ভাগ উচ্চশিক্ষিত মানুষ মাতৃভাষায় মনের ভাব শুদ্ধ করে প্রকাশ করতে পারেন না- এটাই বাস্তবতা।
এ পরিস্থিতিতে দেশের কোনো অঞ্চলে বই পড়ার আন্দোলন গড়ে উঠছে বা তরুণ-তরুণীরা নিয়মিত বই পাঠ ও আলোচনা, পর্যালোচনায় অংশ নিচ্ছেন এমন খবর আশাজাগানিয়া। সহযোগী একটি দৈনিক এমনই একটি বিষয় নিয়ে ফিচার ছেপেছে ‘যশোরে ভিন্ন রকম পাঠচক্র’ শিরোনামে। বলা হয়েছে একটি ব্যতিক্রমী সংগঠনের কথা, যে সংগঠনটি বাংলা ও বিশ্বসাহিত্যের সেরা বইগুলো পড়া ও সেগুলোর ওপর আলোচনার আয়োজন করছে নিয়মিত। প্রতি সপ্তাহে একটি বই পড়ে সেই বইয়ের লেখক, বিষয়বস্তু, চরিত্র, দর্শন, চেতনা নিয়ে আলোচনা চক্রের সবাই আলোচনা করছেন। নির্ধারিত বইয়ের ওপর আলোচনা করার মতো আলোচক তারা খুঁজে নিচ্ছেন স্থানীয় বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মধ্য থেকে।
২০২১ সালের ১ অক্টোবর এই সংগঠনের পাঠচক্রের যাত্রা শুরু হয়। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাইকেল মধুসূদন কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাহজাহান কবীর। নিয়মিত বই পড়েন এমন সদস্য জনা বিশেক। প্রতি মাসের চার সপ্তাহে চার ধরনের ৮০টি বই কিনে সদস্যদের হাতে তুলে দেয়া হয়। সভাপতি ব্যক্তিগতভাবে সংগঠন পরিচালনার ব্যয়ভার বহন করেন। এটি এক উৎসাহজনক দৃষ্টান্ত।
সংগঠনের একটি ফেসবুক পেজও আছে ‘সপ্তাহে একটি বই পড়ি’ নামে। সেখানে প্রতি আসরের ছবি ও সাহিত্য আলোচনা পোস্ট করা হয়।
মূলত বই পড়ার কোনো বিকল্প এখনো উদ্ভাবন হয়নি। একান্তে একটি মুদ্রিত বই হাতে নিয়ে নিবিষ্ট মনে পাঠের যে উপযোগিতা সেটা কানে এয়ারফোন লাগিয়ে অডিও বুক শোনার মধ্যে পাওয়া সম্ভব কিনা সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। আমরা বলতে চাই, বইপাঠের আবেদন বা প্রয়োজন কোনোটাই ফুরিয়ে যায়নি, বরং দিন দিন তা বাড়ছে।
বই পড়ার উপকারিতা নিয়ে গুণীজনরা অনেক কথা বলে গেছেন। বলেছেন, বই জ্ঞানের ভাণ্ডার, এটি নতুন সব বিষয়ে আমাদের শেখার ও ভাবার সুযোগ দেয়। বিজ্ঞান জানাচ্ছে, বই আমাদের মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। শরীরের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বইপড়া। মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে। আমাদের বিশ্লেষণী শক্তি, চিন্তার ক্ষমতা, স্মরণশক্তি, কল্পনার পরিধি বাড়িয়ে দিতে পারে। শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে, লেখার দক্ষতা, মানুষের সাথে যোগাযোগের সক্ষমতার উন্নয়ন ঘটায় বই।
বই পৃথিবীর সবচেয়ে সহজপাচ্য এবং বিনোদনের অনিঃশেষ মাধ্যম। এক-দেড়শ’ থেকে পাঁচশ’ টাকার মধ্যে বই পাওয়া সম্ভব। আর বিশ্বে বইয়ের কোনো অভাব কখনো হবে না। বহু কাল ধরে বই লেখা হয়েছে, হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে। প্রয়োজন শুধু ভালো বই খুঁজে নেয়া।
আমাদের দেশে সুস্থ চিন্তা, যুক্তির প্রতিষ্ঠা এবং সৎমানুষ অর্থাৎ জনসম্পদ উন্নয়নের জন্য সবার আগে দরকার বই পড়ার আন্দোলন সর্বত্র পৌঁছে দেয়া। সরকারি উদ্যোগে এটি হওয়ার নয় তা প্রমাণিত। যারা ব্যক্তিপর্যায়ে এই আন্দোলন এগিয়ে নিচ্ছেন সরকার তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিতে পারে। তাহলে দেশজুড়ে বই পড়ার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়তে পারে অনায়াসে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা